Wednesday, February 26, 2014

নাম না দেয়া এক গল্প

-       হ্যালো
-       বল, শুনতে পাচ্ছি।
-       তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছ আর ফিরবেনা?
-       হ্যাঁ, তোমাকে তো বলেছিই। তোমার বাবা- মা আর বোন টাকে আলাদা করে দাও আমি ফিরে আসব তোমার সংসারে।
-       বাবা- মা আর বোনটাকে যদি আলাদাই রাখি তবে সংসারে আর কেই বা থাকলো?
-       দেখ আমি এত কিছু বুঝিনা। আমি চাই তোমার আর আমার একটা আলাদা সংসার। সেখানে আমি আর আমার স্বামী অর্থাৎ তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে চাইনা। তোমার বাবা, মা আর বোনকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।
-       কেন?
-       আবার কথা বাড়াচ্ছ। আমি তো বলেছিই আমি চাই এমন একটা নির্ভেজাল সংসার যেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি। উটকো কাউকে আমি আমার সংসারে দেখতে চাইনা।
-       আমার বাবা- মা আর বোন কি উটকো লোক?
-       হ্যাঁ, অন্তত আমার দৃষ্টিতে।
-       কেন? বাবা- মা কি কখনও তোমাকে অনাদর করেছেন? বা আমার বোন কি কখনও তোমাকে অসম্মান করেছে?
-       দেখ, আমি আমার কথা বলে দিয়েছি। এখন সংসার টিকাতে চাইলে যা করার কর।
-       আমি তোমার জন্য আমার বাবা-মা-বোনকে দূরে ঠেলে দিতে পারবনা।
-       তাহলে আমিও আর ফিরবনা।
-       তবে আলাদা হয়ে যাই। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
-       আমি দেব ডিভোর্স? খেপেছ? আমার কথা না শুনলে তোমাকে ঘুঘু দেখিয়ে ছাড়ব।
-       ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
-       দেখ, আর আমার জিনিসপত্র কিছু রয়ে গেছে ওখানে। বিশেষ করে আমার জামা-কাপড় গুলো। ওগুলো পাঠিয়ে দিও।
-       তোমার ছোট ভাইকে পাঠিয়ে দিও। আমি দিয়ে দেব।
-       আমার ছোট ভাই মানে। রবির নাম বলতে কি তোমার লজ্জা লাগে? স্ত্রীর ছোট ভাই কি তোমার ছোট ভাই না। ভাববা কিভাবে? নীচু জাতের লোক তোমরা। তোমাদের মধ্যে কি এসব আছে?
-       দেখ সাথী, অনেক কথাই বল আমি নির্বিবাদে শুনে যাই। হজম করে যাই। তোমার কি মনে হয়না মানুষের একটা সহ্য সীমা আছে?
-       কেন কি করবা তুমি? আমার গায়ে হাত তুলবা?
-       আসলে সমাজে সামাজিকতার ভয়ে অনেক কিছুই করতে পারিনা। বাদ দাও। আমি রাখছি। কি করব তা পরে জানাচ্ছি।
-       হুম, জানাইও। আর একটা কথা শুনে রেখ রফিক সাহেব। আমি সাথী কিন্তু সহজে ছেড়ে দেবার পাত্রী নই।  খুব শীঘ্রই তোমার বাবা- মাকে আর ছোট বোনটাকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।
-       কি করব তা জানবা শীঘ্রই। অপেক্ষা কর আর কিছু মুহুর্ত।
ফোন কেটে দিল রফিক। একদিকে বাবা- মা- বোন আর অন্যদিকে স্ত্রী। উভয় সংকটে এখন সে। স্ত্রী চায় আলাদা সংসার যেখানে রফিকের বাবা- মা- বোনের কোন স্থান নেই। রফিকের বাবা- মাও বিষয়টা জেনে গ্রামে চলে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার আগে রফিক সময় চেয়েছে বাবা মায়ের কাছে একটা দিন যদি স্ত্রী সাথীকে মানানো যায়। কিন্তু সাথী অনড় তার অবস্থানে। এখন কি করবে সে? ভাবতে ভাবতে চিন্তার জগতে প্রবেশ করে রফিক।

১.
ফ্ল্যাশব্যাক
৫ বছর আগে
অনার্স পাশ করা সদ্য গ্রাজুয়েট ছাত্র রফিক। সুঠাম দেহধারী, মিষ্টভাষী এক যুবক। চাকরীর সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে এদিক সেদিক। আত্মীয়- স্বজনদের কাছ থেকে কোন সাহায্য না নিয়ে এতদুর এসেছে শুধুমাত্র নিজের যোগ্যতায়। আর চাকরীর বাজার এখন এতটা খারাপ মামা- চাচা ছাড়া কোন ব্যবস্থা হয়না। তবু আশায় আছে রফিক নিজ যোগ্যতায় যদি কোন কাজের ব্যবস্থা হয়। আপাতত, টিউশনি করে ঢাকায় নিজে চলছে সাথে মাঝে মাঝে মান্না- সালওয়া পাঠিয়ে গ্রামে বাবা- মা আর বোনটাকে বাচিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রাম করছে সে। টিউশনি থেকে সামান্য কিছু আয় হয় তবে হিমশিম খাচ্ছে দুই দিন পর পর চাকরীর জন্য ব্যাংক ড্রাফট করতে হয় বলে।

জীবনের বাসন্তী একটা দিক থাকে প্রতিটা যুবকেরই। বিশেষত এই বয়সে। রফিকেরও আছে। সেও ভালবাসে এক নারীকে। যাকে কল্পনা করে নিজের প্রেমিকা হিসেবে। কিন্তু দারিদ্রের কঠিন বাস্তবতায় অনেক না বলা আবদার বা ইচ্ছের মত এটাও মনের মাঝেই কুলুপ এটে রয়েছে। কখনও মুখ ফুটে আর বলা হয়নি সাথীকে। সাথীর যে অজানা বিষয়টা তা না। একই সাথে পড়ত ওরা। রফিক আর সাথী ভাল বন্ধু ছিল। রফিক হাজারো ব্যস্ততায় সময় গুজরান করত তা জানত সাথী। তাই সে রফিক কে পড়াশোনা বা অন্যান্য যেকোন ব্যাপারে সহায়তা করত অনেক বেশি। অন্য যে কারো চেয়েই বেশি। রফিক এখনও বুঝে উঠতে পারেনা সাথী কেন তাকে এতটা সাহায্য করে। একি ভালবাসা? না দয়া? নাকি শুধুই বন্ধুত্ব? মাঝে মাঝে যখন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা রফিক তখন দুইটা র‍্যালী সিগারেট টেনে বুকটাকে হাল্কা করে আর অপেক্ষা করে ভবিষ্যতের।

সাথী বড়লোকের মেয়ে। বন্ধু বানানো আর তাকে ভালবাসায় বাধ্য করে একটা আল্টিমেট শক দেওয়া তার কাছে নেশার মত। স্কুল জীবন থেকে সে এ কাজটা করে আসছে অত্যন্ত সফলতার সাথে। আজ পর্যন্ত কারো কাছে ধরা খায়নি সে। তাই ভিতরে ভিতরে একটা গর্ব কাজ করে তার। সে যে অথৈ জলের মাছ তা ভেবে সে নিজে তৃপ্ত হয়। গত তিন বছর যাবত রফিকের বন্ধু হয়ে আছে। রফিকের জন্য সে অন্তঃপ্রাণ। এই তিন বছর পর্যন্ত আসা লাগতোনা যদি রফিক একটু ঐ টাইপের ছেলে হত। এই ছেলেটা কেমন বোকা ধরনের। কথা বলে কম। শুধুমাত্র চোখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে যায়। মাঝে মাঝে চোখে প্রেম প্রেম একটা দৃষ্টি দেখা যায় কিন্রু তা স্বল্প সময়ের জন্য। সাথীও বুঝতে পারেনা আদতে রফিক নামের এই ছোট মাছটা তার জালে আটকেছে কিনা! আরো ঘনিষ্ট হবার অভিনয় করতে হবে ভাবে সাথী আর নতুন নাটকের প্ল্যান করতে থাকে মনে মনে।



Wednesday, February 19, 2014

জীবনবন্দনা

আমি মৃত্যুর যত কাছে যাবার চেষ্টা করি,
জীবন ততই আপন হবার চেষ্টা করে আমার।

যত হিংসা, যত দ্বেষ
প্ররোচনা দেয় আমায় পৌঁছতে মৃত্যুর দুয়ার।
তত ভালবাসা, তত শ্রদ্ধা,
মর্ম বাড়ায়, মূল্য বাড়ায় এই জীবনটার।

জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের প্রান্তে হৃদয়টাকে
চাপা দিয়ে রেখেছে ধ্বংসপাহাড়।
তবু মায়ার ছলনায়
স্নেহের জপ করে যাই জীবনবন্দনার।