Monday, December 17, 2018

সাহস

সাহসের সর্বোচ্চ স্তর গবেষনা করতে গিয়ে
তিনি অনেক খুঁজলেন।
ঘুরে বেড়ালেন পৃথিবীর সমস্ত স্থলপথ,
গেলেন অতলান্তিক এর গভীরে।
সুন্দরবন-কালাহারি-আমাজন চষে
ইউরোপের সমুদ্রঘেষা তীরে বসে
মধ্য এশিয়ার দিকে তাকিয়ে ভেবে ভেবে পেলেননা কিছুই।

বিষন্ন মনে ব্যার্থতার গ্লানি মুছতে তিনি
আত্নহনন করতে গেলেন এক ঘরে একাকী।
ঘন্টাখানেক পরে দেখা গেল তিনি গবেষনাগারে।

গবেষনা পত্রে তিনি লিখেছেন,
আত্মহননের শেষ সজ্ঞান মুহুর্তই সাহসের সর্বোচ্চ স্তর৷

কাগজে বেরোল এ খবর,
পড়ে গেল চারিদিকে ধন্যি ধন্যি রব। 
ঢাকার এক ছোট্ট গলির এক পাগল শুনল সব,
মুচকি হেসে বলল,
এ তো জানা কথা।
সে স্তর ছোঁয়া কঠিন বলেই তো বেঁচে আছে মানুষ পূর্বাপর।

আনন্দম্‌

শীতের রাতে একটু উষ্ণতার খোঁজে পিচঢালা পথে
ছুটে চলা সারমেয়র কাছে
একচিলতে সিগারেটের আগুনও অনেক মূল্যবান।
হয়ত তাতে তাপমাত্রায় কোন পরিবর্তন আসেনা।
কিন্তু, চোখের শান্তিটাও অনেক সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন, সারমেয়র কষ্ট দেখে
এসিডের দোকান থেকে এক বোতল
চুরি করে নিয়ে আসা এসিড ঢেলে
সারমেয়র আনন্দে চিৎকার করা দেখে চোখের শান্তি পায় ক্লান্ত কাঁক।

নিবর্ত

রাত তিনটে 

চারিদিকে নিশ্চুপ। কোলাহলহীন। দূরের রাস্তা থেকে ভারী ট্রাক চলার গমগম আওয়াজ আসছে মাঝে মাঝে। এ শব্দ ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য যথেষ্ট না। তবু ঘুম ভাংলো। আর ঘুম আসবেনা ভেবে চোখে পানি দিতে গেলাম ওয়াশরুমে। মেরুদন্ড বেয়ে মাঝে মাঝেই এক চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে। আমি কী ভয় পাচ্ছি? কে জানে? অন্তত আমি তো জানিনা বা বুঝিনা।

ও মাঝে মাঝেই বলত আমি নাকি ইচ্ছে করেই বুঝতে চাইনা কোন কিছু? আমি ওকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আমি আসলেই বুঝিনা। সে অবশ্য এখন বোঝাবুঝির উর্ধ্বে। অনেক আগেই সে অধ্যায় গত হয়েছে আমার। প্রায় ১৭ বছর তো হবেই। দায়িত্ব আর জন্মদায়ের হিসেব মেলানোর বোঁঝা কাঁধে তুলে নিয়ে কবে যে নিজের অদেখা মৃত্যু ঘটেছে তার হিসেব রাখিনি। আজ মধ্য চল্লিশে এসে একাই আছি বেশ। কীটস্য এক জীবন পার করে শেষের দিন গুনছি। এ বয়েসটা অবশ্য সাধারনের হিসেবে অনেক কম। কিন্তু, আমার কাছে মনে হয় অনেক বেশিই টেনে ফেলেছি জীবন নামের এ বোঁঝা। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে থাকতে থাকতে অবশেষে গত মাসে ডক্টর সুসংবাদটা দিলেন। আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। অবশেষে, অনেক দিন পর একটা সুসংবাদটা পেলাম। এ নচ্ছার জীবনটা অবশেষে একটা শেষ এ উপনীত হচ্ছে। 

পানিটা আজ একটু বেশিই ঠান্ডা। চামড়ায় পড়া মাত্র যেন জ্বলে জ্বলে উঠছে। গামছা ছাড়াই ভেতরে ঢুকে গেছি। গামছা নিতে বেরিয়ে ঘরে ঢুকেই একটা ধাক্কা খেলাম। চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে দেয়ালের দিকে মুখ করে। মেরুদন্ডের চোরাস্রোত এখন সুনামিতে পরিনত হয়েছে। মাথা আমার এমনিতেই ঘামে তবে বুঝতে পারছি তিন সেকন্ডের মাথায় এক ফোঁটা ঘাম টুপ করে মাটিতে পড়ল। গলা যদিও আটকে গেছে তবুও যথাসম্ভব সাহস সঞ্চয়ের চেষ্টা করে জিজ্ঞাসা করলাম,

- কে? কে ওখানে? 

কোন হেলদোল দেখলাম না। বিছানার পাশে একটা লাঠি রাখি চোরকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য। সেটা দেখে সাহস কিছুটা বাড়লো। হাতে নিয়ে আরেকটু সাহসের সাথে একটু জোর গলাতেই জিজ্ঞাসা করলাম,

- আমার ঘরে কী করছিস রে? 

উত্তেজনায় মাথায়ই ছিলোনা যে ঘরে বাতি নামক একটা বস্তু আছে যা জ্বাললে আলো হয়। মনে পড়তে স্যুইচ দিতে যাব এমন সময় মূর্তিটি একটু নড়াচড়া করে উঠল। গমগমে গলায় বলল,

- ওটা জ্বালাইস না ইয়ার। আবছা আলোতেই তো ভালো।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ফিরতেই আবছা আলোতে যা দেখলাম তাতে শরীরের রক্তসঞ্চালন ৩ গুন বেড়ে গেল। আমার মতই একজন দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। 

- ক্কক্ককে আপনি?; ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।

- আমি তুইই, শালা। এত ঘাবড়াসনা। আঠেরো বছর আগে তোর ভেতরেই নিজেকে বন্দী করেছিলাম সময়ের প্রয়োজনে। এতকাল পেরিয়ে গেল আমায় ফেরালিনা তাই আজ নিজ থেকেই ফিরলাম। হিসেব মেলাতে।

- মানে?

- মানে বুঝলিনা রে বোকা...দা। আমি তো তোরই অংশ। আর কিছুকাল পরেই তো এ দেহের ভ্যালিডিটি খতম। স্লার, যা বানিয়েছিস ভেতরটাকে। যেন জলজ্যান্ত কয়লাখনি! তাই ভাবলাম এ চতিয়া কাহিনী শেষ হবার আগে একবার বসে পুরো জীবনটাকে একটা রিভাইস দিই।

আমি বুঝতে পারছিনা আমি এখন হ্যালুসিনেশনের কোন পর্যায়ে আছি। একবারে শুরুতেই লাস্ট স্টেজে পৌছে গেলাম কী? অবশ্য এ আমার জীবনে নতুন কিছু নয়। সুখের যা কিছু তা অল্প অল্প করে জোগাড় করতে হলেও দুর্ভাগ্যের বিষয়গুলো একেবারে আল্টিমেট হয়েই সামনে এসেছে। তবে এই মুহুর্তে, আমার মত দেখতে এক লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই অংশ বলে দাবী করে আমার জীবন নিয়ে আমারই সাথে আলোচনা করতে চায় ব্যাপারটা একই সাথে হাস্যকর এবং ভীতিজাগানিয়া। 

- হাস্যকর সেটা ঠিক আছে তবে ভীতিটিতি বাদ দে না ভাই। আমি তো বললামই তুইই আমি, আমিই তুই। তোর কপাল ভাল নিজের দ্বিতীয় সত্ত্বাটাকে সামনাসামনি দেখতে পারছিস। আয় বাড়তি কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসি। 

বুঝতে পারলাম এ আর এড়ানোর মত নয়। অতএব, একটা পথই বাকি। তাকে বসার জন্য চেয়ার দেখিয়ে বললাম,

- তবে তাই হোক।

Sunday, December 9, 2018

এপাকিলিপ্টো

কুয়াশায় ঢেকে থাকা পৃথিবীর মাঝে বিষন্ন এক ঝিঁঝিঁপোকা
একাকীত্বের আঁধারে ঢেকে থাকা এক চাঁদ
আর,
সমুদ্রের নোনা জলে কাটছে সাঁতার এক মৃতপ্রায় ডলফিন।

ইট কাঠের শহরে জেগে আছে আলোর আশায় অজস্র মৃত মানুষ।

এযেকিয়েল কী এ সময়টাই দেখেছিলেন হাজার বছর আগে!