রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ বাহাদুর শাহ
পার্কের সামনে। সাথে ওর বন্ধু ইকবাল। বারবার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যাচ্ছে রাশেদের। তৃষার আসার কথা তাই এ
অপেক্ষা। একটা নতুন থ্রিপিস কিনে এনেছে আজ তৃষার জন্য। চার মাস হতে চলল প্রেমের
বয়স কিন্তু তৃষাকে কখনও কিছু কিনে দেওয়া হয়নি। আজ তৃষার জন্মদিন। আজ তো কিছু দিতেই
হয়। এই রকম একটা থ্রিপিসের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিল তৃষা। সেদিন দুজনে গিয়েছিল বলধা গার্ডেনে। গার্ডেন থেকে বেরিয়েই কয়েকটা শোরুম। একটা শোরুমে ঝুলছিল
পোশাকটা। রাশেদ লক্ষ্য করেছিল ব্যাপারটা। ইচ্ছে হচ্ছিল তখনই কিনে উপহার দিতে
থ্রিপিস টা তৃষাকে। কিন্তু টিউশনি করে চলা রাশেদের মাসের অর্ধেকই চলে আধাবেলা
খেয়ে। তাই আর সেদিন কেনা হয়নি।
নতুন টিউশনি একটা জোগাড় হয়েছিল গতমাসে বহু
কষ্টে। বেতন চার হাজার টাকা। সারা মাস পড়িয়ে গতকালই বেতন পেয়েছে রাশেদ। সেই বেতন
থেকে পঁয়ত্রিশশো টাকা দিয়ে থ্রি পিসটা কিনেছে সে। তৃষা মহানগর মহিলা কলেজে পড়ে।
বাসা ফকিরাপুলে। রাশেদেরও তাই। রাশেদ খুব গোপনীয়তার সাথে তৃষার সাথে সম্পর্ক রক্ষা
করে চলে। কারন তৃষা বলেছে বাসায় জানলে সমস্যা হবে। তাই কখনও বলধা বা কখনও রমনা
গার্ডেনে অভিসারে মাতে ওরা। দুজনে কাছাকাছি হলেই শরীরে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে
দুজনার। নিভিয়েও নেয় প্রেমকাননের কোন নিভৃত বৃক্ষতলে। প্রথম প্রথম তৃষা ইতস্তত
করত। এখন নিজ থেকেই এগিয়ে আসে এই ব্যাপারে।
তৃষার কলেজ পুরান ঢাকায় তাই এদিকটাতেও আসা
হয়না দুজনার একসাথে। তৃষাও নিষেধ করেছে এখানে আসতে। রাশেদ আসেওনা। আজ একটা
সারপ্রাইজ দেবে তৃষাকে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদ। আজ তৃষার বান্ধবীরাও জানুক
না তৃষার প্রেমিক আছে যে তাকে মাঝে মাঝে উপহারও দেয়।
ঘড়িতে সময় ১১ টা।
ইকবাল- এখনই
তো ছুটি হবার কথা।
রাশেদ- হ্যাঁ, গেট থেকে মেয়েরা বের হয়ে
আসছে। ওইত তৃষা।
ইকবাল- এদিক ওদিক কি দেখছে? রিকশা খুঁজছে
নাকি? আরে বাইকটা ওর সামনে এসে দাঁড়ালো কেন?
রাশেদ- ছেলেটাকে চেনা মনে হচ্ছে।
ইকবাল- কায়েম! কি আশ্চর্য! তৃষা ওর বাইকে
হাসতে হাসতে চড়ে বসল কেন? আরে, কায়েম বাইক নিয়ে তো এদিকেই আসছে।
রাশেদ- পেছনে ফিরে দাড়া ও যেন আমাদের না
দেখতে পারে।
ইকবাল আর রাশেদ পেছনে ফিরে দাঁড়ালো। রাশেদের
মন চাচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে। চোখ ভিজে গেছে ওর। ইকবালের মুখেও কথা নেই। ও বুঝে
গেছে সব। হাত ধরে টানছে রাশেদের। রাশেদ পিছনে ফিরে দেখল, জ্যামে কায়েমের বাইক আটকা
পড়েছে। তৃষা তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মুখে ক্রুর হাসি। এতক্ষনে রাশেদ লক্ষ্য করল তৃষার
পরনের থ্রিপিসটা হুবহু ওর উপহারের জন্য কেনা থ্রিপিসের মত...
পুনশ্চঃ
রাশেদ থ্রিপিসটা গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে ছোট
বোনের জন্য। সাথে একটা ছোট চিরকুট পাঠিয়েছে- ‘তোর জন্য খুব দাম দিয়ে কিনলাম।
তোরা ছাড়া এই পৃথিবীতে দামী আর কে আছে?’
No comments:
Post a Comment