Wednesday, September 11, 2013

ইলেক্ট্রনিক্স আর আব্বাস

আব্বাসের ইলেক্ট্রনিক্সের পন্যভাগ্য খুব একটা সুবিধার না। টেলিভিশন থেকে শুরু করে মোটর সাইকেল যাই কিনুক না কেন পন্যে কোন না কোন অসুবিধা থাকবেই। তবে বাবার সিন্দুক আর ব্যাঙ্ক ভর্তি সাদা আর কালো দুই রকমের অঢেল টাকা থাকায় সে ইলেক্ট্রনিক্স পন্য কিনতে কখনও কসুর করেনা। এমনও দেখা গেছে সকালে আব্বাস একটা বাইক নিয়ে বাইরে বের হয়ে আরেকটা বাইক নিয়ে রাতে ঘরে ফিরেছে। অর্থাৎ, পুরনো বাইক বিক্রি করে তার সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে নতুন বাইক। এবার একটু পেছনে ফিরে আব্বাসের ইতিহাস দেখি। অবশ্যই তা ইলেক্ট্রনিক্স পন্য সংক্রান্ত।
বাজারে প্রথম ক্যামেরা সহ হ্যান্ডসেট এসেছে। তখন স্কুলে পড়ে আব্বাসক্লাসের কারো কাছে তখন মোবাইল নেই শুধু মকবুল বাদে। মকবুলের বাবা আব্বাসের বাবার চাইতেও বড় ধড়িবাজ। টাকার কুমীর। তাই ছেলের অন্যায় আব্দারেও না করেননা। মকবুল যখন মোবাইল নিয়ে হাটে, তখন আব্বাসের ফাটে(!!)। আব্বাসের চিন্তাভাবনায় শুধু মকবুল কে পেছনে ফেলার চিন্তা। টাকার অভাব নেই দুইজনের ই। বন্ধুরা আব্বাস কে বুদ্ধি দিল ক্যামেরা ফোন কিনলে মকবুল কে টপকান যাবে।
যেই বুদ্ধি পেল আব্বাস, খিচ খেয়ে সে বাপের লুঙ্গির কোনা যে ধরল তা আর ছারলনা। তার এক দাবি, ‘মোরে ক্যামেরা মোবাইল কিন্ন্যা দাও’। আব্বাসের বাবাও শেষ মেশ বাধ্য হল মেনে নিতে কারন ছেলে যেভাবে লুঙ্গির কোনা ধরেছে তাতে লুঙ্গির কোঁচ যে কোন মুহূর্তে খুলে গিয়ে লজ্জাকর পরিস্থিতির অবতারনা হতে পারে। এমনিতেই আব্বাসের মা সারারাত ঘ্যান ঘ্যান করে ওই (!) জিনিসের ব্যাপারে। এবার সমাজের সামনে বের হয়ে পড়লে ইজ্জতের অবশিষ্ট কিছু থাকবেনা।
আব্বাসের হাতে হাজার সাতেক টাকা ধরিয়ে দিলেন হাসেম সাহেব। আব্বাস ও তার তিনরঙা জিন্সের প্যান্ট আর কটকটে হলুদ শার্ট গায়ে চাপিয়ে এবং মাথায় পোয়া খানেক শরিশার তেল মাখিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে চলল মোবাইল ফোন কিনতে। সঙ্গে ল্যাংটা কালের বন্ধু শাকিল। রাস্তায় যেতে যেতে দুই বন্ধু বিশাল আলাপচারিতা করল মোবাইল সম্পর্কে। কথা শুনে মনে হতে পারে তারা সেলুলার বিশেষজ্ঞ,
আব্বাসঃ বোজঝ মনু, মুই ইরাম মোবাইল কিনমু মকবুইল্যা টাস্কি খাঁইয়ে থাকবে তিনদিন। ওর গাল দিইয়ে আর কথা বাইরাবেনা।
শাকিলঃ হেইয়ে তো হইবেই। তুই মোর বন্ধু আর তোরে নি ওই মকবুইল্ল্যা হারায় দেবে। এইয়া হইতে পারে। চল আইজকে, ক্যামেরা মোবাইল দিইয়ে ওর চক্ষের সামনে ছবি তুলমু আর দাঁত ক্যালামু। হে হে হে।
কাঃ হেইয়ে যা কইছো শাকিল্যা। তুই মর ছবি তুলবা আর মুই তোর। আর মর মোবাইল দিইয়ে এতো জোরে জোরে কথা বাইরাইবে যে মকবুইল্ল্যা আঁক কইরা পইড়া থাকবে।
শাঃ হেইয়া তো হইবেই...
দুই বন্ধু মোবাইলের দোকানে পৌঁছে মোবাইল দেখে দেখে চমৎকৃত হয়ে গেল। মাত্র চার মডেলের হ্যান্ডসেট থেকে ভালটা বাছতেই দুজন ঘণ্টা পার করে দিল। যার দরুন দোকানদারও খিপ্ত হয়ে গেল তাদের উপর। অনেক বেছে একটা হ্যান্ডসেট কিনল সংযোগ সহ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায়। বাড়িতে ফেরার পথে দুই বন্ধুর দৌড় ঝাঁপ দেখে কে। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল দুজনার। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল দুইজন। পরের দিন সকালের সুখস্বপ্নে বিভোর দুইজনে।
সকালে, ক্লাসে পকেট থেকে মোবাইল বের করা মাত্র হুড়োহুড়ি পড়ে গেল সবার মধ্যে। সবাই চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর মোবাইল দিয়ে ডাটছে আব্বাস কথা বলছে তার বড় ভাইয়ের সাথে যে ঢাকায় থাকে। মাঝে মাঝে সবার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে আব্বাসএকজন কে দেখে তার চেস্ট বিকেম ব্রেস্ট। লিমা, ক্লাসের সেরা সুন্দরী। আজ পর্যন্ত সেই শুধু লিমার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছে আর লিমা ভাব নিয়েছে। আজ লিমা দাড়িয়ে তাকে দেখছে একথা ভেবেই হয়তো তার বুকের সাইজ ময়ুরীর সাইজ কেও ছাড়িয়ে গেল। কথা এক সময় শেষ হল। লিমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেল আব্বাসএরপর সবার উপরে চোখ বুলিয়ে ঘোষণার মত বলল,
‘মুই একখান ক্যামেরা মোবাইল কিঞ্ছি হেইয়া তো তোরা দেখছ। মুই এহনও কারো ছবি তুলিনাই। মুই প্রথম ছবি তুলমু লিমার। কারন মুই লিমারে ভাল পাই। ইয়েস আই ডু’।
এই ঘোষণা শুনে লিমার সাদা গাল একেবারে লাল হয়ে গেল। আব্বাস ছবি তুলার জন্য ক্যামেরা তার দিকে তাক করা মাত্র সে রমনীসুলভ ভাবে দাড়িয়ে গেল পোজ নিয়ে। অনেকক্ষণ সে দাঁড়িয়ে রইল ওইভাবে আর আব্বাস ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলতে লাগলো। একসময় লিমা কিঞ্চিত টেনশনে পড়ে গেল যখন দেখল আব্বাসের ভুরু কুঞ্চিত হয়ে আছে। লিমা জিজ্ঞাসা করল ‘কি হয়েছে?’। আব্বাস লিমার জবাব না দিয়ে জোরে বলে উঠল, ‘শাকিল্ল্যা রে, চুদানির পোলায় তো মোরে ঠকাইছে। মোর ক্যামেরায় তো ছবি ওঠেনা’। একথা বলে আব্বাস যে দরজা দিয়ে স্কুল ত্যাগ করল আর কোন দিন স্কুলে ফিরলনা।

ক্যামেরা ফোন আর ফেরত দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে সে আরেকটা ক্যামেরা ফোন কিনল তবে ততদিনে লিমা মকবুলের ক্যামেরা আর মনের ফ্রেমে আটকে গেছে। 

No comments: