Monday, December 17, 2018

সাহস

সাহসের সর্বোচ্চ স্তর গবেষনা করতে গিয়ে
তিনি অনেক খুঁজলেন।
ঘুরে বেড়ালেন পৃথিবীর সমস্ত স্থলপথ,
গেলেন অতলান্তিক এর গভীরে।
সুন্দরবন-কালাহারি-আমাজন চষে
ইউরোপের সমুদ্রঘেষা তীরে বসে
মধ্য এশিয়ার দিকে তাকিয়ে ভেবে ভেবে পেলেননা কিছুই।

বিষন্ন মনে ব্যার্থতার গ্লানি মুছতে তিনি
আত্নহনন করতে গেলেন এক ঘরে একাকী।
ঘন্টাখানেক পরে দেখা গেল তিনি গবেষনাগারে।

গবেষনা পত্রে তিনি লিখেছেন,
আত্মহননের শেষ সজ্ঞান মুহুর্তই সাহসের সর্বোচ্চ স্তর৷

কাগজে বেরোল এ খবর,
পড়ে গেল চারিদিকে ধন্যি ধন্যি রব। 
ঢাকার এক ছোট্ট গলির এক পাগল শুনল সব,
মুচকি হেসে বলল,
এ তো জানা কথা।
সে স্তর ছোঁয়া কঠিন বলেই তো বেঁচে আছে মানুষ পূর্বাপর।

আনন্দম্‌

শীতের রাতে একটু উষ্ণতার খোঁজে পিচঢালা পথে
ছুটে চলা সারমেয়র কাছে
একচিলতে সিগারেটের আগুনও অনেক মূল্যবান।
হয়ত তাতে তাপমাত্রায় কোন পরিবর্তন আসেনা।
কিন্তু, চোখের শান্তিটাও অনেক সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন, সারমেয়র কষ্ট দেখে
এসিডের দোকান থেকে এক বোতল
চুরি করে নিয়ে আসা এসিড ঢেলে
সারমেয়র আনন্দে চিৎকার করা দেখে চোখের শান্তি পায় ক্লান্ত কাঁক।

নিবর্ত

রাত তিনটে 

চারিদিকে নিশ্চুপ। কোলাহলহীন। দূরের রাস্তা থেকে ভারী ট্রাক চলার গমগম আওয়াজ আসছে মাঝে মাঝে। এ শব্দ ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য যথেষ্ট না। তবু ঘুম ভাংলো। আর ঘুম আসবেনা ভেবে চোখে পানি দিতে গেলাম ওয়াশরুমে। মেরুদন্ড বেয়ে মাঝে মাঝেই এক চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে। আমি কী ভয় পাচ্ছি? কে জানে? অন্তত আমি তো জানিনা বা বুঝিনা।

ও মাঝে মাঝেই বলত আমি নাকি ইচ্ছে করেই বুঝতে চাইনা কোন কিছু? আমি ওকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আমি আসলেই বুঝিনা। সে অবশ্য এখন বোঝাবুঝির উর্ধ্বে। অনেক আগেই সে অধ্যায় গত হয়েছে আমার। প্রায় ১৭ বছর তো হবেই। দায়িত্ব আর জন্মদায়ের হিসেব মেলানোর বোঁঝা কাঁধে তুলে নিয়ে কবে যে নিজের অদেখা মৃত্যু ঘটেছে তার হিসেব রাখিনি। আজ মধ্য চল্লিশে এসে একাই আছি বেশ। কীটস্য এক জীবন পার করে শেষের দিন গুনছি। এ বয়েসটা অবশ্য সাধারনের হিসেবে অনেক কম। কিন্তু, আমার কাছে মনে হয় অনেক বেশিই টেনে ফেলেছি জীবন নামের এ বোঁঝা। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে থাকতে থাকতে অবশেষে গত মাসে ডক্টর সুসংবাদটা দিলেন। আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। অবশেষে, অনেক দিন পর একটা সুসংবাদটা পেলাম। এ নচ্ছার জীবনটা অবশেষে একটা শেষ এ উপনীত হচ্ছে। 

পানিটা আজ একটু বেশিই ঠান্ডা। চামড়ায় পড়া মাত্র যেন জ্বলে জ্বলে উঠছে। গামছা ছাড়াই ভেতরে ঢুকে গেছি। গামছা নিতে বেরিয়ে ঘরে ঢুকেই একটা ধাক্কা খেলাম। চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে দেয়ালের দিকে মুখ করে। মেরুদন্ডের চোরাস্রোত এখন সুনামিতে পরিনত হয়েছে। মাথা আমার এমনিতেই ঘামে তবে বুঝতে পারছি তিন সেকন্ডের মাথায় এক ফোঁটা ঘাম টুপ করে মাটিতে পড়ল। গলা যদিও আটকে গেছে তবুও যথাসম্ভব সাহস সঞ্চয়ের চেষ্টা করে জিজ্ঞাসা করলাম,

- কে? কে ওখানে? 

কোন হেলদোল দেখলাম না। বিছানার পাশে একটা লাঠি রাখি চোরকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য। সেটা দেখে সাহস কিছুটা বাড়লো। হাতে নিয়ে আরেকটু সাহসের সাথে একটু জোর গলাতেই জিজ্ঞাসা করলাম,

- আমার ঘরে কী করছিস রে? 

উত্তেজনায় মাথায়ই ছিলোনা যে ঘরে বাতি নামক একটা বস্তু আছে যা জ্বাললে আলো হয়। মনে পড়তে স্যুইচ দিতে যাব এমন সময় মূর্তিটি একটু নড়াচড়া করে উঠল। গমগমে গলায় বলল,

- ওটা জ্বালাইস না ইয়ার। আবছা আলোতেই তো ভালো।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ফিরতেই আবছা আলোতে যা দেখলাম তাতে শরীরের রক্তসঞ্চালন ৩ গুন বেড়ে গেল। আমার মতই একজন দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। 

- ক্কক্ককে আপনি?; ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।

- আমি তুইই, শালা। এত ঘাবড়াসনা। আঠেরো বছর আগে তোর ভেতরেই নিজেকে বন্দী করেছিলাম সময়ের প্রয়োজনে। এতকাল পেরিয়ে গেল আমায় ফেরালিনা তাই আজ নিজ থেকেই ফিরলাম। হিসেব মেলাতে।

- মানে?

- মানে বুঝলিনা রে বোকা...দা। আমি তো তোরই অংশ। আর কিছুকাল পরেই তো এ দেহের ভ্যালিডিটি খতম। স্লার, যা বানিয়েছিস ভেতরটাকে। যেন জলজ্যান্ত কয়লাখনি! তাই ভাবলাম এ চতিয়া কাহিনী শেষ হবার আগে একবার বসে পুরো জীবনটাকে একটা রিভাইস দিই।

আমি বুঝতে পারছিনা আমি এখন হ্যালুসিনেশনের কোন পর্যায়ে আছি। একবারে শুরুতেই লাস্ট স্টেজে পৌছে গেলাম কী? অবশ্য এ আমার জীবনে নতুন কিছু নয়। সুখের যা কিছু তা অল্প অল্প করে জোগাড় করতে হলেও দুর্ভাগ্যের বিষয়গুলো একেবারে আল্টিমেট হয়েই সামনে এসেছে। তবে এই মুহুর্তে, আমার মত দেখতে এক লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই অংশ বলে দাবী করে আমার জীবন নিয়ে আমারই সাথে আলোচনা করতে চায় ব্যাপারটা একই সাথে হাস্যকর এবং ভীতিজাগানিয়া। 

- হাস্যকর সেটা ঠিক আছে তবে ভীতিটিতি বাদ দে না ভাই। আমি তো বললামই তুইই আমি, আমিই তুই। তোর কপাল ভাল নিজের দ্বিতীয় সত্ত্বাটাকে সামনাসামনি দেখতে পারছিস। আয় বাড়তি কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসি। 

বুঝতে পারলাম এ আর এড়ানোর মত নয়। অতএব, একটা পথই বাকি। তাকে বসার জন্য চেয়ার দেখিয়ে বললাম,

- তবে তাই হোক।

Sunday, December 9, 2018

এপাকিলিপ্টো

কুয়াশায় ঢেকে থাকা পৃথিবীর মাঝে বিষন্ন এক ঝিঁঝিঁপোকা
একাকীত্বের আঁধারে ঢেকে থাকা এক চাঁদ
আর,
সমুদ্রের নোনা জলে কাটছে সাঁতার এক মৃতপ্রায় ডলফিন।

ইট কাঠের শহরে জেগে আছে আলোর আশায় অজস্র মৃত মানুষ।

এযেকিয়েল কী এ সময়টাই দেখেছিলেন হাজার বছর আগে!

Saturday, November 17, 2018

ত্যাগ

'সেদিন দুপুরটা একটু বেশিই তপ্ত ছিল জানিস?'

নিজেই চা এগিয়ে দিয়ে বললেন রনি ভাই। অবশ্য নিজেই দেয়া ছাড়া উপায় নেই। অকৃতদার মানুষ। দুর্দান্ত একটা ক্যারিয়ার হঠাত শেষ করে এই মাঝ বয়েসে একাই চালিয়ে নিচ্ছেন সবকিছু। তার সাথে পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে তার হাতেই পড়েছিলাম আমি। সবার কাছে গম্ভীর হলেও কোন এক অজানা কারনে তিনি আমায় আপন করে নিয়েছিলেন এবং আমিও তার ন্যাওটা হয়ে গিয়েছি। ট্রান্সফার আমাদের জীবনের এক অমোঘ সত্য। তাই, প্রথম তিন বছরের পরে একসাথে কাজ করা হয়নি আর তবুও সময় সুযোগ পেলে ভাইয়ের কাছেই বেড়াতে এসেছি আগে।

ট্রান্সফারের কারনে আমার বর্তমান পোস্টিং খুলনায়। ছুটিছাটার অভাবে এবার রনি ভাইয়ের বাসায় এসেছি বহুদিন পরে। একই ব্রাঞ্চে থাকাকালীন সময়ে জানতাম তিনি অকৃতদার। বেশ কয়েকবার ঠারেঠোরে মেয়ে দেখার কথা বলেছিলামও কয়েকবার। তার নিষেধাজ্ঞায় আর এগোনো হয়নি। সত্য বলতে আর যত ব্যাপারেই তার সম্মতি চাইতাম নিষেধাজ্ঞা আসতোনা কিন্তু এই একটা ব্যাপারে তাকে রাজি করাতে পারিনি কখনো। কয়েকবার কারন জানতে চাইলেও নিশ্চুপ থেকেছেন তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে জানতে পেরেছি তার ছাত্রজীবনের প্রেমের কথা। তাকে আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি আর এ ব্যাপারে। এবারে উনার কাছে আসবার আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম এবার জিজ্ঞাসা করবই, শুনবই সেই প্রেমের কথা।

এসেছি দু'দিন হল। কালই চলে যাব। ভাইয়ের ফ্লাটের বারান্দায় বসে কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম কোন ভনিতা ছাড়াই,

'ভাই, যার কারনে আজ অব্দি বিয়ে থা করলেন না তার কথা আইজকা কইবেন? ছোট ভাইয়ের আবদার। কোন দিন কিন্তু এমনে জিগাইনাই। প্লিজ লাগে না কইরেন না।'

রনি ভাই কিছুক্ষন চুপ করে যেন সিদ্ধান্ত নিলেন।

- শোনাই লাগব। এত পুরান কথা।

- ভাই, আমার তো বড় ভাই নাই। আপনিই আমার বড় ভাই। এতবার কইলাম বিয়াডা কইরা ফ্যালতে। করলেন না। এখন একা একা এই শহরে দিন কাটাইতেছেন। কম মাইয়া তো আর আপনের উপরে ফিদা আছিলো না। সবকয়ডারে রিজেক্ট কইরা দিলেন।

- তুই করস না ক্যান বিয়া?

- ভাই, আমার কী বয়স গ্যাছেগা। সেইদিন উনত্রিশ পার হইল।

- তাইলে কী আমার গ্যাছেগা বয়স। তোর থিকা মাত্র এগার বছরের বড় আমি ব্যাটা।

- বুঝছি ভাই। আপনে এখনো জোয়ান আছেন তো কইরালান। খুঁজমু?

