Friday, December 18, 2020

নির্বোধ জাতি

কোন এক প্রান্তরে একদা ছিল এক ক্ষুদ্র জাতির বাস।
অন্য জাতির কায়দা আচরিয়া যাহাদের মিটিত আশ।।
ত্যাগিয়া আপন পরিচয়, মানিত পিতা কোন এক প্রাচীন উন্মাদেরে।
বহির্ভুমিতে হইত ন্যায়, দুঃখে অগ্নি প্রজ্জ্বলন করিত ঘরে।।
মুখে বলিয়া শান্তি, তরবারি হস্তে পিছন হইতে করিত কতল।
ন্যায়পরায়নের ভেক ধরিয়া অপকর্মের মাপ হইতো অতল।।


ইতিহাস কয় প্রকৃতি করেনা সহ্য অন্যায় চিরকাল।
টেকেনাই কভু দ্বিচারি সমাজ, সাক্ষী পরমবিশ্ব মহাকাল।।
আজ যে আলো চিরে আঁধার, ক্ষয়ে যাবে সে এক শেষে।
আসিবে নতুন আলো, সত্য হইয়া, অন্ত করিয়া শ্লেষে।।

তীব্র ঘৃণা তাহাদের তরে যারা নিজেরে করতে পারেনা সম্মান।
অপেক্ষা সময়ের, আসবে নিশ্চয়ই নির্বোধতার অবসান।। 

Saturday, November 28, 2020

আমি কবি হলাম!


সূর্য আকাশে উঁকি দেয়নি তখনো,

গাছের সবুজ পাতাগুলোর উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়া শিশিরবিন্দুগুলো ঝরেনি,
সিটি করপোরেশনের লোকেদের ঘুমকাতুরে স্বর যায়নি,
পাখিরাও চুপটি করে বসে নিজেদের নীড়ে
ওড়ার অপেক্ষায়।

উত্তর গোলার্ধ থেকে বেড়াতে আসা অতিথিরাও
এক পা তুলে দাঁড়িয়ে রুপসার তীরে,
নৌকা ঘাটে আরম্ভ হয়নি যাত্রী তোলার তোরজোর।

দু'আঙ্গুলের ফাঁকে গোল্ডলীফ নিয়ে
মাঝে মাঝে কুয়াশায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলাম নিকোটিন।
হৃৎপিন্ড থেকে কষ্টগুলো টেনে এনে মিশিয়ে দিচ্ছিলাম বাতাসে।
উত্তরের হিমেল হাওয়ায় উড়ে গেলো কারো গোলাপী চাদর-
নিরাভরন হলো এক জোড়া মায়াবী চোখ।
অপলকে চেয়ে থাকা আমার দিকে একবার হাসলে শুধু।

আমি কবি হলাম!


আটাশ নভেম্বর, বিষকুঁড়ি
খুলনা

x

Friday, October 23, 2020

একটা গল্প বলে যাই

গল্পটা ছিলো বড্ড নীরস,
তাই ছিলো অগোচর।  

শুরুতে

মুঠোফোনে খুলে ইতিহাসের খেরোখাতা,
গজনী-রাজের ষোলতম যুদ্ধের বাতুলতা;
সপ্তদশে নিরঙ্‌কুশ বিজয়,
শিরদাঁড়ায় তীব্র-প্রবাহ বয়।
মনে পড়ে যায় নিজের পরাজয়ের খবর। 

এরপর

ঘুরে দাঁড়ানোর দিন শুরু
ছত্রপতি শিবাজীকে মেনে গুরু;
মাঁড়ি চেপে দিনটাকে করে শেষ,
সাঁঝরাতে বই-পাতায় নিরুদ্দেশ,
সপ্তাহান্তে স্বপ্ন ছুঁতে ছুটে চলা পথিক-প্রবর। 

অবশেষে

তীরে পৌঁছে পিছনে ফিরে তাকাই,
সামনে দেখি জলধির সীমা নাই।
ঝাঁপ দিয়ে পড়ি অতল সমুদ্রে
সাঁতরে যাই পিঠ পুড়িয়ে রৌদ্রে;
জানি সামনেই আছে অপেক্ষায় সুখ-সরোবর। 

Saturday, August 29, 2020

সন্ধ্যেয়




সন্ধ্যে...

ফিরতে থাকা মানুষের ঢল

রিকশার ঘন্টা

আঁধার মেশানো আলো

ফুটপাতে টংঘর

এক কাপ চা আর গোল্ডলিফের ধোঁয়া

ঘনিয়ে আসা আঁধার

একা দাঁড়িয়ে আমি... 






Saturday, August 22, 2020

আদিম রিপু


তীব্র উচ্ছাসে যখন জাপটে ধর আমায়
তোমার সুডৌল স্তনযুগল চেপে ধরে আমার বুকে;
শিশ্ন শীষ দিয়ে জেগে ওঠে,
উথ্থিত হয়ে খুঁজে ফেরে তোমার অগভীর যোনী। 

তোমার চিকন এবং গোলাপি ঠোঁট দুটোকে
ভিজিয়ে দিই তাই
করে উষ্ণ চুম্বন।
শরীরের প্রতিটি কোষ যেন ডুবে যেতে চায় 
তোমার কোষের সাথে। 

আস্তে আস্তে তাই পরিনত হই আদিমানবে,
তোমার সৌন্দর্য করে উন্মুক্ত। 
ধীরে ধীরে একত্রিত হয় লিঙ্গদ্বয়,
পূর্ণতা পায় শূন্যের প্রতিভূ। 

বিশটি আঙুল ব্যস্ত হয় পবিত্র স্পর্শে,
জল আসে নদীতে, ভিজে হয় অবগাহন।
নিষ্ক্রান্তে নিষ্পত্তি পায় আদিম রিপু।।




প্রত্যূষ, বাইশে অগষ্ট,
মিরপুর, ঢাকা। 


Thursday, August 6, 2020

অপেক্ষা


সন্ধ্যা নামার আগে
এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল তপ্ত বিকেল,
তেঁতে থাকা মাটিতে জলের স্পর্শে হয়েছিল 
তাপের বিচ্ছুরণ।
তাতেই হয়তো কেটে গিয়েছিল মেঘ। 

অতঃপর সূর্য প্রস্থান করে আকাশের ক্যানভাস থেকে;
সন্ধ্যা নামে,
ঘিরে ধরে আঁধার। 

আমি অপেক্ষায় আছি আলো দেখবো বলে। 

Saturday, July 18, 2020

আলো


ইট-কাঠের জঙ্গলে নিয়ন-আলোতেই ঝলসে যায় চোখ
আবছা আলোয় মেলে প্রশান্তির স্বাদ। 
সূর্যের আলোর রং হারিয়ে গেছে বহুকাল
আকাশের ছবিতে তাই শুধু মেঘে ঢাকা চাঁদ। 

Tuesday, July 14, 2020

সময়


অন্তহীন সময় সমুদ্রের স্রোতে
ক্লান্তিহীন দাঁড় বেয়ে ভেসে চলা। 
নিদ্রাহীন রাতগুলো যায় কেটে
একাকী তারাদের সাথে কথা বলা।

দিশাহীন যাত্রা সে বড় এক,
স্বপ্নেরা ডানা মেলে সাঁঝ বেলা। 
সূর্যের অস্ত যাওয়ার প্রহরে
জেগে ওঠে প্রাণময় দ্বীপমালা।

স্বর্গের আলো ঠিকরে পড়ে,
আঁধারের নিকষ উদর জুড়ে। 
শব্দেরা হয়ে ওঠে পবিত্র নিঃশব্দে,
বরসায় মেঘ বৃষ্টির খেলা। 


Wednesday, July 1, 2020

অর্ঘ্য তোমার জন্য, প্রিয়ে

তোমার বুকের মাঝে আমি উষ্ণতা খুঁজি, প্রিয়ে;
দুর্ভাগ্যের শীতলতায় আমি যাচ্ছি হারিয়ে।
আমি মিঠেহীনতার রোগী- মৃতপ্রায়;
আমি জীবন খুঁজি তোমার লালচে ঠোঁটের কোনায়। 

বাতাসে এলো চুল উড়িয়ে যখন হেটে যাও, হে দেবী;
নিতম্বে দোলার সাথে মিলে যায় আমার হৃৎস্পন্দন।
স্নান করে ঘাটে বসে, 
সাদা কাপড়ে নাও তুমি দীর্ঘশ্বাস, 
রাতে উত্থিত শিশ্নের শ্বেত-শুভ্র ক্রন্দন। 

শাড়িতে তুমি যখন সামনে আসো দেখি আধখানা চাঁদ, 
তাতে কলঙ্ক ন্যায় এক ছোট গভীর নদী।
জানি নীচেই আছে সমুদ্র।
অবগাহনে কামার্ত আমার শিবচিহ্ন, 
আমি নীলকন্ঠ হতে চাই সুখের শেষ অবদি। 

Friday, June 19, 2020

জয় কর্তার


এই বেটা গোলাম হোসেন,
চলে আয় তো এদিকে।
পানটা সাজা ভাল করে
কথা বলি এই ফাঁকে।

বলত বেটা গোলাম হোসেন
তোর বেতন কত আজ?
সবশেষে বাড়িয়ে ছিলাম কবে?
তখন ছিলোনা ব্রিটিশ রাজ?

