Friday, September 20, 2013

মিথ্যা

তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে করা
কোন প্রতিজ্ঞা কখনও ভঙ্গ করিনি...
মিথ্যা বলেছি একটু।
একটি প্রতিজ্ঞাই শুধু রাখিনি।
তা ছিল,
তোমায় কখনও ছাড়বনা বলেছিলাম আমি।

তোমার সুখের কথা ভেবে কখনও
নিজের ছোট হওয়াকে মুল্য দিইনি...
মিথ্যা বলেছি একটু।
একবারই শুধু সহ্য করিনি।
তখনই,
যখন তোমাকে ভালবেসে বন্ধুত্বটুকুও পাইনি।

তোমার হাসি থাকুক বজায় এজন্য
নিজেকে বদলাতেও দ্বিধা করিনি...
সত্যই বলছি সবই।
একদম বদলে গেছি আমি।
সম্পূর্ণ,

বদলে গেছি সম্পূর্ণ, নিজেও যা ভাবিনি।

Saturday, September 14, 2013

রহস্য



নারী বড় রহস্যময়ী।
যেন রহস্যের এক খোলা বই,
যে বইয়ের নেই কোন প্রারম্ভিকা
নেই কোন সমাপ্তি।

কখনও মনে হয় মায়ার বাঁধনে
এই বই হয় রপ্ত।
কখনও মায়ায় বই হয় অনুক্ত।
তবে কিসে হয় ভাব প্রাপ্তি?

কখনও অর্চনা, কখনও বঞ্চনা
কখনও মনোযোগ, কখনও অনুযোগ...
কখন যে কি আসে এ বইয়ে
বুঝিনা!!! এ যেন মন্ত্রগুপ্তি।


Thursday, September 12, 2013

ট্যুর ডি সিলেট

সিলেট ট্যুরের আগে কত অনিশ্চয়তা ছিল!!! যাওয়া হয় কি হয় না। শেষ পর্যন্ত ফরহাদ সরকারের ৭ ঘণ্টা টানা যুদ্ধের কারনে একটা মাইক্রো বাস ভাড়া করা গেল। ১২ জন আগেই ঠিক করা ছিলাম। লাইন আপঃ শাওন, ফরহাদ, মিতুল, কবি শাকিল, মনির, অনি, সুমন, রোমেল, শাকিল, অনিক, নুরু,এবং আকাশ। আগের রাতে আমার বাসায় অনি এসে ছিল। আগের সন্ধ্যায় ফরহাদের বড় ভাই ১৫ খানা সাদা গেঞ্জি দিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের যা ছিল ট্যুর এর স্পেশাল। ৩০ অগস্ট সকাল বেলা দোলাইপার এবং ততসংলগ্ন এলাকার বাচ্চারা সবাই দোলাইপাড় বাস স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ড আপ করলাম যে ছবিখানা ইতিমধ্যে ফেসবুকেরওয়াল আলোকিত করেছে…
সকাল ৬ টায় যখন মাইক্রবাস এল বাচ্চারা সবাই হাঁসের বাচ্চার মত কলকল করে উঠে পড়ল মাইক্রবাসে। তবে বাসে উঠে সবাই একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হল আজ কারো কারো মাঞ্জায় কিঞ্চিত ব্যাথা পাইবার সমুহ সম্ভাবনা আছে। দোলাইরপার হতে রওনা আরম্ভ করতে করতেই আরও ১৫ মিনিটের মত লাগলো। মিতুল, নুরী আল মালিকি আর অনিক খান কে তুললাম মতিঝীল আর এর আশে পাশের অঞ্চল থেকে। বাসের মধ্যে দুর্দান্ত মজা করছিলাম। ছেলেরা আজ পর্যন্ত যে সব নারীর সাথে মিশেছে তাদের নাম নিয়ে সমানে স্লোগান হচ্ছিল। সবারটা মোটামুটি সত্যই বলা যায় শুধু আমার সাথে যার নাম উচ্চারন হচ্ছিল তা ফ্লো তে এসে যাচ্ছিল তাতে সত্যতার লেশমাত্র ছিলনা। তবু এঞ্জয় করছিলাম ব্যাপারটা। তাও তো আমার নাম আসছে(!) ড্রাইভার প্রথমেই একটা চমক দিলেন হাতিরঝীলের রাস্তায় মিষ্টি বৃষ্টির মধ্যে জোরসে গাড়ি টানিয়া। বৃষ্টি আমাদের পিছনে লেগেছিল ঢাকায় থাকা অবস্থায়ই। সিলেট পৌঁছানর আগ পর্যন্ত আমাদের বৃষ্টির সাথে লুকোচুরি খেলে যেতে হয়েছে। হাউ রোমান্টিক। উত্তরা গিয়ে কবি শাকিলের বাসার সামনে থেকে কবি শাকিল কে রিসিভ করা হল। মনির উত্তরা বাস থামান মাত্র গাড়ি থেকে নেমে মুত্র বিসর্জনে যাওয়ায় কিঞ্চিত একটা সম্ভাবনা হয়েছিল যে বিরিশিরি ট্যুরে ফাতিনের পাওয়া নামটা বোধ হয় মনিরের নামের সাথে যুক্ত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত মুতিং অফিসার হিসেবে সে সুনাম অর্জন করে। উত্তরা থেকে আরম্ভ হল আমাদের ট্যুরের প্রধান যাত্রা। দুক্ষজনক হলেও সত্য প্রথমেই গাড়ির ফাঁকা সিটটা শাকিল মাহমুদের ভাগেই পড়েছিল। ড্রাইভার ফারুক ভাইও রসিক লোক অসাধারন মজা করেছেন আমাদের সাথে।

Wednesday, September 11, 2013

ইলেক্ট্রনিক্স আর আব্বাস

আব্বাসের ইলেক্ট্রনিক্সের পন্যভাগ্য খুব একটা সুবিধার না। টেলিভিশন থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল যাই কিনুক না কেন পন্যে কোন না কোন অসুবিধা থাকবেই। তবে বাবার সিন্দুক আর ব্যাঙ্ক ভর্তি সাদা আর কালো দুই রকমের অঢেল টাকা থাকায় সে ইলেক্ট্রনিক্স পন্য কিনতে কখনও কসুর করেনা। এমনও দেখা গেছে সকালে আব্বাস একটা বাইক নিয়ে বাইরে বের হয়ে আরেকটা বাইক নিয়ে রাতে ঘরে ফিরেছে। অর্থাৎ, পুরনো বাইক বিক্রি করে তার সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে নতুন বাইক। এবার একটু পেছনে ফিরে আব্বাসের ইতিহাস দেখি। অবশ্যই তা ইলেক্ট্রনিক্স পন্য সংক্রান্ত।
বাজারে প্রথম ক্যামেরা সহ হ্যান্ডসেট এসেছে। তখন স্কুলে পড়ে আব্বাসক্লাসের কারো কাছে তখন মোবাইল নেই শুধু মকবুল বাদে। মকবুলের বাবা আব্বাসের বাবার চাইতেও বড় ধড়িবাজ। টাকার কুমীর। তাই ছেলের অন্যায় আব্দারেও না করেননা। মকবুল যখন মোবাইল নিয়ে হাটে, তখন আব্বাসের ফাটে(!!)। আব্বাসের চিন্তাভাবনায় শুধু মকবুল কে পেছনে ফেলার চিন্তা। টাকার অভাব নেই দুইজনের ই। বন্ধুরা আব্বাস কে বুদ্ধি দিল ক্যামেরা ফোন কিনলে মকবুল কে টপকান যাবে।
যেই বুদ্ধি পেল আব্বাস, খিচ খেয়ে সে বাপের লুঙ্গির কোনা যে ধরল তা আর ছারলনা। তার এক দাবি, ‘মোরে ক্যামেরা মোবাইল কিন্ন্যা দাও’। আব্বাসের বাবাও শেষ মেশ বাধ্য হল মেনে নিতে কারন ছেলে যেভাবে লুঙ্গির কোনা ধরেছে তাতে লুঙ্গির কোঁচ যে কোন মুহূর্তে খুলে গিয়ে লজ্জাকর পরিস্থিতির অবতারনা হতে পারে। এমনিতেই আব্বাসের মা সারারাত ঘ্যান ঘ্যান করে ওই (!) জিনিসের ব্যাপারে। এবার সমাজের সামনে বের হয়ে পড়লে ইজ্জতের অবশিষ্ট কিছু থাকবেনা।
আব্বাসের হাতে হাজার সাতেক টাকা ধরিয়ে দিলেন হাসেম সাহেব। আব্বাস ও তার তিনরঙা জিন্সের প্যান্ট আর কটকটে হলুদ শার্ট গায়ে চাপিয়ে এবং মাথায় পোয়া খানেক শরিশার তেল মাখিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে চলল মোবাইল ফোন কিনতে। সঙ্গে ল্যাংটা কালের বন্ধু শাকিল। রাস্তায় যেতে যেতে দুই বন্ধু বিশাল আলাপচারিতা করল মোবাইল সম্পর্কে। কথা শুনে মনে হতে পারে তারা সেলুলার বিশেষজ্ঞ,
আব্বাসঃ বোজঝ মনু, মুই ইরাম মোবাইল কিনমু মকবুইল্যা টাস্কি খাঁইয়ে থাকবে তিনদিন। ওর গাল দিইয়ে আর কথা বাইরাবেনা।
শাকিলঃ হেইয়ে তো হইবেই। তুই মোর বন্ধু আর তোরে নি ওই মকবুইল্ল্যা হারায় দেবে। এইয়া হইতে পারে। চল আইজকে, ক্যামেরা মোবাইল দিইয়ে ওর চক্ষের সামনে ছবি তুলমু আর দাঁত ক্যালামু। হে হে হে।
কাঃ হেইয়ে যা কইছো শাকিল্যা। তুই মর ছবি তুলবা আর মুই তোর। আর মর মোবাইল দিইয়ে এতো জোরে জোরে কথা বাইরাইবে যে মকবুইল্ল্যা আঁক কইরা পইড়া থাকবে।
শাঃ হেইয়া তো হইবেই...
দুই বন্ধু মোবাইলের দোকানে পৌঁছে মোবাইল দেখে দেখে চমৎকৃত হয়ে গেল। মাত্র চার মডেলের হ্যান্ডসেট থেকে ভালটা বাছতেই দুজন ঘণ্টা পার করে দিল। যার দরুন দোকানদারও খিপ্ত হয়ে গেল তাদের উপর। অনেক বেছে একটা হ্যান্ডসেট কিনল সংযোগ সহ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায়। বাড়িতে ফেরার পথে দুই বন্ধুর দৌড় ঝাঁপ দেখে কে। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল দুজনার। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল দুইজন। পরের দিন সকালের সুখস্বপ্নে বিভোর দুইজনে।
সকালে, ক্লাসে পকেট থেকে মোবাইল বের করা মাত্র হুড়োহুড়ি পড়ে গেল সবার মধ্যে। সবাই চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মোবাইল দিয়ে ডাটছে আব্বাস কথা বলছে তার বড় ভাইয়ের সাথে যে ঢাকায় থাকে। মাঝে মাঝে সবার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে আব্বাসএকজন কে দেখে তার চেস্ট বিকেম ব্রেস্ট। লিমা, ক্লাসের সেরা সুন্দরী। আজ পর্যন্ত সেই শুধু লিমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছে আর লিমা ভাব নিয়েছে। আজ লিমা দাড়িয়ে তাকে দেখছে একথা ভেবেই হয়তো তার বুকের সাইজ ময়ুরীর সাইজ কেও ছাড়িয়ে গেল। কথা এক সময় শেষ হল। লিমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেল আব্বাসএরপর সবার উপরে চোখ বুলিয়ে ঘোষণার মত বলল,
‘মুই একখান ক্যামেরা মোবাইল কিঞ্ছি হেইয়া তো তোরা দেখছ। মুই এহনও কারো ছবি তুলিনাই। মুই প্রথম ছবি তুলমু লিমার। কারন মুই লিমারে ভাল পাই। ইয়েস আই ডু’।
এই ঘোষণা শুনে লিমার সাদা গাল একেবারে লাল হয়ে গেল। আব্বাস ছবি তুলার জন্য ক্যামেরা তার দিকে তাক করা মাত্র সে রমনীসুলভ ভাবে দাড়িয়ে গেল পোজ নিয়ে। অনেকক্ষণ সে দাঁড়িয়ে রইল ওইভাবে আর আব্বাস ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলতে লাগলো। একসময় লিমা কিঞ্চিত টেনশনে পড়ে গেল যখন দেখল আব্বাসের ভুরু কুঞ্চিত হয়ে আছে। লিমা জিজ্ঞাসা করল ‘কি হয়েছে?’। আব্বাস লিমার জবাব না দিয়ে জোরে বলে উঠল, ‘শাকিল্ল্যা রে, চুদানির পোলায় তো মোরে ঠকাইছে। মোর ক্যামেরায় তো ছবি ওঠেনা’। একথা বলে আব্বাস যে দরজা দিয়ে স্কুল ত্যাগ করল আর কোন দিন স্কুলে ফিরলনা।

ক্যামেরা ফোন আর ফেরত দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে সে আরেকটা ক্যামেরা ফোন কিনল তবে ততদিনে লিমা মকবুলের ক্যামেরা আর মনের ফ্রেমে আটকে গেছে।