- না রেহ। এতকাল যখন করিনাই। আর করুম না। চাকরি বাকরি আর ভাল্লাগেনা। তাই ছাইড়া দিয়া বইসা আছি। যখন মন চায় ফ্লাটে তালা লাগায়া ব্যাকপ্যাকটা কান্ধে নিয়া বাইরাইয়া পড়ি। ভালই তো আছি।

- তো কার লেইগ্যা না। তার কথা একটু কন শুনি।

- শোনাই লাগবে?

- ভাই কন না। আমি তো আর কইয়া বেড়াইতেছিনা।

- তাইলে চা খাইতে খাইতে কই। ম্যালা বড় কাহিনী। কমু যখন সবই কমু। তোর কাল গাড়ি কয়টায়? তবে আমিও জানি তোরও কাহিনী আছে একটা সেইটাও কিন্তু আইজ খোলাসা করতে হইব।

- ভাই দশটায় গাড়ি। আমারডা আপনে জানলেন কেমনে?

- তুই ছোটে না আমার? কসনাই এইডা ঠিক কিন্তু বুঝি যে নাই কিয়ের লাইগা প্লেবয় হইছিলি এইডা তো ঠিক না। যাক, না ঘুমায়া জার্নি করতে পারবি তো?

- ক্যান জানেন না মনে হয় পারুম কী না?

- পারবি তাইলে। যাই চা নিয়া আসি। তুই বয়।


চা নিয়ে এসে তিনি শুরু করলেন তার কাহিনী। পরের সময়টুকুতে আমরা হারিয়ে গেলাম নব্বই দশকের মাঝামাঝি আর এই শতকের শুরুর দিকের মিরপুরের অলিগলিতে। যে জায়গাগুলোয় একটা ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী রচনা হয়েছিল।

Thursday, November 8, 2018

তুমি

কুয়াশা বিদীর্ণ করা আলোর উৎস তুমি-
তুমি জমে যাওয়া এক হৃদয়ের উষ্ণতা।
থেমে যাওয়া এক যন্ত্রমানবের শক্তি তুমি-
তুমি অঝোর ধারায় বয়ে চলা কবিতা।

তুমি গস্পেলের শব্দের ন্যায় পবিত্র
তুমি গীতার শ্লোকের মত ছন্দময়
তুমি জেন্দাবেস্তার মত জীবন্ত বাক্য
তুমি দেবী ভেনাসের মত হিরন্ময়।

তুমি, তোমার তুলনা শুধু তুমিই-
তুমি জলতরঙ্গ হাস্যরতা এক অপার্থিব সুখবারতা,
তুমি সৃষ্টি, তুমি আরম্ভ, তুমি পরিপূর্ণ শুভময়। 

Friday, November 2, 2018

প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন ও পৌন্ড্রক বাসুদেব

পৃথিবীতে বাঙালি ছাড়া আর কোন জাতি আছে কী না যাদের কোন প্রাচীন ইতিহাস নেই, তা সম্পর্কে আমি সন্দিহান। হাজার বছরের সংস্কৃতি হিসেবে যে মহাপদযাত্রাকে ইউনেস্কো দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তারও আরম্ভ এই গত শতাব্দীর শেষভাগে কিছু ধুরন্ধর বেনিয়ার মাথা থেকেন উদ্ভুত। যদিও বঙ্গাব্দের শুরুটা ৫৯৪ সালে রাজা শশাঙ্কের আমলে (আনুমানিক এবং অস্পষ্ট তথ্যসূত্র)***


মহাভারত এ উল্লেখ আছে বঙ্গ, কলিঙ্গ, সমতট, পুন্ড্রবর্ধনের কথা। যারা দুর্যোধনের সাথে সঙ্গী হয়ে সে মহাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল কৌরবদের পক্ষে। সে যুদ্ধে কৌরবেরা পরাজিত হয় এবং শাসনভার চলে যায় ধুরন্ধর আর্যদের কাছে। ইতিহাস সবসময় বিজয়ীদের দ্বারাই লেখা হয় এবং পরাজিতের ইতিহাস চলে যায় কালের অতল গহ্বরে। তেমনি হয়ত এ অঞ্চলের অর্থাৎ বঙ্গভুমির সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের ইতিহাস হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। এরপরের ইতিহাস তো পরাজয়ের আর রক্তক্ষয়ের। কখনো আর্য, কখনো তুর্কী, আফগানি বা মধ্যপ্রাচ্যের ভিখিরিরা এ অঞ্চল শাসন করেছে গলায় তরবারি ধরে বা নতুন কোন ধর্মের আমদানি করবার মাধ্যমে। আলীবর্দী-সিরাজোদ্দৌলারাও বাঙালি ছিলেন না। এরপরে ব্রিটিশদের দুইশত বছর আর পাকিস্তানিদের চব্বিশ বছর গোলামী করে ১৯৭১ সালে স্বাধীন এবং নিজেদের একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাঙ্গালীদের জন্যে। মহাভারতের যুদ্ধ খৃষ্টপূর্ব ৩১০২ (আর্যভট্টের হিসেব অনুযায়ী) সালে সংঘটিত হয়। যার অর্থ প্রায় ৫০৭৩ বছর পরে এ অঞ্চলের বাঙ্গালীরা একটা রাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে যা ৪৭ বছর ধরে টিকে আছে। এর মাঝে শশাঙ্ক এবং তার পুত্র মানব ২৬ বছরের এক স্বাধীন রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ছিলেন যা পদ্মার মাঝে একফোঁটা জলের মতই লাগে। 

মহাস্থানগড়, বগুড়া শহর থেকে ১১.৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ সমৃদ্ধ এলাকা। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল এ শহর। যদিও এখনঅব্দি ধ্বংসাবশেষ থেকে খৃষ্টপূর্ব তিনশ অব্দের (কার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত) পর্যন্ত কিছু জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে, এর ইতিহাস আরো প্রাচীন। এ অঞ্চলে মহাভারতের যুদ্ধের সময়য় পৌন্ড্রক বসুদেব নামে একজন রাজার নাম আমরা জানতে পারি মহাভারত এবং অন্যান্য পুরাণ থেকে যিনি মগধ রাজ্যের অধিপতি জরাসন্ধের একজন মিত্র ছিলেন এবং মহাভারতের যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষে পান্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। 

পৌন্ড্রক বসুদেবের সাথে যাদব বাসুদেবের ছিল শত্রুতা যা পুরানে উল্লেখ আছে। মগধরাজ জরাসন্ধ এবং পৌন্ড্রক বসুদেব মিলিতভাবে একের পর এক আঠারোবার মথুরা আক্রমণ করে কৃষ্ণকে একবারে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। এমনকি শ্রীকৃষ্ণ পৌন্ড্রক বাসুদেব এবং জরাসন্ধের এরকম নিত্য নৈমিত্তিক আক্রমণ থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য সকল যাদবদের নিয়ে পশ্চিম সাগর তীরবর্তী দ্বারকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ইতিহাস শ্রীকৃষ্ণকে দিয়েছে দেব এর সম্মান। দেব শব্দটির উৎস যদি দেখা হয় তা প্রাচীন ইরানীয় বা আর্য দেওএর থেকে উদ্ভুত যার সাধারনীকৃত অর্থ শয়তান। সত্যই কুটিল এ মানব তার জীবদ্দশায় প্রাচীন ভারতের নকশা যেভাবে পরিবর্তন করেছেন তাতে অন্তত আমার কাছে তিনি দেও-ই। পৌন্ড্রক বসুদেব এর পুন্ড্রবর্ধন তখন ছিল সামরিক পরাশক্তি। ইতিহাস আমাদের জানায়, হাতিকে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করতে জানত এই বঙ্গ অঞ্চলের মানুষ অতি প্রাচীনকাল থেকেই। সামরিক শক্তি আর দেশপ্রেমে অভাব না থাকা সত্ত্বেও কেন ৫১২০ বছর আগে উত্তর ভারতের মহাভারতের যুদ্ধে পরাক্রমশালী এক সামরিক জোট এর পরাজয় ঘটল সামান্য কিছু বহিরাগত আর্যের কাছে তা এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নই অনুসন্ধিৎসু মনের কাছে। 
উত্তরটা হয়ত চোখের সামনেই,

বিশ্বাসঘাতকতা

কে না জানে এ ভূমির মানুষের দুর্বল নৈতিক চরিত্রের কথা। কিন্তু, এ মহাবিপর্যয়ের কারন হিসেবে জানা প্রয়োজন কে এবং কেন? হয়ত উত্তরগুলো উত্তরবঙ্গের মহাস্থানগড় বা কোন প্রাচীন শহরের মাটির নীচে অনাবিষ্কৃত হয়ে আছে। যেগুলো আবিষ্কার হলে কৃষ্ণের ভগবানত্বে একটু হলেও দ্বিধা আনবে। হয়ত বাঙালিদের দেবতা হিসেবে নতুন সংযোজন হিসেবে দেবতাদের বিশাল তালিকায় আবির্ভুত হবেন পৌণ্ড্রক বসুদেব। আর্যরা হয়ত বুদ্ধ আর শিবের মতো পৌণ্ড্রক বসুদেবকেও আর্যদেবতা বানিয়ে ফেলবে।

এটাও আরেকটা বড় প্রশ্ন আর্যাবর্তের ঘুর্ণিপাকে স্বাধীনতা হারানো অন্যের গোলামীর শীর্ষতালিকায় অবস্থান গড়া এক জাতি আদৌ এতে উৎসাহী হবে কীনা!






*** সম্রাট আকবরের সময়কালের অনেক আগের তৈরি করা দুই শিব মন্দিরে বঙ্গাব্দ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।

Monday, October 8, 2018

বাস্তবতা

প্রতিনিয়ত স্বপ্নমেঘের মাঝে বিচরণ করা মানুষটি
যখন বাস্তবতার জমিনে পতিত হয়,
তখন,
একমাত্র সেই ব্যাক্তি
আর ঈশ্বর জানেন এই অনুভূতি প্রকাশ
কোন ছাপার অক্ষরে বা সেলুলয়েডের পর্দায় সম্ভব নয়।
চেষ্টা যে করেনি লোকে তা নয়-
করেছে বহুবার- বহু উপায়ে।
সাময়িক অনুভব হয়ত তা দিতে পেরেছে;
তবে সত্য অভিজ্ঞতাটা নয়।
তীব্র কষ্ট আর দম আটকানো এই অভিজ্ঞতাটা কুরে কুরে খায়-
নিয়মিত,
প্রতিনিয়ত,
শেষের আগমুহূর্ত অব্দি।
বিশ্বাস না হয়, কোন আত্মহত্যাকারী ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন!
৮.১০.২০১৮
মিরপুর, ঢাকা

Sunday, September 2, 2018

অভিশাপ

'অভিশাপের সংজ্ঞা জান?'
বৃষ্টিস্নাত এক বিকেলে জিজ্ঞাসা করেছিলে তুমি,
চোখে চোখ রেখে, ঘৃনায় পূর্ণ এক কন্ঠে।

আমি হেসেছিলাম সেদিন,
বলেছিলাম 'তুমিই আমার জীবনে অভিশাপ'।
তোমার চোখের জল ভীষন ভাল লাগছিল আমার।
ঘৃনা আর কষ্টের মিলনে যে অশ্রুবিন্দুর সৃষ্টি হয়
তা প্রথম দেখেছিলাম সেদিন, হেসেছিলাম দেখে।

তারপরে কেটে গেছে বহুদিন।
পদ্মায় বয়ে গেছে অসংখ্য স্রোত,
আকাশের মেঘগুলো ঝড়িয়েছে অনেক বৃষ্টি।
আজও সেই কান্না দেখি, আমার স্বপ্নে,
বিশ্বাস কর এখন আর হাসতে পারিনা,
আমি জেনে গেছি অভিশাপের সংজ্ঞা।

Thursday, July 26, 2018

কুসংস্কার

সেই সকালটা বৃষ্টিস্নাত ছিল। কফির কড়া গন্ধে ঘুম ভাঙি ভাঙি করেও ভাংছিলনা। তবে, বাম চোখটা লাফাচ্ছিল সাথে ডান কাঁধটাও। প্রাচীন সংস্কৃত শ্রুতিগুলো এ বিষয়ে যা বলে তা আজকের মানুষ অবশ্যই কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেবে, আমিও দিয়েছিলাম।

মধ্যযুগে দলে দলে আরব ভিখিরিগুলো এদেশে ঢুকেছিল খাবার আর নিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় সাথে করে নিয়ে এসেছিল জাজিরাতুল আরবের সাম্যবাদের ধর্ম ইসলাম। এ ভূমির শুদ্র জনগোষ্ঠি আপন করে নিল এ ধর্ম সমাজে নিজেদের উপরে ঘটে চলা অনাচারের শেষ করতে। ধীরে ধীরে ইসলাম এ জনপথে প্রধান ধর্ম হয়ে উঠল, সাথে সাথে শ্রুতিগুলো হয়ে উঠল কুসংস্কার আর বিজ্ঞানের উত্থানে এসব তো এখন রীতিমত হাস্যকর ব্যাপার। 

তবে সেদিন যদি বাম চোখের লাফানোর ব্যাপারটা মাথায় রেখে ১০ মিনিট পরে বের হতাম তবে হয়ত তার সাথে দেখা হতনা। ডান কাঁধ লাফানোর যে অর্থ তাও পুর্ণ হতোনা। 

আমি হয়ত তার প্রেমে পড়তাম না, হয়তো সবকিছু এখনকার মত হতনা।

*
সেই সকালে ঘুম থেকে উঠবার পর একটা বিষয়ই মাথায় ছিল তা হল ১১ টা ৩০ এ মিটিং। সেটাও এ দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান আবুল হাশেম গ্রুপের সাথে।

Friday, March 2, 2018

দীর্ঘদিন পরে

দীর্ঘদিন পরে সেই দুটো চোখের মুখোমুখি হয়ে
দীর্ঘশ্বাসের সাথে শুধু একটা শব্দই বেরিয়ে আসে কন্ঠস্বর থেকে,

ভালবাসতাম, এখনও বাসি, হয়ত বেসেই যাব।

মিষ্টি হাসিতে সে ভুবন ভোলানোর বিদ্যেটা
এখনও কাজে লাগাও দেখছি!
তবে, হাসির আড়ালে কষ্ট চেপে রাখার বিদ্যেটা আয়ত্ত্ব হয়নি।

এখনও সেই চোখের মায়ায় হৃদয় কাড়ো।
এখনও সেই আগের মত দুষ্টু কথায় মিষ্টি রাগ ঝাড়ো।

এখনও সেই আগের মতই আছ,
বদলে গেছি আমি, বদলে গেছে সময়, বদলে গেছে সব।
বদলায়নি শুধু 'ভালবাসা'।

ভালবাসতাম, এখনও বাসি, হয়ত বেসেই যাব।

অনুভূতি

সবাই ভাল আছে দেখলে আনন্দ হয়,
মন থেকেই।
তবে, মনের কোন এক কোনায় যে ঈর্ষা জাগেনা তা কিন্তু নয়।
ঈর্ষা জাগে, ক্রোধও।
একটা সময় সব অনুভূতি মিইয়ে যায়।
পৃথিবীতে কুকুর-কপালে কিছু মানুষের অত্যাবশ্যকীয় দরকার ছিল
সামঞ্জস্যতা বজায়ের জন্য, অন্তত তা হওয়া গেছে।
তখন কুকুর-কুণ্ডলী দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
যদিও ঘুমুতে খুব কষ্ট হয়!

Saturday, February 10, 2018

সর্বহারা

সর্বহারার আর হারানোর কী ভয়
যা পায় নগদ তাতেই বিশ্বজয়!
দু'পা করে সঙ্গী চলে পথের পরে পথ
জীবনভর টেনে যায় ক্লান্তির রথ।

হারাতে হারাতে তার নাই বাকি আর
এপারেতে ডাহা ফেল অপেক্ষায় ওপার।