Saturday, November 20, 2021

রাজশাহী


সিএনবি মোড়ের রানার মিষ্টি,
রাস্তার অপরপাশেই বটতলার বার্গার,
আশেপাশে আরও অনেক লোভনীয়ের বেসাতি।
সুন্দরীদের আনাগোনা
প্রজাপতির মত উৎফুল্ল সবাই
পদ্মার স্রোতের মত চপলা
হাসির শব্দে চাপা পড়ে গীটারের ঝংকার।

বাতাসে উড়ে বেড়ায় প্রেম
উত্তরের বাতাস বয়ে যায় দক্ষিণে। 
একটু উষ্ণতার খোঁজে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায়
ক্ষুধার্ত সারমেয়। 

সাহেব বাজার বড় মসজিদের সামনে মালাই চা
পাশেই তিল-গুড়ে ভাজা গরম জিলাপি
শতশত মানুষ ছুটে চলে পেটের দায়ে
মাঝে একটু থমকে দাঁড়ায় মুক্তমন্ঞ্চে।
গ্যালারীতে বসে শোনে গান আর কাশবন ছাপিয়ে
চোখের সামনে বয়ে চলে প্রমত্ত পদ্মা।

তেরখাদিয়ার নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে পাশ দিয়ে 
সাঁই করে ছুটে চলে ই- রিকশা।
তারপর আবার নিঃশব্দের শব্দ। 

পরিষ্কার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা 
ইট কাঠের উন্নয়ন।
কোন এক সময় হঠাৎ পৌঁছে যাওয়া রেল স্টেশনে।
প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আরেকবার ফিরে দেখা।

মনে বিদায়ের সুর,
বিদায় রাজশাহী, হয়ত দেখা হবে আবার। 

Wednesday, August 25, 2021

ভাদ্রের এমন দিনে


ভাদ্রের এমন দিনেই হয়তো
শেষবার দেখেছিলাম তোকে।
গোধূলির আবছা আলোয়ও দেখেছিলাম স্পষ্ট
উজ্জ্বল দুটো চোখ
যাতে ছিল ক্রোধের বিচ্ছুরণ। 
তুই চলে যেতেই নেমেছিল আঁধার
সাথে আচমকা বৃষ্টি। 
ভেজা ব্যস্ত রাজপথে যখন নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে
উদযাপন করছি পরাজয়,
চোখের জল আড়াল হয়েছিল বৃষ্টির জলে। 

এরপর বহুবার ভিজেছি।

আজও বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যায়,
গোধূলির লালচে আলো দপ্ করে নিভে।

হঠাৎ।

আজও কাঁকভেজা হয়েছি।

নিকোটিনের ধোঁয়াও উড়েছে আকাশে খানিকক্ষন।

মস্তিষ্কের স্প্যাম থেকে তুইও জেগেছিলি।

কিন্তু, চোখে জলটা না
আর আসেনি!

Saturday, August 21, 2021

বদল


বিশাল জলরাশির মাঝে 
ভেসে চলা নিরন্তর,
ঘাটের দূরত্ব অজানা। 

নিস্তরঙ্গ নিভৃত সময়ে
হৃদয়ে আবেগ অবান্তর,
চেনামুখ যেন অচেনা! 

নীলাকাশ বদলে গেছে
গাঢ় মেঘের ছায়ায়। 
বদলে যাওয়া হৃদয় পোড়ে
হারিয়ে যাওয়া মায়ায়। 

Friday, July 30, 2021

ঊন-মানুষ

একটা অন্তের অপেক্ষায় প্রহর কেটে চলছে,
চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে।
পালানো সমাধান নয়, তবে অসম লড়াইয়ে টিকে থাকাটা দুষ্কর।
প্রকৃতির নিয়মে কেটে যায় সময়
পরাজয়ের ক্ষত হয় গভীর থেকে গভীরতর।
আকাশের চাঁদের দিকে ধেয়ে যাওয়া সিগারেটের ধোঁয়া
আর বারান্দার মেঝেতে পড়ে থাকা ছাইয়ে
কিছুটা বেদনার অংশ হয়ত মিশে থাকে,
তবে, ভেতরের অঙ্গার হয়ে পড়া হৃদয়টার হাল
বাইরে থেকে বোঝা যায়না।

জন্মের মত আজন্ম পাপ টেনে নিয়ে বেড়ায়, ঊন-মানুষেরা,
হাস্ব্যোজ্জ্বল মুখোশের আড়ালে- আমাদের চারপাশে।

Saturday, July 10, 2021

মধ্যরাতে


মধ্যরাতে, 
ঝিঁ ঝিঁ পোকাগুলো ডেকে যাচ্ছে এক সুরে, নির্ঘুম এক রাত, 
চোখ বন্ধ করলেই যেন ভেসে আসছে 
সহস্র বছরের সব গান।

নদীর তীরে বসে 
শুনি স্রোতের হিমশীতল কান্না,
দূর থেকে ভেসে আসে শেয়ালের হাঁক,
নাগরিক জীবন ছেড়ে 
আটকা পড়ে প্রকৃতির অর্কেষ্ষ্ট্রায়
জীবনটা অন্যভাবে দেখি, 
অন্য আলোয়। 
কোথাও একটু অস্বস্তি লাগে।
আদতে বন্দীত্বই হয়তো কিনেছি,
স্বাধীনতার মোড়ক দেখে!
মস্ত বড় ক্যানভাসেই হয়ত আটকা পড়েছি,
ইট-কাঠের বদলে সবুজ বনানীতে! 

মধ্যরাতে,
মেঘে ঢাকা তারারা মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে
ভাবনার উনুনে শলতে দেয়। 
পোড় খাওয়া হৃৎপিণ্ড আরেকটু ঝলসায়।
ধোঁয়া মিলিয়ে যায় মৃদুমন্দ বাতাসে।

ঝিঁ ঝিঁ পোকার দল গেয়ে যায় এক সুরে
সহস্র বছর ধরে চলছে যে গান। 

Tuesday, June 1, 2021

মেঘ


মিশকালো মেঘ ছড়িয়ে দিল রং আকাশে,
তমসাচ্ছন্ন চারিদিকে। 
ভৈরবের স্রোত যেন ফিরে পেয়েছে যৌবন,
ঢেউ খেলে যায় নদীর বাঁকে বাঁকে।

পাড়ে বসে দেখি সারসের নাচ,
হিমেল হাওয়ায় দোল খাওয়া সবুজ দুর্বা,
ঘাটে বাঁধা নৌকার বিশ্রাম। 

ক্লান্ত আমি অবসাদ ভরা মনে অপেক্ষা করি 
আকাশ বেয়ে নেমে আসা জলধারার। 

জরাগুলো ভেসে যাক... 


পেরুলি, কালিয়া, নড়াইল
পয়লা জুন, বিশ একুশ

Thursday, April 22, 2021

প্রশস্তি

তার দু'চোখের গভীরতায় ডুবে গেছে মন,
সাঁতার না জানা এই আমার হৃদপিন্ড
থমকে গেছে অনেকক্ষণ।

আমার পৃথিবী থমকে গেছে,
আমি আটকে গেছি মায়ায়। 
আমি বিলীন হয়ে গেছি তার অস্তিত্বে, 
আমি বেঁচে আছি
অলীক কল্পনায়। 

Tuesday, April 20, 2021

সৃষ্টি


একাকীত্বের পরম সীমা অতিক্রম করে
নতুন মহাবিশ্ব গড়ে চলেছি একা হাতে।
পৃথিবী সেখানে নিকষ মেঘে ঢাকা, আর কালবোশেখির ঝড়ে পরিপূর্ণ।
সূর্যের আলোহীন পাথুরে ভুমিতে বসে প্রানহীন ধ্যানে
চলছে সৃষ্টির মন্ত্রপাঠ। 
আকাশের কান্নায় ভিজে চলেছি অবিরাম
চলছে সৃষ্টিকাজ, একদন্ড নেই বিশ্রাম। 

করছি একা,
সম্পুর্ন একা।
চারপাশে সব আছে, তবু কিছু নেই!

Monday, April 19, 2021

এপিটাফ


তাপঝরা দুপুরে ঝলসে যাওয়া চোখে 
ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজপথ দেখি। 
রাস্তা থেকে দূরে বসে থাকা স্বল্পবয়েসী এক মা'কে দেখি
ক্ষুধায় আর্তনাদরত শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদতে। 
অনাথ সন্তানদের দেখি সফেদ পট্টবস্ত্র চাপিয়ে
ওস্তাদদের সমাপ্তি অযোগ্য চাহিদা মেটাতে ভিক্ষা করতে। 

রাস্তার কুকুরগুলোও কেমন নেতিয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত,
আশ্রয় নিয়েছে শহীদ মিনারের ছায়ায়।
আস্ফালকদের আস্ফালন অন্তর্জালের ছোঁয়ায়
বেজে চলেছে চা বিক্রেতার মুঠোফোনে;
সন্ধ্যায় ওতেই হবে গুটি বিক্রির হিসাব‌।‌‌

ব্যাকবেন্ঞ্চার মুফতে পাওয়া উর্দি গায়ে ধমকাচ্ছে
মুক্তিযোদ্ধা বাবার জন্য ওষুধ কিনতে বের হওয়া 
রিকশাচালক সেলিম কে। 

তাপঝরা দুপুরে ঝলসে যাওয়া চোখে 
আমি শুধু দেখি ঝাপসা হতে থাকা একটা রাষ্ট্রের কায়া,
যার এপিটাফ লিখে চলেছি আমরা সবাই। 

Thursday, April 15, 2021

সন্ধ্যা


এম্বুলেন্সের কর্কশ সাইরেনের শব্দ যখন শুনি
মনটা কেমন বিষাদে ভরে ওঠে। 

চারিদিকে কোলাহলের মাঝেও এক অযাচিত নিঃশব্দতা,
হাস্যোজ্বল যুবকের মুখের উপর এক কালো ছায়া। 
সদ্য স্বামীহারা বৌদি সন্তানকে নিয়ে ফিরছে বাবার বাড়ি,
এবার আর হাসিমুখে নয়। 

পরের ঘরে খেয়ে মেতে ওঠা ঘ্যোতঘ্যোত করা শুয়োরের
লেবাস পকেটে হেক্সিসলের বোতল। 

মৃত্যু পরম সত্য,
এর চেয়ে বড় সত্য নাই,
তারপরও ভীষণ আতঙ্কের চাদরে ঢাকা চারিদিকে। 

লাশের মিছিল শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে,
সন্ধ্যার আবছা আঁধারটা আর রোমান্টিক লাগছেনা। 
শিরদাঁড়ায় বয়ে যাচ্ছে ভয়ের স্রোত।

শত বছর আগে আমার পূর্বপুরুষেরও কী এমন ‌হত? 

Wednesday, April 7, 2021

ইতিহাস


অস্পষ্ট শব্দগুলো থেকে তৈরি হয় 
অগ্নিঝরা সব বাক্যাংশ।
রক্তে আগুন ধরানো বাক্যেরা জোড়া লেগে
সৃষ্টি করে সব কালজয়ী ভাষা-
আর,
জমাট বাঁধা রক্তে তৈরি হয় ইতিহাস। 

ছেঁড়া ছবিগুলো জোঁড়া লাগিয়ে
যে ক্যানভাস হয় তার অর্থ পরিষ্কার।
আমরা ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছি,
যে ইতিহাস বদলাতে না পারার কারনে
ঘৃনিত হবো উত্তরপুরুষের কাছে। 

একদল উনমানুষের প্রাচীন খুলিতে 
মস্তিষ্ক বর্গা দেবার খেসারত দিতে হবে
যতদিন না আলোর দিশারীরা সংখ্যাধিক্য হয়।

সে দিন কী আর আসবে! 

Wednesday, February 24, 2021

বিলীন

নিসর্গের মাঝে চলতে চলতে
অপরুপ এক দির্ঘাঙ্গির দিকে হল দৃষ্টিপাত। 

ঠিক সে মুহূর্তেই-
থমকে গেল পৃথিবী,
বন্ধ হয়ে গেল ঘূর্ণায়ন,
স্রোতেরা পরিনত হল সুনামিতে,
পবনদেব বসলেন ধ্যানে,
সূর্য স্থির হয়ে থেমে রইল আকাশের বুকে। 

সময় বলতে রইলো না আর কিছু,
একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে সব আটকে গ্যালো।
আর আমি;
তার মাঝে বিলীন হলাম। 

Friday, January 15, 2021

ঈশ্বরের আশীষ

মিথ্যের ইট পাথরে গড়া প্রাসাদ
সত্যের মৃদু বাতাসেই ভেঙ্গে পড়ত সত্যযুগে।

যুগের পরে যুগ পেরিয়েছে
এসেছে কলিযুগ।
ইটের পরে পড়েছে ইট 
তৈরী হয়েছে এক মহাদুর্গ,
মিথ্যের।

এই কলিযুগে সত্যের সুবাতাস বরং আটকে যায় 
সেই দুর্গের দৃঢ় দেয়ালে।
দেয়ালের এপাশে অন্যায়ই এখন ন্যায়,
চোখে দেখা সত্যও আজ মিথ্যে।
মেকি আর আসলের মাঝে ভেদ করার চেয়ে
তীর দিয়ে দশ ক্রোশ দুরের মৎস্য অক্ষি ভেদ করা সহজ। 

ঈশ্বরের আশীষও হয়ত আটকে গিয়েছে ঐ দুর্গে...