Saturday, November 17, 2018

ত্যাগ

'সেদিন দুপুরটা একটু বেশিই তপ্ত ছিল জানিস?'

নিজেই চা এগিয়ে দিয়ে বললেন রনি ভাই। অবশ্য নিজেই দেয়া ছাড়া উপায় নেই। অকৃতদার মানুষ। দুর্দান্ত একটা ক্যারিয়ার হঠাত শেষ করে এই মাঝ বয়েসে একাই চালিয়ে নিচ্ছেন সবকিছু। তার সাথে পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে তার হাতেই পড়েছিলাম আমি। সবার কাছে গম্ভীর হলেও কোন এক অজানা কারনে তিনি আমায় আপন করে নিয়েছিলেন এবং আমিও তার ন্যাওটা হয়ে গিয়েছি। ট্রান্সফার আমাদের জীবনের এক অমোঘ সত্য। তাই, প্রথম তিন বছরের পরে একসাথে কাজ করা হয়নি আর তবুও সময় সুযোগ পেলে ভাইয়ের কাছেই বেড়াতে এসেছি আগে।

ট্রান্সফারের কারনে আমার বর্তমান পোস্টিং খুলনায়। ছুটিছাটার অভাবে এবার রনি ভাইয়ের বাসায় এসেছি বহুদিন পরে। একই ব্রাঞ্চে থাকাকালীন সময়ে জানতাম তিনি অকৃতদার। বেশ কয়েকবার ঠারেঠোরে মেয়ে দেখার কথা বলেছিলামও কয়েকবার। তার নিষেধাজ্ঞায় আর এগোনো হয়নি। সত্য বলতে আর যত ব্যাপারেই তার সম্মতি চাইতাম নিষেধাজ্ঞা আসতোনা কিন্তু এই একটা ব্যাপারে তাকে রাজি করাতে পারিনি কখনো। কয়েকবার কারন জানতে চাইলেও নিশ্চুপ থেকেছেন তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে জানতে পেরেছি তার ছাত্রজীবনের প্রেমের কথা। তাকে আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি আর এ ব্যাপারে। এবারে উনার কাছে আসবার আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম এবার জিজ্ঞাসা করবই, শুনবই সেই প্রেমের কথা।

এসেছি দু'দিন হল। কালই চলে যাব। ভাইয়ের ফ্লাটের বারান্দায় বসে কথার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম কোন ভনিতা ছাড়াই,

'ভাই, যার কারনে আজ অব্দি বিয়ে থা করলেন না তার কথা আইজকা কইবেন? ছোট ভাইয়ের আবদার। কোন দিন কিন্তু এমনে জিগাইনাই। প্লিজ লাগে না কইরেন না।'

রনি ভাই কিছুক্ষন চুপ করে যেন সিদ্ধান্ত নিলেন।

- শোনাই লাগব। এত পুরান কথা।

- ভাই, আমার তো বড় ভাই নাই। আপনিই আমার বড় ভাই। এতবার কইলাম বিয়াডা কইরা ফ্যালতে। করলেন না। এখন একা একা এই শহরে দিন কাটাইতেছেন। কম মাইয়া তো আর আপনের উপরে ফিদা আছিলো না। সবকয়ডারে রিজেক্ট কইরা দিলেন।

- তুই করস না ক্যান বিয়া?

- ভাই, আমার কী বয়স গ্যাছেগা। সেইদিন উনত্রিশ পার হইল।

- তাইলে কী আমার গ্যাছেগা বয়স। তোর থিকা মাত্র এগার বছরের বড় আমি ব্যাটা।

- বুঝছি ভাই। আপনে এখনো জোয়ান আছেন তো কইরালান। খুঁজমু?

- না রেহ। এতকাল যখন করিনাই। আর করুম না। চাকরি বাকরি আর ভাল্লাগেনা। তাই ছাইড়া দিয়া বইসা আছি। যখন মন চায় ফ্লাটে তালা লাগায়া ব্যাকপ্যাকটা কান্ধে নিয়া বাইরাইয়া পড়ি। ভালই তো আছি।

- তো কার লেইগ্যা না। তার কথা একটু কন শুনি।

- শোনাই লাগবে?

- ভাই কন না। আমি তো আর কইয়া বেড়াইতেছিনা।

- তাইলে চা খাইতে খাইতে কই। ম্যালা বড় কাহিনী। কমু যখন সবই কমু। তোর কাল গাড়ি কয়টায়? তবে আমিও জানি তোরও কাহিনী আছে একটা সেইটাও কিন্তু আইজ খোলাসা করতে হইব।

- ভাই দশটায় গাড়ি। আমারডা আপনে জানলেন কেমনে?

- তুই ছোটে না আমার? কসনাই এইডা ঠিক কিন্তু বুঝি যে নাই কিয়ের লাইগা প্লেবয় হইছিলি এইডা তো ঠিক না। যাক, না ঘুমায়া জার্নি করতে পারবি তো?

- ক্যান জানেন না মনে হয় পারুম কী না?

- পারবি তাইলে। যাই চা নিয়া আসি। তুই বয়।


চা নিয়ে এসে তিনি শুরু করলেন তার কাহিনী। পরের সময়টুকুতে আমরা হারিয়ে গেলাম নব্বই দশকের মাঝামাঝি আর এই শতকের শুরুর দিকের মিরপুরের অলিগলিতে। যে জায়গাগুলোয় একটা ব্যর্থ প্রেমের কাহিনী রচনা হয়েছিল।

No comments: