Monday, July 31, 2017

অন্ত

একটা অন্তের অপেক্ষায় প্রহর কেটে চলছে,
চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে।
পালানো সমাধান নয়, তবে অসম লড়াইয়ে টিকে থাকাটা দুষ্কর।
প্রকৃতির নিয়মে কেটে যায় সময়
পরাজয়ের ক্ষত হয় গভীর থেকে গভীরতর।
আকাশের চাঁদের দিকে ধেয়ে যাওয়া সিগারেটের ধোঁয়া
আর বারান্দার মেঝেতে পড়ে থাকা ছাইয়ে
কিছুটা বেদনার অংশ হয়ত মিশে থাকে,
তবে, ভেতরের অঙ্গার হয়ে পড়া হৃদয়টার হাল
বাইরে থেকে বোঝা যায়না।
জন্মের মত আজন্ম পাপ টেনে নিয়ে বেড়ায়, ঊন-মানুষেরা,
হাস্ব্যোজ্জ্বল মুখোশের আড়ালে- আমাদের চারপাশে।

Saturday, July 29, 2017

ভালবাসি

ভাষা হারিয়ে ফেলি তোমার চোখের দিকে তাকালে,
অবাক হয়ে স্থির হয়ে যাই, শব্দহীন।
এ কারনে মূক ভেবোনা যেন!
চোখে চোখ রেখে উপলব্ধি কর-
শুনতে পাবে অব্যক্ত সব কথা।

হাটুজলে ডুবে যাওয়া আমি, সাগরে নামব কী করে?
সেখানে তোমার চোখের মায়া অতলান্তিকের চেয়ে গভীর,
হারিয়ে যাওয়াটা কী অস্বাভাবিক, বলো।

বলতে না পারা 'ভালবাসি' কথাটা বুঝে নিও,
সবাই সবকিছু মুখ ফুটে বলতে পারেনা।
না হয় তুমিও ওই দৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দিও-
অপেক্ষায় থাকাটা হয়ত ভুল হবেনা।

Wednesday, July 26, 2017

চ্যাতা সুকুমার

ঢাকার উত্তরের এ দিকটা আশির দশকের পর থেকে পুনঃপুনঃ উন্নয়নে মেগাসিটিতে রুপ নিয়েছে। নগর জীবন ভাল না লাগলেও বেঁচে থাকার তাড়নায় জীবিকার তাগিদে নিঃসঙ্গ এই আমি উত্তর ঢাকাকেই বেছে নিয়েছি নিজের আপাত আবাস হিসেবে।

যেখানটায় আমি থাকি সেখানে উন্নয়নের ছোয়া পুরোপুরি লাগেনি। বাড়ির ছাদে ছোট এক চিলেকোঠায় আমার নিবাস। বাড়িতে ঢোকার সড়কটাও বেশ সরু। তেতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে দক্ষিনে মুখ করে বাঁদিকে তাকালে দেখা যায় উঁচু উঁচু দালানের সারি আর ডানদিকে টিনশেড একতলা দোতলা বাড়ির মেলা। যে কাজ করি তা মন্দ নয়, সে তুলনায় উপার্জন নেহায়েতই চলার মত। একা মানুষ তাই এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করা হয়নি কখনো। মধ্যবিত্ত মানসিকতার আমি ওই উঁচু উঁচু দালানের সভ্য লোকেদের সাথে মিশে ঠিক প্রশান্তি পাইনা যা পাই ওই টিনশেডে থাকা লোকগুলোর সাথে মিশে।

দিনের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে চলে যাই রাস্তার মাথায় এক টং দোকানে। সারি দেয়া ৮ টা দোকান সেখানে। বহু মানুষের আনাগোনা। কেউ কেউ বসে হো হো করে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ কেউ একটা গোল্ডলীফ আর চায়ের স্বর্গীয় স্বাদ নিয়েই বিদেয় হচ্ছে আপন গন্তব্যে। আমি যার দোকানে বসি তার নাম সুকুমার। দোকানের ভেতরের দিকে বাশের এক চাতালের ব্যবস্থা করেছে সে, তার স্পেশাল কিছু খদ্দেরের জন্য। তার মধ্যে আমিও একজন। স্পেশাল দেখেই গঞ্জিকা বা বাবা সেবনের আখড়া ভাববার কোন কারন নেই, কারন সেখানে প্রবেশাধিকার কিছু উচ্চমার্গীয় চিন্তাধারার লোকেদের। যাদের সিলেক্ট করেছে সুকুমার নিজে। আমি কীভাবে সেই লোকেদের মধ্যে সুকুমারের চোখে সিলেক্ট হলাম তা আজ অব্দি এক রহস্য। হয়তবা সেই স্পেশাল ক্লাবে শ্রবণ করবার মত একজনের প্রয়োজন ছিলো, তাই আমার সিলেকশন!

