Monday, April 30, 2012

হরিদাসের প্রেম

বৈশাখের এক তপ্ত বৈকাল। বন্ধুদের সহিত বৈকালিক আড্ডা সমাপ্ত করিবাপূর্বক নগরীর এক পাকা পথ ধরিয়া পদব্রজে বাটীতে ফিরিতেছিল হরিদাস। তখন দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থাও কিঞ্চিত তপ্ত। হরিদাস উচ্চ শিক্ষায় ব্যাপ্ত তাহার বাটীর সন্নিকটে অবস্থিত এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। হঠাৎ করিয়া তাহার মুঠোফোন বাজিয়া উঠিল। মুঠোফোনের পর্দায় নাম ছিল তাহার এক বন্ধু নৃপতির। নৃপতি হরিদাস এর সহিত একত্রে বিদ্যা সাধনা করিত। হরিদাস মুঠোফোনের সংযোগ করিবার বোতামে চাপ দিয়া তাহার সহিত বাক্যালাপ জুড়িল। মুঠোফোনের ওপাশ হইতে নৃপতির তীক্ষ্ণ সরু কণ্ঠ শুনতে পাইল হরিদাস।
‘কি হইয়াছে নৃপতি, এহেন মৃদু কণ্ঠে কথা বলিতেছ কেন ?কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে কি?’ ঈষৎ উদ্বিগ্ন হরিদাস শুধাইল নৃপতিকে।
ওপাশ হইতে নৃপতি কহিল, ‘ হরিহে তোমার হ্রিদয়হারিনী বসিয়া আছে বট তলায়। হাস্যালাপ করিতেছে তাহার অন্য সখিদের সাথে। যদি কাছাকাছি থাক তাহা হইলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দাও। আজ পিঙ্গল বর্ণের শাড়ীতে তাহাকে বড়ই মনোরম লাগিতেছে’।

নৃপতির বাক্য সমাপ্ত হইলনা। পথের দুপাশের জনমানবেরা লক্ষ্য করিল এক যুবক ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াইতেছে। তাহারা ভাবিল এ যুবক নিশ্চয় বিপক্ষ দলের ক্রোধাগ্নি হইতে নিজকে রক্ষা করিবার মানসে পলায়ন করিতেছে। তাহারা জানিতেও পারিলনা এহেন পাগলের ন্যায় দৌড়ের হেতু কি?...

অতি অল্প সময়েই বট বৃক্ষের তলায় পৌঁছল হরিদাস। আড়াল হইতে অঙ্গুলিনির্দেশ পূর্বক ইলোরা (হরিদাসের চোখে মৃন্ময়ী) কে দেখাইয়া দিল। হরিদাস ধীরে ধীরে কম্পিত পদযুগলে এগুতে লাগলো তাহার দিকে। এতদিন তাহার নেত্র যুগলে দৃষ্টি পড়িলেই শুধু পদকম্পন হইয়াছে হরিদাসের। আজ পিছনফিরে বসা তাহার স্বপ্ন বালিকা। তাহার পরও কোন হেতুতে পদকম্পন হইতেছে ভাবিতে ভাবিতে ইলোরার সামনে কিছুটা দূরে গিয়া দাঁড়াইল হরিদাস। ভাল মত দৃষ্টিগোচর করিয়া আঁতকাইয়া উঠিল হরিদাস। একবার নৃপতির দিকে তাকাইয়া একেবারে প্রপাতধরণীতল। নৃপতি বন্ধুর এহেন অবস্থা দেখিয়া তাহার নিকট চলিয়া আসিল মুহূর্তের মধ্যে। এরই মধ্যে সেই তরুণীরাও এগিয়ে আসিল সাহায্য করিবার মানসে। তরুণীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া নৃপতি বুঝিল তাহার বন্ধুর অচেতন হইবার কারন। এত দূর হইতে এহেন প্রবল করতাপ উপেক্ষা করিয়া যাহাকে  দেখিবার মানসে ছুটিয়া আসিয়াছিল হরিদাস, এই তরুণী তাহার সেই মৃন্ময়ী নহে!


আমার এক বন্ধুর সত্য ঘটনা এটা। লেখা কেমন হয়েছে জানিনা, তবে আমার সেই পাগলপারা বন্ধু যদি অনুমতি দেয় তবে ওর পাগলামি নিয়ে নিয়মিত লিখব, আমি যতটুকুর সাক্ষি। আমি নিজেও প্রেমে পরাজিত। এ নিয়ে আমার কষ্টবোধ নেই। তবু আমি চাইনা আমার বন্ধু এই দুঃখ পাক। সবাই তার জন্য দোয়া করি যেন কমপক্ষে বলার সাহসতুকু ওর হয়। বাকিটা ওর স্বপ্নবালিকাই করবে।

শামস রাসিদ
২৪/০৪/২০১২ খ্রিস্টাব্দ
১০ই বৈশাখ, ১৪১৯ বঙ্গাব্দ

No comments: