Friday, October 28, 2016

চাঁদ

চাঁদটা আজ বিদঘুটে আচরন করছে,
মনে করিয়ে দিচ্ছে তোমায়।
পিচঢালা পথটাকে ঘৃনা করতে ইচ্ছে হচ্ছে,
তোমার সাথে সেখানেই তো দেখা হয়েছিলো।
আজ যদি আমায় জিজ্ঞাসা কর,
তোমায় ঘৃনা করি কী না!
আমি শুধু এটাই বলব, তোমায় ক্ষমা করেছি
বহুদিন আগেই।
তবে, আজ যদি তোমার গায়ে আগুন লাগে
আর আমার হাতে থাকে এক বালতি জল।
আমি নির্দ্বিধায় স্নান করবো
তোমার পুড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে।
এটা প্রতিশোধকামিতা নয়,
আমার জীবনে তোমার মূল্যহীনতা।

তুমি

কী চাই আর তোমার
যখন প্রাণটাই তোমায় দিয়েছি।
কী আর বাকি আছে দেবার
যখন সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছি
শুধু রয়েছে বাকি নিরবতা।
বালিকা,
মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করতে চাই।
পথ হারাবে এ ভয়েই পিছিয়ে যাই
এ দুর্বলতাকে নিজের মত করে
ভেবে নিয়েছ অযোগ্যতা।
এক সীমারেখার মাঝেই সব করে বিচরন
এক মাত্রাতেই থামে সব জোর আলোড়ন,
বালিকা, জানো তো
এর মাঝে থাকার মাঝেই নিহিত সম্পর্কের সফলতা!

বুদ্ধ

বোধিবৃক্ষের তলায় বসিনি
তাই, বুদ্ধও হয়ে ওঠা হয়নি।
ইটকাঠের খাঁচায় বন্দী থেকে
বোধহীন দোপেয়ে পশুতে পরিনত হচ্ছি,
হয়ত।
নতুবা রাতের আকাশটাকে
এত ভয়ংকর লাগবে ক্যানো?

হারিয়ে যাওয়া

দীর্ঘপথ অতিক্রম করে যখন ভেবেছি পথ শেষ,
তখন অবাক হয়ে দেখলাম আছি সমুদ্রের কিনারায়
পথ ভুলে হারিয়ে গিয়েছি কোন এক অজানায়।
সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে দেখছি সুর্যের অস্ত যাওয়া
আর জমিয়ে রাখছি শেষ দীর্ঘশ্বাস।
অন্ধকার নেমে এলে আমিও হারিয়ে যাব শেষবারের মত,
উন্মত্ত ফেনিল রাশিমালায়।

Tuesday, September 6, 2016

মধ্যরাতে

মধ্যরাতটাকে বড্ড আপন মনে হয়;
চারদিকে নিস্তব্ধ থাকে...
নিশ্চুপ।
ভেতরের আমিটা,
যে কিনা সামাজিকীকরনের চাপে পরে লুকিয়ে থাকে সারাটাদিন,
বেরিয়ে আসে তাজা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে।
সারাটাক্ষন অভিনয় করে যাওয়া আমিটা
একটু স্বস্তি পায়,
একটু স্বস্তি খোঁজে,
বাইরের 'আমি'র কাছে।
মরুর বুক থেকে বেরিয়ে আসে পিরামিড
হাজার বছরের হাহাকার,
মৃত সেসব অনুভুতি, অপ্রকাশ্য।
ভেঙে পড়া ভেতরের ক্লান্ত আত্মা
বাইরের দ্বিচারিতা দেখে আরো ক্লান্ত হয়
অবাক হয়,
আবার লুকিয়ে পড়ে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে।
আমি নির্বাক চেয়ে দেখি
দুই চরিত্রের মুখোমুখি হওয়া।
যখন তুমি হয়ত আমায় সম্পুর্ন ভুলে গ্যাছো
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে..

বলা হয়নি, ভালবাসি

আকাশ থেকে যখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরে,
তোমার হাসি আমার মনের উঠোনে রোদ ছড়ায়;
আমাকে উষ্ণ করে।
শত বিনিদ্র রাত কেটে গেছে 
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে।
চাঁদটাও আমায় মাঝে মাঝে উপহাস করে
আমার ভীরুতা নিয়ে।
সে তো জানেনা তোমায় বলতে আমার দ্বিধা নেই,
সংকোচ নেই।
আমি শুধু ভয় পাই,
তোমায় পাওয়ার জন্য এক পা এগিয়ে
তোমাকেই না হারিয়ে ফেলি জনমের মত।
বালিকা,
জেনে রেখো,
প্রভুর কাছে যদি কিছু মন দিয়ে চাই
তবে সেটা তোমার-ই সুখ।
তাই, আকাশ থেকে আজ বৃষ্টি ঝরছিলো,
তোমার হাসিও উষ্ণতা ছড়াচ্ছিলো, তবু কাছে যাইনি।
বলিনি,
ভালোবাসি।

মেঘ

রাতের আকাশে তারাগুলো
মিটিমিটি জ্বলছে বিরামহীন।
সুর্যের আলো ধার করে হলেও
রাতটাকে আলো দিয়ে যাচ্ছে চাঁদটা অবিরত।
রাস্তার পাশে বৃষ্টিতে ভেজা সারমেয়গুলো 
কেঁদে যাচ্ছে অবিরাম সুরে।
আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরিয়ে
মেঘগুলোই উপস্থিত নেই।
গোল্ডলিফের ধোঁয়া দিয়ে কী এই অপূর্ণতা
পূর্ণ হবে, বালিকা!
যেমন করে তোমার অপূর্নতাকে পূর্ণ করে নিই।

Friday, August 19, 2016

মেনে নিয়েছি

বেহালার বিষন্ন সুর আমায় আর দগ্ধ করেনা;
দগ্ধ হবার যে অনুভুতি লাগে
তা আমি হারিয়ে ফেলেছি।
বিষন্নতার একটা মাত্রা ছিল
তা আমি ছাড়িয়ে গিয়েছি।
গতরাতটা নির্ঘুম কেটেছিল বিনাকারনে; হয়তো!
কারনটা বড্ড তেতো ছিল
তা আমি মানিয়ে নিয়েছি।
কারনটা একটা মিথ্যে ছিল
তা আমি মেনে নিয়েছি।

হারিয়েছি

হারিয়েছি আমি,
হারিয়ে গিয়েছি
হেরে গিয়েছি অবেলায়।
খুঁজতে গিয়ে
খুঁজে পেয়েছি
তোমাকে পাওয়ার অভিপ্রায়।
খুঁজে বেড়াচ্ছি নিজেকে,
পেয়েও হারাচ্ছি বারেবার।
হয়তো হারিয়েই গিয়েছি,
খোঁজ দেবে কে আমার!
হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে
হারিয়েছি আমি শতবার।
খুঁজে বেড়াচ্ছি স্মৃতি হাতড়ে
খোঁজ দেবে কে আমার!

Saturday, August 6, 2016

নক্ষত্র, তোমায় বলছি

শত ব্যস্ততার শেষে ক্লান্ত আমি
আংশিক বিলীন হয়ে আছি;
পূর্ণ বিলীনের পথে এগিয়ে চলেছি ধীরে ধীরে।
নক্ষত্র আমায় আলো দাও-
আমি গ্রহণের শাপে পড়তে চাইনা।
আমায় উদ্ভাসিত করো তোমার আলোয়, নক্ষত্র।
 
আমি নিরুপায়,
আঁধার আমায় গ্রাস করছে তিলে তিলে।
আমি হারিয়ে ফেলছি আমার অস্তিত্ব,
ধীরে ধীরে,
খুবই ধীরে, বর্ণনাতীত মৃত্যুযন্ত্রনা ভোগ করে। 
আমায় বাঁচিয়ে দাও তোমার আলোয়, নক্ষত্র।

স্বপ্ন

অলংঘনীয় এক দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে
ওপাশে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছেটাই বোধহয় স্বপ্ন।
শত বিনিদ্র রজনী
আর ক্ষয়ে যাওয়া চামড়ার জ্বলে ওঠার যন্ত্রনা
তখনই তীব্র হয়
যখন ব্যর্থ হয় সব চেষ্টা।
নিজেকে পুড়ে যাওয়া কয়লা মনে হয় তখন।
মেঘলা আকাশ থেকে ঝরে পড়া
বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাই মনে হয় পরম বন্ধু,
পরম প্রাপ্তি।
আমি পুড়ছি,
আমি কয়লাতে রুপান্তরিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত।
এক ফোটা বৃষ্টি কী ঝরবেনা?
মিরপুর ১৩, ঢাকা
৩/৮/১৬

তোমার মাঝে

তোমার হাতটা ধরে হাটতে চাই সারাটা জীবন।
হাত বাড়িয়ে রেখেছি
এবারে তোমার বাড়ানোর পালা।
আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বাচতে চাই।
আমি তাকিয়ে আছি
এবারে তোমার তাকানোর পালা।
আমি তোমার ভালোবাসার মেঘে উড়তে চাই।
আমি মুখিয়ে আছি
এবারে তোমার কাছে টানার পালা।
আমি হারিয়ে যেতে চাই,
বিলীন হতে চাই,
তোমার মাঝে।
মিরপুর ১৩, ঢাকা।
৫/৮/১৬

Sunday, July 24, 2016

দহন

অপেক্ষার প্রহর কাটার অপেক্ষায়
গাঢ় অন্ধকারে
তারাবিহীন আকাশের নীচে বৃষ্টিস্নাত থাকবার প্রতিটা মুহুর্তের কথাগুলো যদি লিখে রাখা যেতো;
হয়তো ভেতরের দহনটা থেমে যেতো।
হয়তো একদন্ড শান্তির রেশ ছুঁয়ে যেতো আমায়।
তবে, তা সম্ভব নয় কখনই।
ইতিহাস লেখা হয় সফলতার;
তাতে পরাজিতদের অধিকার নেই, ছিলোনা কখনই।
তাই আমারও নেই আমার ব্যার্থতার ইতিহাস লেখার অধিকার।
এভাবেই হয়তো একদিন মিশে যাবো প্রকৃতির সাথে।
ঝরে পড়ব আবার বৃষ্টি হয়ে
অন্য কারো চোখের জলে মিশে যেতে।


Thursday, February 11, 2016

ব্যস্ততা ৪-৫

লিফটে চড়ে পৌঁছে গেলাম আটতলায়। আমার আবার উচ্চতাভীতি আছে। লিফটে চড়লেও মনের ভেতরে বিশাল উদ্বেগ কাজ করা আরম্ভ করে। তবে আমার চেহারা দেখলে কারো বোঝার জো নেই যে আমি ভয় পাচ্ছি। এ লাইনে এসে এসব বিদ্যে বেশ ভালভাবেই রপ্ত হয়ে গিয়েছে।
লিফট থেকে বেরিয়ে ডানে ৩ নম্বর চেম্বারটা আমার আজকের ক্লায়েন্ট মামুনুল ইসলামের। সেদিকে হাটা দেয়া মাত্র নীল উর্দি পরিহিত সিক্যুরিটি গার্ড জিজ্ঞাসা করলেন কার কাছে এসেছি। খুব গাম্ভীরয্যের সাথে উত্তর দিলাম। গার্ড ভদ্রলোক সামনে থাকা ইন্টারকম দিয়ে কল করলেন মামুনুল সাহেবকে।
‘স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে আসিচ্ছেন’।
ওপাশ থেকে সম্মতিসূচক ইশারা নিশ্চিত হয়ে তিনি আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আমায় কোন দিকে যেতে হবে। গার্ড ভদ্রলোকটি কথা খুব কম খরচ করেন। গার্ডদের বোধ করি কম কথা বলাই অভ্যেস।
মামুনুল ইসলামের চেম্বারের দরজায় তার ছোট্ট একটা পরিচিতি লেখা আছে। বুঝলাম ভদ্রলোক তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। তার পরিচিতিতে লেখা,

মামুনুল ইসলাম
ডিএমডি, হেড অফ কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্ট
আজিব ফুডস
আইসিএমএ, এমএসসি ইন কেমিস্ট্রি (পুর্ব-পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়),
বিএসসি ইন কেমিস্ট্রি (সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়)

চেম্বারের দরজা খুলে দেখলাম একটা টেবিল চেয়ারে মামুনুল সাহেবের ব্যাক্তিগত সচিব বসে আছেন। তিনি আমায় দেখেই বললেন, ‘ক্রেডিট কার্ড?’
আমি সামান্য হেসে জবাব দিলাম ‘জ্বী, ক্রেডিট কার্ড’।
‘স্যার ভেতরে আছেন। আপনি ভেতরে যেতে পারেন’।
আমি হাসিমুখে সচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজা খুলে প্রবেশ করলাম মামুনুল ইসলামের রুমে।
‘আপনি সাড়ে চার মিনিট দেরি করেছেন’- মিনমিনে আওয়াজে যিনি কথাটা বললেন তাকে আমি চিনি যদিও দেখিনি। আমার সামনে রিভল্ভিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে আমার দিকে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছেন আওয়াজের মালিক, মামুনুল ইসলাম।



‘সময়ের দাম অনেক। আমার সময়ের দাম আরও বেশি। আশা করি বুঝতে পারছেন। সরাসরি কাজের কথায় চলে যাওয়াটাই বোধ হয় দুজনের জন্য ভাল হবে’।– গাম্ভীর্যের সাথে কথাগুলো বললেন সামনে বসা ভদ্রলোক।
ভেবেছিলাম সাড়ে চার মিনিটের খেসারত সাড়ে চোদ্দ মিনিট জ্ঞানপুর্ণ অসার বক্তৃতা শুনে কাটাতে হবে। যাক, ভদ্রলোক এ দিক দিয়ে বেশ ভাল। মিনি নোটবুকটা সবসময় ব্যাগে থাকে। এতে বিভিন্ন প্রপোজাল সেভ করে রাখা। শুনেছিলাম কাস্টোমারকে শোনানোর পাশাপাশি দেখিয়ে আরো বেশি আকৃষ্ট করা যায়। তাই এ ব্যবস্থা।
সামনে বসা ভদ্রলোকের গায়ের বর্ণ শ্যামলা। চুল কোকড়ানো। তবে দেখলেই বোঝা যায় ইনি নিজের বেশ যত্ন নেন। এ ধরনের লোক পটানো সহজ নয়। কিন্তু, আমিও সিনিয়র এ লাইনে। অভিজ্ঞতা বেশ হয়েছে। তাই ব্যাংক প্রুশিয়ার একটা প্রোডাক্টের বিবরন বের করে তার সামনে রাখলাম।
‘স্যার, এখানে বেশির ভাগ বিবরনই দেয়া আছে এই প্রডাক্টের। আপনি এতে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিট পাবেন’।
কথা শেষ করার আগেই তিনি হাত তুলে আমায় থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনার ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গতকাল রাতে ঢুকেছিলাম। সেখান থেকে একটা আমার পছন্দ হয়েছে। মাস্টারকার্ড গোল্ড এ কী কী সুযোগ সুবিধা তা আমি আগেই দেখে নিয়েছি। এর বাইরে আর কি সুবিধা দিতে পারবেন’।
আমি বিগলিত হাসি দিয়ে বললাম, ‘এর বাইরে আপনাকে শুধুমাত্র ফাস্ট সার্ভিস দিতে পারবো। এটা আমাদের বেস্ট প্রডাক্ট, স্যার। এ কার্ডধারী ক্লায়েন্টেরা ব্রাঞ্চে এক্সট্রা কিছু সুবিধা পায়’।
‘ওকে, আমার কাগজপত্র রেডি করতে খানিক সময় লাগবে। কাছাকাছি কোন ব্রাঞ্চে ব্যবস্থা করুন। পেপার্স রেডি হলেই আমি আপনাকে ফোন দেবো। আমার কার্ডটা নিয়ে যান’।
‘থ্যাংক ইউ, স্যার। আমি আপনার কপ্লের জন্য অপেক্ষা করব’।
কার্ডটা নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে এলাম ভদ্রলোকের চেম্বার থেকে। আমার আর্ধেক কাজ কমিয়ে আমায় দেখা করতে বলেছেন। ভদ্রলোক নিজেই যে কোন ব্রাঞ্চে চলে যেতে পারতেন। পরিশ্রম করে ছোট অবস্থান থেকে আজ এখানে এসেছেন বোঝাই যায়। আমার লেগে থাকাকে তিনি পুরস্কৃত করতে চান তা তো স্পষ্ট। তিনি জানেন এ থেকে আমার কিছু কামাই হবে। ভদ্রলোকের উপরে শ্রদ্ধা বেরে গেলো।
লিফটে করে নীচে নেমে এলাম। ফ্রন্ট ডেস্কে নীল নয়না তার সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। আমার দিকে একবার চোখ পড়লো তার। ঠোঁটে এক চিলতে হাসিও ফুটে উঠলো। আমিও পালটা হাসি বিনিময় করে বেরিয়ে এলাম বিল্ডীং থেকে। হাসিটা যে আমায় নরম কলজেয় বেধেনি তা বলবনা। কিন্তু, মাইন্ডসেট ঠিক রাখতে হবে। আমাদের মত লোকেদের হাসিতে বিগলিত হয়ে পড়া সর্বোচ্চ মাত্রার অপরাধ। এ অপরাধবোধ না থাকলে মাইন্ডসেটে বিঘ্ন ঘটতে পারে!

রাস্তায় বেরিয়ে প্রথমেই গন্তব্য ঠিক করলাম। ক্লায়েন্টের সাথে আলাপ শেষ। এবারে গন্তব্য ব্যাংক প্রুশিয়ার নিকটতম ব্রাঞ্চ। ওখানে গিয়ে ম্যানেজার আর ক্রেডিট অফিসারকে ধরতে হবে।

স্বপ্ন

স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলাম,
স্বপ্নের সাথে আড়ি নিয়েছিলাম,
ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম নির্দ্বিধায়।
তবু, 
মাঝে মাঝে কিছু কন্ঠ স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করে- 
নতুন করে বাঁচার আশা জোগায়।
কী ক্ষতি শেষ হয়ে যেতে যেতেও স্বপ্ন দেখায়?
হারিয়ে যাবার স্বপ্নেও তো হারাইনা
গাঢ় তমসায়।
ছুটে চলি খুঁজে পথ মৃদু জ্যোৎস্নায়...

Wednesday, February 10, 2016

ব্যস্ত এ শহরে

প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে ব্যস্ততা। ব্যস্ত মানুষ, ব্যস্ত শহর। কোটি মানুষের ব্যস্ততায় শুরু হয় শহরের দিন। কোথাও কারো এতটুকুন সময় নেই একদন্ড দাড়ানোর। দফতরগামী চাকুরে, বিদ্যালয়গামী শিশু সাথে তার মা, পত্রিকার বিলিকারী, বাজারের ব্যবসায়ী সবাই ছুটছে আপন আপন গন্তব্যে, ছুটে চলেছে এ প্রিয় শহরে।
সকাল ৭ টা বেজে ৩০সঙ্কেতঘড়িটাও ব্যস্তত্রস্ত্রভাবে ডেকে চলেছে আমায়। শহরের এ ব্যস্ততায় শামিল করতে চায় আমাকেও।
আমি বিশাল এ শহরের এক প্রান্তের এক অভদ্র এলাকায় বসবাসকারী এক আলসে ফ্রীল্যান্স ক্রেডিট কার্ড মার্কেটিং এক্সেকিউটিভ। শহরের দক্ষিন প্রান্তের এ এলাকার বাড়িঘর অতটা ভদ্রস্থ নয়। সেকারনে ভাড়াটাও অন্যান্য এলাকার তুলনায় খানিক কম। চিলেকোঠায় ছোট এক রুমের এক ফ্লাটে আমি একাই থাকি। কোন রকমে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড মানুষকে ধরিয়ে দিয়ে সামান্য যে কমিশন পাই তাতে এ এলাকা ছাড়া উত্তরের ঝা চকচকে দালানকোঠায় বসবাস করা স্বপ্নই বটে। তবে, কাস্টমারের সামনে ঝকঝকে তকতকে হয়েই যাই। শত মিথ্যার প্রথম মিথ্যাটা অব্যক্ত। এ মিথ্যাটা প্রথম দর্শনেই বলি আমি স্যুট-টাই দেখিয়ে।
আজ সকাল দশটায় এক বড়সড় ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করবার কথা। এঁর পিছনে অনেক দিন ধরেই লেগে আছি। ব্যাংক থেকে যে সম্ভাব্য ক্লায়েন্টের ফর্দটা ধরিয়ে দিয়েছিল তাতে এঁর নামটা প্রথম দিকেই ছিল। মুঠোফোনে আর ইমেইলে বারংবার যোগাযোগ করবার পরে আজকেই তিনি মিটিং এর দিন ধার্য্য করেছেন। তাই প্রস্তুতির ও একটা ব্যাপার আছে।
কাপড়চোপড় রাতেই ইস্ত্রী করে রেখেছি। কোন রকমে সঙ্কেতঘড়িটাকে থামিয়ে চোখ ডলতে ডলতে ফ্লোরবেডিং থেকে উঠে চললাম বাথরুমের দিকে। ফ্রেশনেসটাও এ লাইনে এক বড় ব্যাপার।
নিজেকে ফিটফাট করে বেরোতে সময় লাগলো মোটে ২৫ মিনিট। সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা ডার্বি স্পেশাল খাওয়াটা নিয়মিত অভ্যেস হলেও মাঝে মাঝে অনিয়ম হয়ে যায় ক্লায়েন্টের কাছে যাওয়ার কথা থাকলে। কম দামী সিগারেটে তামাকের গন্ধটা বেশ উগ্র থাকে। ক্লায়েন্টের সামনে ও গন্ধ নিয়ে যাওয়া নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমান।
বাসা থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তার মোড়ের হোটেলে আমার সকালের নাস্তাটা নিয়মিতই। হোটেলের মালিক কাইউম সাহেবের সাথে সুসম্পর্কের পুর্ণ ফায়দা তুলি মাঝে মাঝে বাকিতে খেয়ে। আজ পকেট দুর্বল। অবশ্য এ দুর্বলতা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। হোটেলে ঢুকেই ক্যাশে বসা কাইউম ভাইকে দেখে দিলাম লম্বা এক সালাম।
‘আসসালামুয়ালাইকুম কাইউম ভাই, কেমন আছেন?’
‘এইতো ভাইজান ভাল। তয় ব্যবসা খারাপ’।
আমি ভাল করে হোটেলের ভেতরে চেয়ে দেখলাম প্রতিটা টেবিলই ভর্তি। যেদিন এগারোটায় ঘুম থেকে উঠে এখানে আসি সেদিনও একি চিত্রই দেখি। তবুও ভদ্রলোকের মুখে প্রতিদিনই এ কথা কেন থাকে তা আমি ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারিনা।
কাইউম সাহেব মেসিয়ার কে ডেকে বললেন, ‘অই কাসেইম্যা, ভাইজানরে টেবিল ফাঁকা হইলে বহাইয়া দিছ’।
আমি আসন ফাঁকা হবার আশায় দাঁড়িয়ে রইলাম। খানিক পরে একটা আসন ফাঁকা হল। কাসেম, ছোট খাটো ছেলেটা আমায় ইঙ্গিত করে বসে যেতে বলল। আমি অবশ্য এমনিতেই বসতাম। কিন্তু এ ইঙ্গিতের অর্থ হল সে আমার জন্য বিশেষভাবে খেয়াল করে আর বিল চুকিয়ে যাবার সময়ে তার হাতেও যেন দু’চার টাকা বখশিশ পড়ে। আমিও অবশ্য ওকে সচরাচর নিরাশ করিনা যদিনা নিজের পকেট গড়ের মাঠ হয়।
নাস্তা খেয়ে ক্যাশের সামনে গিয়ে একটা টুথপিক নিয়ে পকেটস্থ করতে করতে কাইউম ভাইকে বললাম,
‘ভাই, আজকের বিলটাও খাতায় তুলে রাইখেন’।
কাইউম ভাই কিছুটা বিরক্তির সাথে পারলে তাকাননা এমন একটা আড় দৃষ্টি হেনে বললেন, ‘ভাইজান, বাকির খাতায় তো শ’পাচেক উইঠা গেলোগা। টাইডা তো মনে লয় নতুন কিনছেন। যাউজ্ঞা, এট্টু তাড়াতাড়ি টাকাটা দিয়েন। বোঝেনই তো এই ব্যবসা কইরাই ফ্যামিলি চালাই’।
আমি ঘাড় নেড়ে ‘তা তো অবশ্যই’ বলে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি জানি টাইয়ের কথাটা উনি কেন বললেন। তবে কথাটা গায়ে মাখিনি। এরকম কথা গায়ে মাখতে নেই। গায়ে মাখিও না। দিনে শতবার শতজনের কাছ থেকে এরকম তাচ্ছিল্যভরা কথা শুনতে শুনতে সব গা সওয়া হয়ে গেছে।
দিলকুশা এলাকায় ভদ্রলোকের অফিস। নীচে রিসিপশনে বসা উর্বশীন্যায় এক মহিলা বসা। কর্পোরেট হাউজগুলো বেছে বেছে এরকম সুন্দরী নারীদের রিসিপশনে নিয়োগ দেন। আসলে সুন্দরের প্রতি মানুষের আকর্ষন বেশি। যেমন, আমি সে আকর্ষনেই রিসিপশনের দিকে এগোচ্ছি যদিও আমি আমার ক্লায়েন্টের বসবার চেম্বার কোথায় তা জানি।
‘এক্সকিউজ মী, ম্যাডাম’
রিসেপশানিস্ট নারী তার নীল চোখ মেলে আমার দিকে চাইলেন। আমি চোখের গভীরে হারাতে গিয়েও ফিরে এলাম। নয়ত ক্লায়েন্ট পটাতে সমস্যা হতে পারে। মাইন্ডসেট ঠিক রাখা জরুরী।
‘ইয়েস স্যার, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?’
‘জ্বী, আমি মামুনুল ইসলামের কাছে এসেছিলাম। হেড অফ কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্ট’।
‘স্যার ৮ তলায় বসেন। লিফটের সাতে। ডানে গিয়ে একটু এগোলেই লিফট পাবেন। বাই দা ওয়ে। আপনি কি এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছেন?
‘আজ্ঞে হ্যাঁ। তবু, আপনি ফোন করে দেখতে পারেন’
‘না তার দরকার হবেনা। কাইন্ডলী ভিজিটরস বুকে একটা সাইন করে যান’
দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করছি কিন্তু তাকিয়ে আছি ডেস্কে বসা ললনার দিকে। তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। বুঝলাম তার ইতস্তত বোধ হচ্ছে। হয়তবা নতুন। নয়ত এ দৃষ্টিতে তো পুরোনদের অভ্যেস হয়ে যাবার কথা। বইটা ফেরত দিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘জীবনানন্দ বোধ হয় আপনার মত কাউকে দেখেই বনলতা সেন লিখেছিলেন। তবে, যাকে দেখেছিলেন তার চোখ বোধ হয় নীল ছিলনা। হলে হয়ত লিখে যেতেন। ভাবছি আমিই কিছু লিখে ফেলবো’
মেয়েটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। আমি রওনা দিলাম লিফটের দিকে। পেছনে ফিরে তাকালাম না। জানি পিছনে ফিরে তাকানো মানেই প্রেমে পড়ে যাওয়া। মাঝেমাঝেই এমন প্রেমে পড়ি আমি। অবশ্য প্রেম কাটিয়ে উঠতে সময়ও আমার লাগেনা। তবু, আজকের দিনটা আলাদা। মাইন্ডসেট ঠিক রাখা প্রয়োজন।

Saturday, January 30, 2016

তোমায় ঘিরে

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলে একেলা
রোদে শুদ্ধ হচ্ছিল তোমার দেহ স্পর্শে।
পবনগতি বেড়ে যায় বিপুল হর্ষে
বল কেন হবেনা আমার ধী উতলা।
চোখে মাতাল করা নেশা, হয়না শেষ,
হারিয়ে গেছি তাতে, নেশাগ্রস্তের মত।
ঠোটের কোনের হাসিতে ভেসেছি যত-
চেয়ে থেকেছি তোমার দিকে নির্নিমেষ।
আমি এক প্রেমিক তোমার, স্বস্বীকৃত।
শতজন্মেও হবে কি আমার, জানিনা;
দৃষ্টি জুড়াই তোমায় দেখে অন্তহীন।
আমার হৃদয় তোমা দ্বারা অধিকৃত।
শত নিয়মের শৃঙ্খল আমি মানিনা,
স্বপ্ন সাজাই তোমায় ঘিরে, অমলিন।