Wednesday, December 24, 2014

বাংলাদেশ

সোনালি ফসল দিগন্তজুড়ে,
সুর্যের আলোয় ঝিকিমিকি করা সবুজ ঘাসের উপরে শিশিরবিন্দু।
সকালের মৃদুমন্দ হাওয়ায় নাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া কিশোরীর চুল।
ট্রাক্টরে চেপে বীর হেক্টরের মত জমির দিকে এগিয়ে যাওয়া
বুক চিতিয়ে থাকা খর্বকায় কৃষাণ।
যদি দেখতে হয় এমন দৃশ্য তবে একটা মাত্র দেশ 
বা একটি মাত্র ভুখন্ডই আছে এই বিশ্বে।
সেটা সোনার বাংলা, আমাদের বাংলাদেশ।

দুপুরের কাঠফাটা রোঁদে,
ছোট গাছটার নিচে জিরিয়ে নিচ্ছে ছোট ডেভিডের মত দেবশিশু।
এলোচুল ভাসিয়ে পুকুরে জলকেলি করছে কিশোরী-যুবতী।
শ্রান্ত দেহে ঘর্মাক্ত বীর ফিরছে আপন নিবাসে
হাতে জীবন যুদ্ধের অস্ত্র কোদাল বা কাস্তেটা নিয়ে।
যদি দেখতে হয় এমন দৃশ্য তবে একটা মাত্র দেশ 
বা একটি মাত্র ভুখন্ডই আছে এই বিশ্বে।
সেটা সোনার বাংলা, আমাদের বাংলাদেশ।

সাঁঝের রক্তিম আকাশে
যখন সুর্য ডোবে ওই ফসলের মাঠের কোলে,
পল্লীবধুরা তাড়িয়ে নিয়ে যায় নিজেদের গৃহপালিতগুলোকে,
হাল্কা বাতাস নাড়িয়ে দিয়ে যায় তাদের আঁচল।
লাজে বা উত্তেজনায়ই হয়ত কাঁপে।
যদি দেখতে হয় এমন দৃশ্য তবে একটা মাত্র দেশ 
বা একটি মাত্র ভুখন্ডই আছে এই বিশ্বে।
সেটা সোনার বাংলা, আমাদের বাংলাদেশ।

Tuesday, December 23, 2014

ভাবনার প্রতিচিন্তা

অশ্লীল ভাবনাগুলো উকি দিয়ে যাচ্ছে তোমার মনে, তাইতো?
তাকিয়েছি না হয় তোমার চিকন লালাভ ঠোঁটের দিকে।
সেজন্য এতটা নীচ ভাবার দরকার আছে কি,
ফুলে যদি মধুর আভাস পাওয়া যায় তবে মৌমাছি কি তাকাবেনা?
আমি তো ভেবেছিলাম তোমায় ভালবাসব,
হৃদয়ের গহীন থেকে।
একবারও ভাবিনি তোমায় উদ্বাহু জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে
ভরিয়ে দেব তোমার শরীর।
যেমনটা ভাবছ তুমি, দেখতে পাচ্ছি যা তোমার মনের পর্দায়।

আবারো!  
আমায় নীচু ভাবলে? গাল দিলে আমায় অসভ্য বলে?
একবার না হয় তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে চুলের সুঘ্রান নিয়েছি।
স্পর্শ করেছি তোমার চুলের খোপা।
সুগন্ধী গোলাপ ছোঁয়াও কি অন্যায়, বল?
আমি তো একবারও ভাবিনি পেছন থেকে জড়িয়ে তোমায়
চুমু খাব তোমার সুন্দর স্কন্ধে।
যেমনটা ভাবছ তুমি, দেখতে পাচ্ছি যা তোমার মনের পর্দায়।

আলোর পথযাত্রী

আঁধারের মাঝে খুঁজে চলেছি একটু আলোর দিশা,
ত্রস্ত পায়ে ব্যস্ত আমি হোঁচট খাচ্ছি বারেবার।
ঝিঁঝিঁ পোকারা আলতো আলোয় করছে ব্যর্থ চেষ্টা 
দেখাতে পথ, যে পথের শেষে অগ্নিকুন্ড
বিলোচ্ছে আলো- কাটাচ্ছে তমসা আঁধার।

এ পথে কাঁটা বেছানো অসংখ্য, বিষাক্ত সব।
নাঙ্গা পদযুগলে অজস্র আঘাত, রক্তাক্ত দেহ- হৃদয়।
তবু ছুটে চলেছি আলোর পানে সব করে তুচ্ছজ্ঞান,
হেয়ালির চুড়ান্তে সব অবজ্ঞা করে চলেছি আমি এগিয়ে
অন্তহীন এ যাত্রায়, হতে উদ্ভাসিত জ্যোতির্ময়।

Thursday, December 18, 2014

জীবনসঙ্গী

কেউ যখন প্রশ্ন করে কেমন জীবনসঙ্গী চাই তোমার,
ধন্দে পড়ে যাই আমি।
আসলেই তো কেমন সঙ্গী চাই এ জীবনে?

উত্তর খুঁজলাম নিজের মাঝেই হাজারো বিশ্লেষণ করে।
সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম কোন ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দেব,
শারীরিক না মানসিক?
উত্তর দিল হৃদয়, 'শারীরিক সন্তৃপ্তি দেয় মানসিক প্রশান্তি।'
তবে আমার দুই-ই চাই?

তাহলে দেখতে কেমন হওয়া উচিত আমার সেই সঙ্গীর?
উত্তর দিল হৃদয়,
"স্বপ্নবোনা যার চোখের তারায়, ঠোঁটে সারাখ'ন মিষ্টি হাসি।
একনজরই যথেষ্ট পড়তে মায়ায়, বলতে- 'ভালবাসি'।"

এছাড়া আর কি চাই আমার? ভাবতে আরম্ভ করলাম,

উত্তর দিল হৃদয়, 'তার হতে হবে এমন একজন
যার হাত ধরে হাজার বছর কাটিয়ে দিলেও ফুরাবেনা চাওয়া।'

আর কেমন হওয়া উচিত হবে তার?

এবারে আর হৃদয় নয়, মস্তিষ্ক জানালো
'যে বুঝবে আমায়, যার প্রতি চুম্বনে কাটবে আমার শত পাপ,
যার আলিঙ্গনে শুদ্ধ হব যীশুর মত,
যে আগলে রাখতে জানে নিজের সতীত্ব।
যে বিশ্বাস রাখতে জানে বুকের গভীরে,
যে ভালবাসতে জানে আপনজনে, যার মাঝে আছে ক্ষমতা
করতে আমায় নিয়ন্ত্রন।

Monday, December 8, 2014

সনেট লেখার অপচেষ্টা

বছর ছয় আগে মিলেছিলাম সব
ভর্তিরযুদ্ধ শেষে, বিজয়ী যোদ্ধা বেশে।
ছিল এতদিন আমাদের কলরব
ছিলাম আনন্দিত, বন্ধুত্বের আবেশে।

চোখ বন্ধ করে দেখি শুরুর সেদিন
আজ সব উপনীত শেষের দুয়ারে।
অবারিত মনের দুয়ার বন্ধুবিন-
জানিনা নয়া জীবনে টিকব কি করে!

প্রার্থনা সব সেই মহাপ্রভুর কাছে
যিনি মিলিয়েছিল সব অঙ্গুলী দ্বারা।
ভাল থাকুক সব বন্ধুরা আমাদের।
জানি আবেগ- ভালবাসা সবই মিছে
বাস্তবের কাছে হবে সবই গো-হারা।
তবু বিচ্ছেদ অনুভব করছি ঢের।


Tuesday, December 2, 2014

অপলা

অপলা,
দৃষ্টিসীমানা জুড়ে
তোমার দেহপল্লব, শ্রাবনের মেঘের মত কেশরাজি,
তোমার অনন্তযৌবনা মায়াবী চোখ আর তার রহস্যময়তা।
অজানা এক শিহরন জাগে তোমার হাসিতে।
প্রতিটা রোমকূপ আমায় জানান দেয় তুমি হাসছ!

অপলা,
মায়াবী ঘাতিকা আমার!
একবার তোমার উর্বরা শস্যক্ষেত্রে
আমায় প্রবেশ তো করতে দাও। আমি কৃষক হব...

Thursday, October 30, 2014

হারানো-মনন কাব্য

 শেষ বৈকেলের আলোকরশ্মিতে
জ্বোজুল্যমান দুর্ব্বার উপরে লাগিয়া থাকা
ছোট তারার ন্যায় শিশিরের কাছে মন করেছি সমর্পন।

শীতের এই বৈকালে
নিদ্রাহীন এক পক্ষকাল শেষে
দুর্ব্বার নিকট মন হারাইবার কোন সুনিশ্চিত কারন
থাকিবার কোন কারন রহিয়াছে বলিয়া আমি মনে করিনা!
তবু হৃদয় পারিনি করিতে নিয়ন্ত্রন।

ইহার ন্যায় বহু কর্ম্মই করিয়াছি
অতীত জীবনে। অদ্য ফিরিয়া তাকাইলে
আপনাকে মনে হয় চিনিতে পারিনা, অপরিচিত লাগে!
স্বর্গ-মর্ত্য-ভ্যুলোক ব্যাপিয়া পরমেশ্বরের অসীম কীর্তি দেখিয়া
সংযত করিতেছি নিজেকে, খুঁজিয়াছি উত্তর বহুজনার কাছে।
অর্বাচীন, বৃদ্ধ বা উচ্ছল বালক বাদ দিয়াছি কাহাকে?
শেষে উত্তর দিয়াছে আমার মনন।

তদুপরি কেন এই দুর্মুল্যের মনন হারাইলাম
এক সামান্য দুর্ব্বার উপরে লাগিয়া থাকা শিশিরবিন্দুর কাছে?
হায়! যদি নিজেকে প্রবোধ দিতে পারিতাম
আমি বোকা নই বা আমার ন্যুনতম স্বাভাবিক জ্ঞ্যান বিদ্যমান।
যদি করিতে পারিতাম প্রমান
যাহা করিয়াছি তাহাই শুদ্ধ।
সত্য বলিতে হৃদয় লুকাইয়াছি তাহার কাছে,
যাতে সে না দিতে পারে বাঁধা, সকলের জন্য
এক গুবরেকে যে করিতে হইতে পারে পুনশ্চ আপন!

Sunday, September 14, 2014

আমি মন্দিরের পুজারী

আমি সেই মন্দিরের পুজারী।
সেই মন্দিরের,
যার উর্ধ্বপার্শে লালচে-কালো রঙ্গে রাঙ্গানো।
সাঁঝের মায়া যার মাঝে বিকশিত হয়।

সেই মন্দিরের,
যার আছে দুইটি উদ্ধত উঁচু গম্বুজ।
চন্দ্রাকার, যার মাঝে হৃদ-স্পন্দন বন্ধ হয়।

সেই মন্দিরের,
যার পেছনে উঁচু হেলানো সিড়ি।
যে সিড়ি দেখেই চড়তে ইচ্ছে হয়।

সেই মন্দিরের,
যার প্রবেশপথ এক আজব জলাধার।
যে প্রবেশপথে ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে অনেকে।

সেই মন্দিরের মাঝের দেবী
সুন্দর ভগধারী আমার ভগবান।

বহুবার ছিন্ন করতে চেয়েছি সেই ভগকে।

Tuesday, September 9, 2014

অপ্সরা

মনোহারিনী,
হৃদ-মাঝারে স্থান দিয়াছি তোমায়।
ভালবাসিয়াছি তোমায়।

কোন এক বর্ষায়
আঠারো-বাকীর তীরে-
নীপবনে,
আনন্দে উদ্ভাসিত হইয়া নৃত্যে ছিলে মগ্ন।
বুঝিনি-
তব মুখখানি দেখিবার কাল
আমার শ্রেষ্ঠ লগ্ন।

তোমার উচ্ছলতা,
প্রাণবন্ত আবেগ
আর চাহুনীতে আমি মুগ্ধ-
আমি পাগল মনোহরা।
নাম দিয়াছি ভালবাসিয়া তোমায়

‘অপ্সরা’।

Monday, September 8, 2014

আজ অনেকদিন পর

আজ অনেকদিন পর দেখা হল তোর সাথে।
আগের চেয়ে অনেক মুটিয়ে গেছিস,
সেই সৌন্দর্য আর নেই তোর মাঝে।
যে সৌন্দর্যকে আমি পুজো করতাম।
যে সৌন্দর্যকে আমি ভালবেসেছিলাম
ঝঞ্ঝার দিনে।

আজ অনেকদিন পর দেখা হল তোর সাথে।
আগের চেয়ে অনেক ধী-স্থির হয়েছিস,
সেই চাঞ্চল্য আর নেই তোর মাঝে।
যে চাঞ্চল্যকে আমি উপভোগ করতাম।
যে চাঞ্চল্যকে আমি ভালবেসেছিলাম
ঝঞ্ঝার দিনে।

আজ অনেকদিন পর দেখা হল তোর সাথে।
আগের চেয়ে অনেক একলা হয়েছিস,
সেই ভিড় আর নেই তোর পাশে।
যে ভিড়টাকে তুই ভালবাসতি,
যে ভিড়টাকে আমি হিংসে করতাম
ভালবাসার দিনে।

Sunday, July 27, 2014

ভাবছিলাম তোমাকে নিয়ে

ভাবছিলাম কিভাবে নিজেকে প্রকাশ করব তোমার কাছে।
আয়নায় দাঁড়িয়ে অনুশীলন করেছি,
একা একা কথা বলতে বলতে
লোকের কাছে পাগল সাব্যস্ত হয়েছি।
কি বলব তা ভাবতে ভাবতে রাস্তা পার হতে গিয়ে
দুবার গাড়ির তলায়ও পড়ার উপক্রম হয়েছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই ঠিক করা হয়ে ওঠেনি।
আর জানি হয়ত তোমাকেও পাওয়া হবে না এই জীবনে। 

Monday, May 26, 2014

ভালবাসি যে কেন তোমায়?



ঈশ্বর জানেন কতখানি ভালবাসি তোমায়!
আমি জানিনা কেন তোমায় এতখানি ভালবেসে ফেললাম?
কি এমন হয়েছিল জানিনা-
যে তোমার মত এক অপরিচিত রমনীর জন্য কেন
নিজের মনে এ অবস্থান সৃষ্টি করলাম?

অন্তর্জালে তোমায় খুঁজে পেয়েছিলাম।
আজ অন্তর্জালের ঐ স্থানে যেতেও আমার কেমন যেন লাগে।
আমি স্বস্তি পাইনা।
আমার মাঝে আমি আর নেই।
কেন যে আমি নিজের কাছেই নিজেকে হারালাম?

অবশ্য এ ব্যাপারটা নতুন কিছুই নয়।
এর আগে বহুবারই এমন অনুভব হয়েছে আমার।
কিন্তু এবারেরটা ভিন্ন।
আমি সত্যিই ভালবেসেছিলাম তোমায়।

কেন যে সত্যি সত্যি ভালবাসতে গেলাম তোমায়?

Tuesday, May 6, 2014

তুমি

জল স্পর্শ করে দেখেছি
সে তোমার মত পবিত্র নয়।
মেঘ স্পর্শ করে দেখেছি
সে তোমার মত সতী নয়।

আমি স্পর্শ করিনি তোমায়
তুমি ভাগ্যবতী-
তুমি পবিত্র, তুমি সতী।

Saturday, April 19, 2014

সায়াহ্নে ভোরের স্মৃতি

সকালে পুর্বাকাশে সুর্যদেব তার আপন মহিমা নিয়ে পুর্বাকাশে উদিত হন। আবার সায়াহ্নে পশ্চিমাকাশে অস্ত যান। মাঝের এই সময়টা তিনি প্রত্যক্ষ করেন কি কি ঘটল। মানুষের জীবনটাও বোধ করি এমনই। জীবন সায়াহ্নে এসে এই কথা খুব উপলব্ধি করছি আমি।
আমি সাঈদ। জীবনে এমন কিছুই করিনি যা দিয়ে মানুষ আমায় মনে রাখবে। হ্যাঁ, নিজের মুখে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। সুর্যের মত উদয় হয়েছিলাম এক কৃষক পরিবারে খুব অল্প দীপ্তি নিয়ে। শৈশব- কৈশোরটা চরম দারিদ্রেই কেটেছে। যুবক বয়সে নিজের ভাগ্যান্বেষনে ঘর ছেড়েছিলাম। জানি কিছুই করতে পারিনি তার মধ্য দিয়েও অনেক কিছুই করেছি। নাহ, আমি আমার প্রথম জীবন নিয়েই কথা বলবো। যা আমাকে আজও আনন্দ দেয়, কষ্ট দেয়, আলোড়িত করে। প্রারম্ভিকা তো করলাম অনেকখানি। বয়স হয়েছে তো তাই একটু বেশি কথা বলি। থাক শুরুই করি কেমন ছিল সেই শৈশবের দিনগুলো।
কবে জন্মেছিলাম তার কোন ঠিক তারিখ আমি জানতে পারিনি। বাবা- মা দুজনেই ছিলেন ক- অক্ষর গোমাংস। আমি তাদের ছোট সন্তান। বাবা ফুটবল খেলা জানতেন বোধ হয়। তাই গুনে গুনে এগারটা সন্তান জন্ম দিয়ে গিয়েছিলেন।  তবে ফুটবল টিমটা বাবার স্বপ্ন অনুযায়ী হয়নি। কারন এই এগারোজনের মাঝে ৪ জনই মেয়ে। বাবা নামাজী ব্যাক্তি ছিলেন, আরবী নাম তার খুবই পছন্দ ছিল। নাম রেখেছিলেন আমার সঈদ। মা রেখেছিলেন মানিক। শেষ পর্যন্ত বাবার রাখা নামটাই থেকে গেছে। শুধু সঈদ এর ‘স’ এর সাথে একটা আ-কার যুক্ত করেছিলাম আমি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেবার সময়। আমি জন্ম থেকেই একটু গোলগাল ছিলাম আর গায়ের রংটা ছিল একটু সাদার দিকে। মা এতেই খুব খুশি ছিলেন। বাবা দারিদ্রের কষাঘাতে পিষ্ট ছিলেন তাই আহ্লাদ অতটা প্রকাশ করতেন না। ছোটবেলার কথা খুব বেশি মনে নেই। দুই বছর আগের কথাই যেখানে স্মৃতিতে ঝাপ্সা সেখানে অত বছর আগের কথা কিভাবে মনে থাকে? এটুকু মনে আছে ব্র ভাইজানের কাঁধে চড়ে স্কুলের স্পোর্টস দেখতে গিয়েছিলাম। ভাইজান তখনও ছাত্র। আসলে তিনি ছাত্র থাকতেন না যদিনা ২ বার মেট্রিকুলেশন ফেল করতেন। থাক তাও ভাল তা না হলে তো এই ঘাড়ে চড়ে স্কুলে যাবার কথা মনে থাকতনা!
স্কুলে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ গানটা গাচ্ছিল মানুষ খুব মন দিয়ে। আর মাঠে পাকিস্তানের চান- তারা পতাকা পতপত করে উড়ছিল। ভাইজান আমাকে তার এক স্যারের কাছে বসিয়ে রেখে লং জাম্প খেলেছিলেন। ফার্স্ট হয়েছিলেন আর পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন একটা শিল্ড। আমার যে কি আনন্দ ছিল! আধো আধো বুলিতে স্লোগান দিতে দিতে ফিরেছিলাম ভাইজানের নামে।
এরপরের কথা মনে আছে প্রথম দিন স্কুলে যাবার কথা। মা সুন্দর কাপড়- চোপড় পরিয়ে মাথায় একগাদা সরিষার তেল ঢেলে আদর করে বললেন, ‘যাও বাজান। ইস্কুলেত যাইয়ে কারুর সাথে মারামারি কইরো বোচর। সবার সাথে ভাল কইরে চইল আর মাস্টরে কথা মন দিয়ে শুইনো’। আমি খুবই ভাল ছেলে ছিলাম তাই ঐ বয়সেই সমবয়সী তিন- চার জনের মাথা ফাটিয়ে বিশেষ উপাধি পেয়েছিলাম। মা তাই সারাক্ষন ভয়ে থাকত রাগ করে কাকে না কি করে বসি। রাগটা পেয়েছিলাম বাবার কাছ থেকে। বাবার রাগের কথা যখন আসলই তখন একটা বিবরন দেওয়া যাক।
বাবা মাঠে কাজ করছিলেন। এরই মধ্যে আমাদের প্রতিবেশি পরিবারে ঝগড়া লাগলো। ঝগড়া তো ভীষন মারাত্নক আকার ধারন করল। বউ চলে যাবে বাপের বাড়ি। বাবাকে কে যেন খবর দিল ‘দুদু, সাইজান তো বউর সাথে ছাড়াছাড়ি কইরে ফেলতিছে’। বাবা কাজ ফেলে ছুটে চলে এলেন বাড়িতে। গেলেন মিটমাট করতে। আমি তখন ঘরে শুয়ে ছিলাম। একটু পরে শুনলাম আমাদের বাড়িতে আগুন দিতে আসছে সাইজানেরা। আমার বড় ৫ ভাই (আমার আগের জন আমার চেয়ে দেড় বছরের বড়) লাঠি নিয়ে নেমে গেল উঠানে। আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলামবদি ভাই পাশে মায়ের আচল ধরে বাইরে মারামারির এন্তেজাম দেখছিল আর বিছানা ভেজাচ্ছিল ভয়ে। পরে শুনলাম বাবা নাকি ঐ ঝগড়া থামাতে গিয়ে দমাদম মারতে আরম্ভ করেছিলেন সাইজানকে। সাইজানের বউই নাকি প্রথম হুমকি দিয়ে ঝাপিয়ে পরে বাবার উপর স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে। পরে বাবাও দমাদম পিটাচ্ছিলেন দুজন কে। এরই মধ্যে অন্যান্য ব্যাক্তি জড়িয়ে গেলে বিশাল আকার ধারন করে ঝগড়া। যা শেষ পর্যন্ত এসে পড়ে আমাদের পরিবারের উপরে। হাসি পাচ্ছে না শুনে? আসলে এমনই ছিলেন আমার বাবা, মৃত্যুর দিন পর্যন্ত।
আমিও বাপের ব্যাটা ছিলাম। প্রথম প্রথম চুপচাপ ছিলাম। একটু স্বাস্থ্যবান ছিলাম বলে সমবয়সীরা ক্ষেপাত। একদিন একটাকে ধরে দিলাম এয়সা কষা যে বাকিগুলো তটস্থ হয়ে গেল। আর আমি হয়ে গেলাম ওদের লিডার। খুব শক্ত হাতে ছেলেপুলেদের নিয়ন্ত্রন করতাম। আর মায়ের কাছেও বিচার যেতো খুব ঘনঘন। তবে মা কিছুই বলতেন না আমায়। শুধু ঠান্ডা গলায় বলতেন, ‘আর ইরম করলি কিন্তুক তোর ভাত বন্ধ কইরে দিবানি’।
আমার এসব ক্ষেত্রে শাস্তি দিতেন বড় ভাই আর সেজো ভাই। এই দুজন আমাকে পিটিয়ে যে কি স্বর্গসুখ(!) লাভ করতেন জানিনা। মাঝে মাঝে মা কড়িকাঠ দিয়ে ঐ দুজনকে ঠেঙ্গিয়ে আমাকে উদ্ধার করতেন। আমিও ভাল ছিলাম! মার খেয়ে আধা ঘন্টা প্যা প্যা করে কেঁদে মাকে অতিষ্ঠ বানিয়ে ফেলতাম। মাও আমাকে রেখে যেতেন তার কাজে। এত বড় সংসার একা হাতে সামলানো তো চাট্টিখানি কাজ নয়। আমার জন্য এত সময় বরাদ্দ করলে বাকিদের কি হবে? আসলে আমার বড় তিন বুবুর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল আমার জন্মের আগেই। এমনকি আমার তিন ভাগ্নে বয়সে আমার চেয়েও বড়। আমি হাইস্কুলে থাকতে নাতির মুখ দেখেছিলাম।
ছোটবুবুর বিয়ের সম্বন্ধ আসলো একদিন। পাড়ার মাঠে কাবাডি খেলছিলাম। এর মধ্যে বন্ধু বাকীবিল্লাহ এসে বলল বুবুকে নাকি দেখতে এসেছে। আমি তা গায়েই করিনি তখন। খেলা শেষ করে যতক্ষনে বাড়িতে ফিরে দেখি সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ। বাবা হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন ‘হারামজাদা, তুই এন্নে আস্তিছিস বাড়িত?’ মা আমাকে ছো করে তুলে নিয়ে বাচালেন। বিয়েবাড়ি বলেই হয়ত বেঁচে গেছিলাম সেদিন।

মাঝে মাঝে মনে হত বাড়িতে আর ফিরবনা। শৈশবে আমার বয়সী ছেলেদের লীড দিতাম আমি আর আমাকে এভাবে মার খেতে দেখে অন্যরা লুকিয়ে হাসত। মান সম্মানের একটা বিষয় আছেনা! অনেক দিন বাগানে গিয়ে বসে থাকতাম পুরো বিকাল। সবাই আমাকে খুজতো। আমি তো রাগ করেছি... তো ফিরবো কেন? কিন্তু মাগ্রেবের আজান শুনে আমি ঠিকই ঘরে ফিরে যেতাম। সন্ধ্যার আঁধারে আমার ছিল রাজ্যের ভয়। তার চেয়ে বড় কথা মায়ের আঁচলের গন্ধ না পেলে আমি ঘুমুতেই পারতাম না। হায়রে মা, তার শেষ দিনটাতে আমি পাশে থাকতে পারিনি। অথচ শৈশবের একটা দিনও মাকে ছাড়া কল্পনা করতে পারতাম না। আর আজ, আমিও দিন গুনছি মায়ের সাথে আবার দেখা হবে ওইপারে। মাঝে মাঝে তো মনে হয় মা আকাশে তারা হয়ে আমাকে ডাকছে। কাউকে অবশ্য বলিনা এই কথা। কে চায় বুড়া বয়সে এসে ‘বাচ্চা’ ট্যাগ খেতে?

Wednesday, April 2, 2014

থ্রিপিস



রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে। সাথে ওর বন্ধু ইকবাল। বারবার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যাচ্ছে রাশেদেরতৃষার আসার কথা তাই এ অপেক্ষা। একটা নতুন থ্রিপিস কিনে এনেছে আজ তৃষার জন্য। চার মাস হতে চলল প্রেমের বয়স কিন্তু তৃষাকে কখনও কিছু কিনে দেওয়া হয়নি। আজ তৃষার জন্মদিন। আজ তো কিছু দিতেই হয়। এই রকম একটা থ্রিপিসের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিল তৃষা। সেদিন দুজনে গিয়েছিল বলধা গার্ডেনে। গার্ডেন থেকে বেরিয়েই কয়েকটা শোরুম। একটা শোরুমে ঝুলছিল পোশাকটা। রাশেদ লক্ষ্য করেছিল ব্যাপারটা। ইচ্ছে হচ্ছিল তখনই কিনে উপহার দিতে থ্রিপিস টা তৃষাকে। কিন্তু টিউশনি করে চলা রাশেদের মাসের অর্ধেকই চলে আধাবেলা খেয়ে। তাই আর সেদিন কেনা হয়নি।
নতুন টিউশনি একটা জোগাড় হয়েছিল গতমাসে বহু কষ্টে। বেতন চার হাজার টাকা। সারা মাস পড়িয়ে গতকালই বেতন পেয়েছে রাশেদ। সেই বেতন থেকে পঁয়ত্রিশশো টাকা দিয়ে থ্রি পিসটা কিনেছে সে। তৃষা মহানগর মহিলা কলেজে পড়ে। বাসা ফকিরাপুলে। রাশেদেরও তাই। রাশেদ খুব গোপনীয়তার সাথে তৃষার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। কারন তৃষা বলেছে বাসায় জানলে সমস্যা হবে। তাই কখনও বলধা বা কখনও রমনা গার্ডেনে অভিসারে মাতে ওরা। দুজনে কাছাকাছি হলেই শরীরে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে দুজনার। নিভিয়েও নেয় প্রেমকাননের কোন নিভৃত বৃক্ষতলে। প্রথম প্রথম তৃষা ইতস্তত করত। এখন নিজ থেকেই এগিয়ে আসে এই ব্যাপারে।
তৃষার কলেজ পুরান ঢাকায় তাই এদিকটাতেও আসা হয়না দুজনার একসাথে। তৃষাও নিষেধ করেছে এখানে আসতে। রাশেদ আসেওনা। আজ একটা সারপ্রাইজ দেবে তৃষাকে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদ। আজ তৃষার বান্ধবীরাও জানুক না তৃষার প্রেমিক আছে যে তাকে মাঝে মাঝে উপহারও দেয়।

ঘড়িতে সময় ১১ টা।
ইকবাল- এখনই তো ছুটি হবার কথা।
রাশেদ- হ্যাঁ, গেট থেকে মেয়েরা বের হয়ে আসছে। ওইত তৃষা।
ইকবাল- এদিক ওদিক কি দেখছে? রিকশা খুঁজছে নাকি? আরে বাইকটা ওর সামনে এসে দাঁড়ালো কেন?
রাশেদ- ছেলেটাকে চেনা মনে হচ্ছে।
ইকবাল- কায়েম! কি আশ্চর্য! তৃষা ওর বাইকে হাসতে হাসতে চড়ে বসল কেন? আরে, কায়েম বাইক নিয়ে তো এদিকেই আসছে।
রাশেদ- পেছনে ফিরে দাড়া ও যেন আমাদের না দেখতে পারে।
ইকবাল আর রাশেদ পেছনে ফিরে দাঁড়ালো। রাশেদের মন চাচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে। চোখ ভিজে গেছে ওর। ইকবালের মুখেও কথা নেই। ও বুঝে গেছে সব। হাত ধরে টানছে রাশেদের। রাশেদ পিছনে ফিরে দেখল, জ্যামে কায়েমের বাইক আটকা পড়েছে। তৃষা তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মুখে ক্রুর হাসি। এতক্ষনে রাশেদ লক্ষ্য করল তৃষার পরনের থ্রিপিসটা হুবহু ওর উপহারের জন্য কেনা থ্রিপিসের মত...
পুনশ্চঃ

রাশেদ থ্রিপিসটা গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে ছোট বোনের জন্য। সাথে একটা ছোট চিরকুট পাঠিয়েছে- ‘তোর জন্য খুব দাম দিয়ে কিনলাম। তোরা ছাড়া এই পৃথিবীতে দামী আর কে আছে?

Saturday, March 1, 2014

জীর্ণ

রাস্তায় চলছিলাম একা একা।
আশেপাশে অনেকেই চলছিল,
সবার যাত্রা ছিল ত্রস্ত-ব্যাস্ত।
আমিই ছিলাম সবার চেয়ে ব্যাতিক্রম।
আড় চোখে অনেকেই আমায় দেখছিল, মজা নিচ্ছিল আমায় দেখে।
হয়ত মনে মনে ভাবছিল,
এই সঙটা উঠে এসেছে কোন যুগ থেকে?
ওরা তো জানেনা,
আমি ১৮৫৭ তে মরেছিলাম এই দেশেরই জন্য।
আমি ছিলাম নবাব, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব।
ইংরেজের হাতে দিয়েছিলাম প্রাণ।
আজ আবার দেহধারী হয়ে এসেছি এই বাংলায়।
না আসলেই ভাল হত হয়ত।
না আসলে অন্তত দেখতাম না-
বাঙ্গালীর মুখে ফিরিঙ্গির জবান।
আমি দেখতাম না-
আমার দেশের মৌলিকতার অবস্থা

আমার জীর্ণ পোশাকের চেয়েও জীর্ণ।

Wednesday, February 26, 2014

নাম না দেয়া এক গল্প

-       হ্যালো
-       বল, শুনতে পাচ্ছি।
-       তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছ আর ফিরবেনা?
-       হ্যাঁ, তোমাকে তো বলেছিই। তোমার বাবা- মা আর বোন টাকে আলাদা করে দাও আমি ফিরে আসব তোমার সংসারে।
-       বাবা- মা আর বোনটাকে যদি আলাদাই রাখি তবে সংসারে আর কেই বা থাকলো?
-       দেখ আমি এত কিছু বুঝিনা। আমি চাই তোমার আর আমার একটা আলাদা সংসার। সেখানে আমি আর আমার স্বামী অর্থাৎ তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে চাইনা। তোমার বাবা, মা আর বোনকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।
-       কেন?
-       আবার কথা বাড়াচ্ছ। আমি তো বলেছিই আমি চাই এমন একটা নির্ভেজাল সংসার যেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি। উটকো কাউকে আমি আমার সংসারে দেখতে চাইনা।
-       আমার বাবা- মা আর বোন কি উটকো লোক?
-       হ্যাঁ, অন্তত আমার দৃষ্টিতে।
-       কেন? বাবা- মা কি কখনও তোমাকে অনাদর করেছেন? বা আমার বোন কি কখনও তোমাকে অসম্মান করেছে?
-       দেখ, আমি আমার কথা বলে দিয়েছি। এখন সংসার টিকাতে চাইলে যা করার কর।
-       আমি তোমার জন্য আমার বাবা-মা-বোনকে দূরে ঠেলে দিতে পারবনা।
-       তাহলে আমিও আর ফিরবনা।
-       তবে আলাদা হয়ে যাই। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
-       আমি দেব ডিভোর্স? খেপেছ? আমার কথা না শুনলে তোমাকে ঘুঘু দেখিয়ে ছাড়ব।
-       ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
-       দেখ, আর আমার জিনিসপত্র কিছু রয়ে গেছে ওখানে। বিশেষ করে আমার জামা-কাপড় গুলো। ওগুলো পাঠিয়ে দিও।
-       তোমার ছোট ভাইকে পাঠিয়ে দিও। আমি দিয়ে দেব।
-       আমার ছোট ভাই মানে। রবির নাম বলতে কি তোমার লজ্জা লাগে? স্ত্রীর ছোট ভাই কি তোমার ছোট ভাই না। ভাববা কিভাবে? নীচু জাতের লোক তোমরা। তোমাদের মধ্যে কি এসব আছে?
-       দেখ সাথী, অনেক কথাই বল আমি নির্বিবাদে শুনে যাই। হজম করে যাই। তোমার কি মনে হয়না মানুষের একটা সহ্য সীমা আছে?
-       কেন কি করবা তুমি? আমার গায়ে হাত তুলবা?
-       আসলে সমাজে সামাজিকতার ভয়ে অনেক কিছুই করতে পারিনা। বাদ দাও। আমি রাখছি। কি করব তা পরে জানাচ্ছি।
-       হুম, জানাইও। আর একটা কথা শুনে রেখ রফিক সাহেব। আমি সাথী কিন্তু সহজে ছেড়ে দেবার পাত্রী নই।  খুব শীঘ্রই তোমার বাবা- মাকে আর ছোট বোনটাকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।
-       কি করব তা জানবা শীঘ্রই। অপেক্ষা কর আর কিছু মুহুর্ত।
ফোন কেটে দিল রফিক। একদিকে বাবা- মা- বোন আর অন্যদিকে স্ত্রী। উভয় সংকটে এখন সে। স্ত্রী চায় আলাদা সংসার যেখানে রফিকের বাবা- মা- বোনের কোন স্থান নেই। রফিকের বাবা- মাও বিষয়টা জেনে গ্রামে চলে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার আগে রফিক সময় চেয়েছে বাবা মায়ের কাছে একটা দিন যদি স্ত্রী সাথীকে মানানো যায়। কিন্তু সাথী অনড় তার অবস্থানে। এখন কি করবে সে? ভাবতে ভাবতে চিন্তার জগতে প্রবেশ করে রফিক।

১.
ফ্ল্যাশব্যাক
৫ বছর আগে
অনার্স পাশ করা সদ্য গ্রাজুয়েট ছাত্র রফিক। সুঠাম দেহধারী, মিষ্টভাষী এক যুবক। চাকরীর সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে এদিক সেদিক। আত্মীয়- স্বজনদের কাছ থেকে কোন সাহায্য না নিয়ে এতদুর এসেছে শুধুমাত্র নিজের যোগ্যতায়। আর চাকরীর বাজার এখন এতটা খারাপ মামা- চাচা ছাড়া কোন ব্যবস্থা হয়না। তবু আশায় আছে রফিক নিজ যোগ্যতায় যদি কোন কাজের ব্যবস্থা হয়। আপাতত, টিউশনি করে ঢাকায় নিজে চলছে সাথে মাঝে মাঝে মান্না- সালওয়া পাঠিয়ে গ্রামে বাবা- মা আর বোনটাকে বাচিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রাম করছে সে। টিউশনি থেকে সামান্য কিছু আয় হয় তবে হিমশিম খাচ্ছে দুই দিন পর পর চাকরীর জন্য ব্যাংক ড্রাফট করতে হয় বলে।

জীবনের বাসন্তী একটা দিক থাকে প্রতিটা যুবকেরই। বিশেষত এই বয়সে। রফিকেরও আছে। সেও ভালবাসে এক নারীকে। যাকে কল্পনা করে নিজের প্রেমিকা হিসেবে। কিন্তু দারিদ্রের কঠিন বাস্তবতায় অনেক না বলা আবদার বা ইচ্ছের মত এটাও মনের মাঝেই কুলুপ এটে রয়েছে। কখনও মুখ ফুটে আর বলা হয়নি সাথীকে। সাথীর যে অজানা বিষয়টা তা না। একই সাথে পড়ত ওরা। রফিক আর সাথী ভাল বন্ধু ছিল। রফিক হাজারো ব্যস্ততায় সময় গুজরান করত তা জানত সাথী। তাই সে রফিক কে পড়াশোনা বা অন্যান্য যেকোন ব্যাপারে সহায়তা করত অনেক বেশি। অন্য যে কারো চেয়েই বেশি। রফিক এখনও বুঝে উঠতে পারেনা সাথী কেন তাকে এতটা সাহায্য করে। একি ভালবাসা? না দয়া? নাকি শুধুই বন্ধুত্ব? মাঝে মাঝে যখন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা রফিক তখন দুইটা র‍্যালী সিগারেট টেনে বুকটাকে হাল্কা করে আর অপেক্ষা করে ভবিষ্যতের।

সাথী বড়লোকের মেয়ে। বন্ধু বানানো আর তাকে ভালবাসায় বাধ্য করে একটা আল্টিমেট শক দেওয়া তার কাছে নেশার মত। স্কুল জীবন থেকে সে এ কাজটা করে আসছে অত্যন্ত সফলতার সাথে। আজ পর্যন্ত কারো কাছে ধরা খায়নি সে। তাই ভিতরে ভিতরে একটা গর্ব কাজ করে তার। সে যে অথৈ জলের মাছ তা ভেবে সে নিজে তৃপ্ত হয়। গত তিন বছর যাবত রফিকের বন্ধু হয়ে আছে। রফিকের জন্য সে অন্তঃপ্রাণ। এই তিন বছর পর্যন্ত আসা লাগতোনা যদি রফিক একটু ঐ টাইপের ছেলে হত। এই ছেলেটা কেমন বোকা ধরনের। কথা বলে কম। শুধুমাত্র চোখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে যায়। মাঝে মাঝে চোখে প্রেম প্রেম একটা দৃষ্টি দেখা যায় কিন্রু তা স্বল্প সময়ের জন্য। সাথীও বুঝতে পারেনা আদতে রফিক নামের এই ছোট মাছটা তার জালে আটকেছে কিনা! আরো ঘনিষ্ট হবার অভিনয় করতে হবে ভাবে সাথী আর নতুন নাটকের প্ল্যান করতে থাকে মনে মনে।



Wednesday, February 19, 2014

জীবনবন্দনা

আমি মৃত্যুর যত কাছে যাবার চেষ্টা করি,
জীবন ততই আপন হবার চেষ্টা করে আমার।

যত হিংসা, যত দ্বেষ
প্ররোচনা দেয় আমায় পৌঁছতে মৃত্যুর দুয়ার।
তত ভালবাসা, তত শ্রদ্ধা,
মর্ম বাড়ায়, মূল্য বাড়ায় এই জীবনটার।

জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের প্রান্তে হৃদয়টাকে
চাপা দিয়ে রেখেছে ধ্বংসপাহাড়।
তবু মায়ার ছলনায়
স্নেহের জপ করে যাই জীবনবন্দনার।