স্থানীয় সবার কাছে সুকুমারের একটা বিশেষ নাম আছে। চ্যাতা সুকুমার। এককালে সুকুমার মাস্তান টাইপের ছিলো। কথায় কথায় চেতে যাওয়া ছিল তার বিশেষত্ব। র‍্যাব আসার পরে তাকে একবার ধরে নিয়ে গেল। সুকুমার ফিরলো ছমাস পরে। দেখেই বোঝা গিয়েছিল সুনামি বয়ে গিয়েছিল ওই ছ'মাস ওর উপর দিয়ে। আসার পর থেকে সুকুমার হিমালয় পর্বতের মত ঠান্ডা হয়ে গেলো, কিন্তু সে নাম তার পিছু ছাড়লোনা। সে এই দোকান দিলো। এখন সচরাচর সে আর 'চ্যাতেনা'।

আড্ডার সভ্য আমি এবং সুকুমার ছাড়াও আরো কয়েকজন আছে। যেমন ইসাহাক সাহেব (বড় বড় ধরা খাওয়া আমাদের চেয়ে বয়েসে বড় একজন ব্যবসায়ী), ইফতেখার (নারীবিদ্বেষী দার্শনিক), মকবুল আহমদ (দর্শনে মাস্টার্স করা প্রাণ কোম্পানীর সেলসম্যান), সাইফ (১৬ পারা হাফেজ সন্দেহবাদী) আর শ্রীকান্ত (কলেজে পড়ুয়া এক উড়ুটে ভাবুক প্রকৃতির যুবক)।

আড্ডায় প্রতিদিন একেকজন একেক বিষয়ে বক্তব্য দেন (আমি বাদে) আর বাকিরা আলোচনা করে। আজ যেমন সুকুমারের বক্তব্যের দিন। সব সদস্যই আজ হাজির। সুকুমার তার কর্মচারীর হাতে দোকানের দায়িত্ব তুলে দিয়ে এলো দোকানের পেছনে। নির্ধারিত আসনে বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে তাকালো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ভবনগুলোর দিকে। এটাই তার গল্প বা বক্তব্য শুরুর স্টাইল! সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি তার বক্তব্যের শুরুর জন্য,

- বুঝলেন ভাইয়েরা, মাঝে মাঝে আজিব আজিব স্বপ্ন দেখি।

শ্রীকান্ত নির্লিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো 'কেমন আজিব ভাই?'

সুকুমার আধামন ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে শ্রীকান্তের দিকে তাকিয়ে বলল 'শোন তাহইলে। আপনারাও শুনেন।

কাইল রাত্তিরে একলা একলা ঘুমাচ্ছিলাম রুমে। আপনাদের ভাবীর সাথে কাল ঝগড়া হইছিল আরকি (ঈষৎ লজ্জার বহিঃপ্রকাশ হল তার চেহারায়)। তারে না ধইরে শুইলে আমার আবার ঘুম হয়না। কাছেও যাইতে পারতাছিনা আবার সহ্যও হইতেছেনা এরম পরিস্থিতি'

- 'তো, কাছে চলি গেলিই ত ফাইত্তেন'। দুষ্টু হাসি হেসে বললেন ইসাহাক সাহেব।

'কাছে গেলে কি আর স্বপ্নটা দেহা হইত মিয়া?' রাগত স্বরে বলল সুকুমার। 'কাছে না গিয়াই একসময় ঘুমায়ে পড়লাম। হঠাত কইরে দেখলাম আমি মইরে গেছি। আসমানে উড়তেছি। শয়ে শয়ে দেবতা চারপাশে দাড়ায় দাঁড়ায় গোল্ডলীফ খাচ্ছে আর কী কী যেন বলতিছে। একসময় আদালতের মত একজায়গায় জাইয়ে দাড়ালাম। এক শালা কম্পিউটারের মত কিছু একটা দেইখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কিভাবে যেন মানুষগুলোর তিনটে লাইন হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে মনে হয় আমার নাম্বার আইসে পড়ল। আমি উইড়ে যাইয়ে পড়লাম মধ্যের লাইনে। চারিদিকের কাজ কারবার দেখতেছিলাম। বামপাশে দেখলাম আমার মত বাঙ্গালিই বেশি। আরব আরব চেহারার লোকজনও খুব একটা কম না। ডানে লোক কম। সব জাতেরই লোক দেখলাম। মধ্যের লাইনে আমার মত পাবলিকের সংখ্যা ডানের চেয়ে বেশি আর বামের চেয়ে কম। চারিদিকে দেখতেছিলাম ভাল কইরে। শুনি দেবালোকে নাকি ধুন্ধুমার সম্পদের ছড়াছড়ি। দেখলাম ঘোড়ার ডিমটাও নাই। চিত্রগুপ্ত যেখানে বইসে আছে সেই তোষকের সাইডে ছেড়া। সাইড দিয়ে দেবতার চেহারার একজন হাইটে যাচ্ছিল। টাইনে ধরলাম। জিজ্ঞাসা করলাম দেবালোকের এই হাল ক্যান।

দেবতার মত চেহারার ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকায়ে নিজেরই কান্না আইসে পড়লো। বামের দিকে দেখায়ে কইলো, দুনিয়াতে যা দানছত্র হয় তা ওই শুয়োরের বাচ্চারাই মেরে দেয়। ব্যবস্থা করা যায় না কারন কলিকাল। তাই দেবতাদের পৃথিবিতে আসার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আছে। সচরাচর ভিসা পাওয়া যায়না। লুকায়ে মানব বেশে দুচারজন গিয়ে অকালে প্রাণ হারাইছে। তারমধ্যে একজন নাকি বাংলাদেশে ল্যান্ড করামাত্র গাড়ির তলায়! আরেকজন নারী সাইজা দিল্লিতে ল্যান্ড করার পর বিদিকিস্তি অবস্থা। আমি তো শুইনা থ। এই হাল দেবতাগোর?

হঠাত শুনি মাইকে আওয়াজ আসলো, "বামে যে শূওরের বাচ্চারা আছে এগুলানরে ডিরেক্ট নরকে চালান করা হোক। পথে মুতার জন্য বসতে দেয়ারও অনুমতি নাই।'

বামে তাকায়া দেখি সব হাওয়ার বেগে কানতে কানতে রওনা দিছে। একটাও খাড়ায়া নাই।

এবার আওয়াজ আসলো, 'ডাইনেরগুলা সিধা স্বর্গে। যাওয়ার সময় একটু বৃহস্পতি আর অন্যান্য সুন্দর গ্রহ নক্ষত্রাদি দেখায়া নিয়া যাওয়া হঊক।'

ডাইনে তাকায়া দেখি। ওগুলানও হাওয়ার বেগে রওনা দিছে। একটাও খাড়ায়া নাই।

আমরা মাঝখানেরগুলা অপেক্ষা করতেছি আমাদের ঘোষণা কখন আসে। সালার টাইম বইয়া যায়, চিত্রগুপ্তের নাক ডাকার আওয়াজ তীব্র থিকা তীব্রতর হয় মাগার আমাগোর কোন আওয়াজ আসেনা।

হঠাত, সব নাই হইয়া গেল। আমরা মাঝখানে যে কয়জনে ছিলাম ধীরে ধীরে উড়তে লাগলাম। গ্রহগ্রহান্তরের মাঝ দিয়া উড়তাছি তো উড়তাছি। এমন সময় কেডা যেন হাসা আরম্ভ করলো। একজন হাসে, তারে দেইখা আরেকজন হাসে, এমনে সবাই হাসতে আরম্ভ করলাম। সবাই খালি হাসি। থামেনা হাসি কারোরই।

এমন সময় ডাক শুনলাম 'ওই, এমনে হাসো ক্যান?'

ঘুম ভাইঙ্গা গ্যালো। বুঝলাম আপনার ভাবীর গলা। উইঠা বইসা দেখলাম যেখানে শুইছিলাম সেখানেই আছি। আপনাগোর ভাবী হাতে পানির গ্লাস লইয়া দাড়াইয়া আছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে ছিটা মারতাছে।'

মকবুল বলল, 'আর বলা লাগবনা বাকিটা আমরা বুইঝা লইছি।'

সুকুমারের চেহারায় আবার লজ্জা ফুঁটে উঠলো।

আমি প্রস্তাব করলাম 'তাহলে আজ ওঠা যাক'। সবাই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বের হবার সময় পিছে তাকিয়ে দেখলাম সুকুমার হাসছে। এই হাসির কারন কি স্বপ্ন না স্বপ্ন দেখে ওঠার পরের ঘটনা তা নিয়ে আর ভাববার প্রয়োজন মনে হলোনা।


বাসায় ফিরে রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় মাথা দিলাম। চোখ বন্ধ করতেই দেখলাম আমি আর সুকুমার সহ অনেক মানুষ গ্রহান্তরের মাঝে ভাসছি। পুরোদমে হাসছি সবাই। পুরোদমে। স্বর্গ আর নরকের মাঝে আটকে গেছি সবাই। তবু হাসছি।

কেউ থামছি না!`

Saturday, July 22, 2017

বাবিল

ব্যাবিলনের পথে হেটে হেটে ক্লান্ত হওয়া উরের এক পথিক,
থমকে দাঁড়ালো বাবিল প্রাসাদ দেখে।
আকাশ ছোঁয়া সে প্রাসাদ তৈরি হচ্ছিল স্বর্গের দিকে একটু একটু বৃদ্ধি পেয়ে।
পথিকটি দাঁড়িয়ে মুচকি হাসল,
হাসতে হাসতে এক সময় তা পরিনত হল অট্টহাসিতে।
তার চারপাশে ভীড় জমে গেল, আজো যেমন জমে বিনাকারনে মজা লুটতে।
কেউ একজন জিজ্ঞাসা করলো, এভাবে হাসির কারন।
পথিকটি হাসি থামিয়ে নির্দেশ করল বাবিলের প্রাসাদের দিকে,
যা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল সগৌরবে।
'ওটা ভেঙ্গে পড়বে'- চিৎকার করে বলল পথিকটি,
'আমি নানুক-হেম-উর জানি ওটা ভেঙ্গে পড়বে'।
চারিদিকে গুঞ্জন আরম্ভ হল-
'উরে আমরা সুখে ছিলাম, তৈরি করেছিলাম বাগান, সুশোভিত এক শহর;
নিজেদের জ্ঞানে-বুদ্ধিতে-প্রজ্ঞায়'।
'অন্তরীক্ষে বসে আছেন একজন বা অনেকে যারা চায়না মানব সুখে থাক-
তারা ধ্বংস করে দিয়েছে উর, বাবিলও ধ্বংস হবে'।
পথিকটি চলে গেলো, চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
কিছুদিন পর বাবিলের প্রাসাদ ধ্বংস হয়ে গ্যালো,
মানুষ প্রাণভয়ে পালাতে পালাতে ফিরে তাকিয়ে দেখলো
তাদের প্রজ্ঞার সৃষ্টি কীভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
বিশাল অন্তরীক্ষের কোন এক জায়গায় এক অজানা শক্তি তখন মুচকি হাসছিলো।
সেও বিশ্বাস করেনা তার ধ্বংস আছে!

Saturday, July 15, 2017

স্বাপ্নিক মেরাজ

সফেদ মেঘের মত করে
আকাশটা পরিভ্রমন করতে করতে দেখা হল ঈয়েশোর সাথে।
সুধালেন, মর্ত্যের আমি সেথায় কোন কারনে?
আমি নিশ্চুপ ছিলাম, হতবাক হয়ে।
আস্তে আস্তে দেখলাম ভিড় জমছে;
ইয়ারমিও, য়রত্রুষ্ট, আবশালোম, এজরা, নানুখেরাও উতসুক।
আমি দেখলাম তাদেরকে একবার- একদৃষ্টিতে।
মৃদুকন্ঠে জবাব দিলাম,
'একাকীত্ব'।
মৃদুগুঞ্জনে যে যে যার যার আপন পথে ফিরে গেলেন,
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম
একা।।
দীর্ঘসময়...
আলইয়াশা এলেন একসময় মীখাএলকে নিয়ে,
তীব্র বিদ্যুচ্চমকে আমায় আহত করলেন, চিৎকার করে বললেন,
'ফিরে যাও, এলোহিম এটাই চান!'
আমি হিমভাবে ফিরে এলাম মর্ত্যে,
একা।।
শাস্তির এক অসহ্য বোঝা নিয়ে, বয়ে চলতে।
আমি বলতে সুযোগ পাইনি এলোহিম তোমার জন্য আমার ঘৃনা
তোমার ব্যাপ্তির চেয়েও বিশাল।
সব বোঁঝার চেয়ে এ অব্যক্ততাই ভারী হয়ে উঠছে দিন কে দিন।