Sunday, May 31, 2020

বিষাদ


'আবেগের দুরন্ত ঘোড়ায় লাগাম পড়িয়ে 
বাস্তবতার মাঠে রেস খেলতে নামা জুয়াড়ি
আর, 
ক্লান্তির শেষে আবার ক্লান্ত হতে ঝাঁপিয়ে পড়া 
গাধাদের জন্য সমবেদনা। 
নরক বলতে কিছু নেই ভাবছ?
এদের হাসিমাখা মুখের পেছনে লুকিয়ে থাকা 
ভয়ংকর বিষাদময় মুখগুলো একবার আবিষ্কার করে দেখো। 
নরক দর্শন হয়ে যাবে!'

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে 
বয়েসের ভারে জীর্ন কুচকে যাওয়া তামাটে রঙের এক বৃদ্ধ;
মনোযোগ দিল আবার আকাশে। 

'ক্ষ্যাপা', মুখ ভেংচে বলল তরুনীটি,
'বিকেল বেলা আকাশের তারা গুনছে বুড়ো ভাম'।
বৃদ্ধ মুচকি হাসলো, ফিরলোনা এঁদের দিকে।

'একসময় আসবে
যখন তুমিও আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করবে, খুঁকি।
আবাদ্দনের। 
অনন্ত অপেক্ষা যদি তোমাতে অরুচি হয় তাঁর।
যেমনটা আমি করছি, এক অনন্ত কাল।'

অব্যক্ত শব্দগুলো দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে 
মিশে গেলো বাতাসে, সবার অগোচরে, 
অজান্তে। 

Saturday, May 30, 2020

যুদ্ধ


প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যেতে হয় 
বেঁচে থাকবার প্রয়োজনে। 
একের পর এক স্তর আসতে থাকে মৃত্যু অবধি।
প্রতিটা স্তরে নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দিতার আহ্‌বান,
কখনো দূরের শত্রু থেকে,
কখনো পাশের শত্রু থেকে,
কখনো আবার নিজের শত্রু নিজেই!

নিজেকে বদলে ফেলাটা সময়ের প্রয়োজন,
তাতে কৃত্রিম 'আমি'র খোলনলচে বদলে যায় বটে!
তবে, মূলটা অপরিবর্তনীয়- পরিমার্জন অযোগ্য। 

বস্তুত, বিষয়টা বিবর্তনবাদের একটা সীমিত উদাহরণ।
'আমি' বিবর্তিত হই প্রতিনিয়ত
মেরুদন্ডী বা অমেরুদন্ডী রুপে;
কখনো মুঠো শক্তভাবে ধরে রাখি
কখনো ডানা মুক্ত করে ছেড়ে দিই। 

বেঁচে থাকবার প্রয়োজনে,
টিকে থাকবার প্রয়োজনে,
বাঁচিয়ে রাখবার প্রয়োজনে। 

Wednesday, May 13, 2020

প্রণোদনা


২০ শকাব্দ, ত্রিবিক্রম অধিপতির মাসে হঠাৎ মড়ক আরম্ভ হইলো কুষান সাম্রাজ্যে। অজানা রোগে মানুষ পড়িয়া থাকিলো রাস্তার পার্শ্বে। আতংকে কেউ সৎকার করিবার জন্যে নিশ্চল দেহ ছুঁইয়াও দেখিলো না। রাজধানী বেক্ট্রিয়া অবরুদ্ধ করা হইলো, উত্তরের স্বর্গনগরী ফরগানাও করা হইলো বদ্ধ।

সাম্রা‌জ্যের পুর্ব সীমানা ঘেষা রাজ্য পাটলিপুত্রেও সংবাদ পৌছাইলো দিন দশেক পর। তুরফান হইতে আনা সবচাইতে তেজী ঘোড়ায় চড়িয়া বার্তাবাহক পবনেন্দ্র যখন পাটলিপুত্রে পৌছাইলেন দেখিলেন মড়ক এখানেও পৌছাইছে বটে তবে জনতার মাঝে তেমন হেলদোল নাই। তাহারা যার যার মত ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে। কেউ মরিলে তৎক্ষনাৎ ধরিয়া দাহ করিবার বা মাটিতে গাঁড়িবার লোক না পাওয়া গেলেও শোকে থাকা পরিবারের বাধ্যতামুলক গৃহভ্যন্তরে থাকিবার কালে জমির সীমানা-প্রস্তর নাড়াইবার লোকের অভাব হইতেছে না। বাজার সমূহে ভিড় লাগিয়াই আছে। সকলে দ্রব্যাদি কিনিতেছে মনের সুখে। বাড়িতে দ্রব্যাদি রাখিয়া আবার রাজ্যের লঙ্গরখানার দিকেও দৌড়াইতেছে যদি আরো কিছু খাবার পাওয়া যায় সেই আশায়।

বার্তাবাহক জানাইলেন রাজ্যের অধিপতিকে সম্রাটের প্রাসাদ হইতে বইয়া নিয়া আসা ফরমান আর একখানা তাম্রলিপি। নির্দেশ না থাকিলেও আসিবার পথে বার্তাবাহক একটু দেখিয়াছিলো কী লেখা আছে উহাতে। অন্তে লেখা ছিলো বার্তাবাহকের হস্তে যেন ফিরিবার পথে খরচের সুবিধার্থে এবং বিপদকালে দুঃসাহস দেখানোর পুরস্কার হিসাবে উপযুক্ত পরিমান মুদ্রা প্রদান করা হয়। রাজ্যাধিপতি ডাকিয়া রাজ্যকোষের কর্মচারীকে কহিলেন উহার ভাষ্যমতে ব্যবস্থা লইতে।

পরের দিন প্রত্যুষে রাজ্য হইতে রাজধানীর দিকে যাত্রারম্ভ করিবার সময় রাজ্যকোষের তত্ত্বাবধানকারীর এক কর্মচারি মুচকি হাসিতে হাসিতে কোন এক অজানা প্রাণির চর্মে নির্মিত দুইটা থলে লইয়া তাহার নিকট আসিলো। বার্তাবাহককে উদ্দেশ্য করিয়া বলিল, ‘রাজপুরুষের নির্দে‌শনায় আপনার ফিরতি পথের খরচাদি এবং আপনার সাহসিকতার সম্মানে রাজপুরুষ প্রদত্ত এই থলে দুইখানা লইতে আপনার আজ্ঞা হোক।’ বার্তাবাহকের চক্ষে থলের ব্যাপারে প্রশ্ন বুঝিয়া তিনি বলিলেন ‘এই থলে গুলোও আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। দেখিতে কিঞ্চিত অন্যরকম লাগিলেও ইহা প্রস্তুতকৃত হইয়াছে অত্যন্ত পবিত্র বস্তু দ্বারা’। পবনেন্দ্র থলে দুইখানা লইয়া পরিমাপ করিয়া বুঝিলেন তাহা যথেষ্ট ওজনদার। হৃষ্টচিত্তে পবনেন্দ্র প্রাসাদ এবং রাজ্য ত্যাগ করিয়া চলিল রাজধানীর পথে।

পুরো পথে থলে দুইখানা লইয়া সে এতটাই সতর্ক রহিল যে বিনা প্রয়োজনে সে একমুহুর্ত কোথাও ব্যয় করিলো না। দশদিনের পথ ছয়দিনে পার করিয়া সে পৌছাইলো রাজধানীতে। সম্রাটের নিকট সবিস্তার বর্ণনা করিয়া সম্রাটের নিকট বাড়ি যাইবার আর্জি জানাইলো। তাহার হৃদয়ে একমাত্র চিন্তা থলে দু'খানায় কী পরিমান সম্মানী আছে তাহা প্রত্যক্ষ করা। সম্রাট ও ভাবিলেন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়া শ্রান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। সেহেতু, পবনেন্দ্রকে কিছু উপহার দিয়া নিষ্ক্রান্ত হইবার অনুমতি প্রদান করিলেন।

পবনেন্দ্র দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়া সকলের সহিত সংক্ষেপে বাক্যালাপ সারিয়া নিজ কক্ষে ঢুকিলেন। এ বিশাল যাত্রায় প্রাপ্ত সকল বস্তুর মধ্যে হইতে বের করিলেন থলে দুখানা। থলের মুখ খুলিবা মাত্র এক আর্তচিৎকারে তিনি জ্ঞান হারাইলেন।

চক্ষু খুলিয়া বার্তাবাহক দেখিলেন তাহাকে বাড়ির উঠোনে খাঁটিয়া পাতিয়া বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ঘরণি খেয়াল রাখিতেছিলেন তাহার দিকে। জ্ঞান ফিরিবার চিহ্ন পাওয়া মাত্র উষ্ট্রের দুগ্ধ আনিয়া বসিলেন তাহার পার্শ্বে। অত্যন্ত নম্রভাবে শুধাইলেন, ‘পতি পরমেশ্বর, ঐ দুইখানা লোম্রযুক্ত-কৃষ্ণকায় থলের মধ্যের ফুঁটো কড়ির কী এমন বিশেষত্ব যে এতটা বয়ে নিয়ে আসিয়াছেন?’ বার্তাবাহকের কর্ণকুহরে প্রশ্ন পৌছুলো বটে তবে তাহার চেতনা দখল করিয়া রইয়াছে সেই কর্মচারী। তাহার এতটাই কূটবুদ্ধি যে এক রৌপ্যমূদ্রার সমমূল্যের দুই থলে প্রাদেশিক ফুঁটোকড়ি সে দিয়া দিয়াছে কারন তাম্রলিপিতে কী মুদ্রায় সম্মানী দিতে হইবে তাহা উল্লেখ নাই। আর দামী থলে! বরাহপুত্রের নিকট বরাহের চামড়া তো মূল্যবান হইবেই এবং পবিত্রও বটে!

Thursday, May 7, 2020

নীড়


সন্ধ্যার ঝড়ে আটকে পড়া পরিযায়ী সব
ফিরতে চায় আপন নীড়ে।
পথে এলোমেলো বাতাসে হারিয়ে যায় দিকের দিশা,
পশ্চিমে ডুবতে থাকা সুর্যের রশ্মিও লুকায় মুখ
মেঘের আড়ালে। 
তীব্র বাতাসে ভেসে বেড়ায় ধুলার সাম্রাজ্য, 
আলোড়ন তোলে মধ্য আকাশে।

রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা পঙ্গু মানবটি 
অশ্রাব্য গালি দিয়ে খুঁজে ফেরে নিরাপদ আশ্রয়।
কোটি টাকার দালানের নীচে একই সাথে আশ্রয় নেয়
ক্ষুধার্ত সারমেয় আর স্বর্গের দাবীদার।

লাঠি হাতে ঘৃনাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে উর্দিপড়া দাসেরা আর
বারান্দায় কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে কষ্ট আর বৃষ্টির রোমান্টিসিজম 
তারিয়ে উপভোগ করে দুঃখবিলাসী তরুনী। 
নরকের জ্বালানীরা উষ্ণতা খোঁজে সবচেয়ে নিকটবর্তী রমনী 
বা গেলমানের শরীরে। 
ভল্টের মালিকেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে খোঁজে
নতুন উছিলা, হাত পাততে হবে যে আবার! 

তীব্র বাতাসে পথ হারানো পরিযায়ী অপেক্ষা করে
ঝড় শেষের, আবার খুঁজে পেতে পথ। 
দিনশেষে সব মূল্যহীন 
নীড়ে না ফিরলে। 

Friday, May 1, 2020

প্রেম



পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রতীক্ষার পরে দেখেছি তোমায়,
মহাজাগতিক দীর্ঘতম অপেক্ষার পরে হয়ত বলতে পারবো...

'ভালবাসি'

পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রতীক্ষার পরে দেখেছি তোমায়,
মহাজাগতিক দীর্ঘতম অপেক্ষার পরে হয়ত বলতে পারবো...

'ভালবাসি'

তার আগে স্তব্ধতার দেয়াল ভাঙতে
চলবে লড়াই অবিরাম-
বাতাস থেকে শুষে নেবো দুরন্ত সাহস আর
সময় শেষে উল্টে দেব বালুঘড়ি। 

সব শেষে, 
গোলাপের তোড়া নিয়ে তোমার সামনে বসে, 
বলবো...

'ভালবাসি’