ধুঁতির ছেড়া হাতে ঢেকে
উদোম গায়ে বসে নীচে
বানিয়ে পান, গোলাম গায়,
কর্তার দয়ায় আছি বেঁচে।

বুঝলি গোলাম চারদিকেতে
কমছে যে দাম তোর কাতারে।
দিই আমি বেশ জানিসই তো তুই
ভিড়লাম না আর ঐ সাঁতারে।

গোলাম হোসেন কাঁদিয়া বলে
জয় কর্তার মানবিকতার
বেঁচে আছি আপনার দয়ায়
মাংস শুকিয়ে টিকেছে হাঁড়।

মনটা বিশাল আকাশ সমান।
জানি আমি মন আপনার
ভাত জোটেনা, মুড়ি খাই,
কমলে বেতন তাও জোটেনা আর!

বাঁচুন আপনি, বাঁচুক তাঁরা,
আমাদের জীবন তো উপাচার।
বেঁচে আছি আজও, নিচ্ছি শ্বাস,
জয় জয় জয়, জয় কর্তার।

Saturday, June 13, 2020

অসময়

দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের সারি
বাতাসে মিশে আছে অদৃশ্য শত্রু।
বৃষ্টির ছাটে মুছে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া কান্নার দাগ,
হুইলচেয়ারে স্তব্ধ- নিশ্চল অতীত,
হাতের শাঁখার সাথে ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো
ছড়িয়ে পড়ছে শ্মশানের মেঝেতে।
গোরখোদকেরা খুঁড়ে যাচ্ছে গোর অবিরাম,
তারা নিশ্চিত, পথেই আছে নতুন সব অতিথিরা।

সময়টা বড্ড অনিশ্চিত,
আজ চ্যাটার্জী সেজে ঘৃণা উসকে দেয়া হোসেনও হয়ত
কাল থাকবে চলে যাওয়ার তালিকায়
অন্য কোন রাষ্ট্রে, অন্য কোন ভাষায়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপের সমষ্টিতে গড়ে উঠেছে বিশাল জাল,
প্রকৃতি কিছুই ভোলেনা,
প্রকৃতি ক্ষমা করেনা।

Saturday, June 6, 2020

অস্তিত্ব




নির্বাক কোলাহলময় শহরে, থেমে থেমে চলে জীবনের স্পন্দন।
বিবর্তনের আরেক বিন্দুর মুখে দাঁড়িয়ে চলছে
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এক ভীষন লড়াই।

সুর্যের তেজ নিভু নিভু প্রায়, তবুও আলোর খোঁজে জ্বলে নিয়ন বাতি।
সামনে তমসাচ্ছন্ন, ক্লান্তিকর অবসাদময় দীর্ঘ সময়,
পথের খোঁজে, পথে পথে হেঁটে বেড়াই।

Sunday, May 31, 2020

বিষাদ


'আবেগের দুরন্ত ঘোড়ায় লাগাম পড়িয়ে 
বাস্তবতার মাঠে রেস খেলতে নামা জুয়াড়ি
আর, 
ক্লান্তির শেষে আবার ক্লান্ত হতে ঝাঁপিয়ে পড়া 
গাধাদের জন্য সমবেদনা। 
নরক বলতে কিছু নেই ভাবছ?
এদের হাসিমাখা মুখের পেছনে লুকিয়ে থাকা 
ভয়ংকর বিষাদময় মুখগুলো একবার আবিষ্কার করে দেখো। 
নরক দর্শন হয়ে যাবে!'

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে 
বয়েসের ভারে জীর্ন কুচকে যাওয়া তামাটে রঙের এক বৃদ্ধ;
মনোযোগ দিল আবার আকাশে। 

'ক্ষ্যাপা', মুখ ভেংচে বলল তরুনীটি,
'বিকেল বেলা আকাশের তারা গুনছে বুড়ো ভাম'।
বৃদ্ধ মুচকি হাসলো, ফিরলোনা এঁদের দিকে।

'একসময় আসবে
যখন তুমিও আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করবে, খুঁকি।
আবাদ্দনের। 
অনন্ত অপেক্ষা যদি তোমাতে অরুচি হয় তাঁর।
যেমনটা আমি করছি, এক অনন্ত কাল।'

অব্যক্ত শব্দগুলো দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে 
মিশে গেলো বাতাসে, সবার অগোচরে, 
অজান্তে। 

Saturday, May 30, 2020

যুদ্ধ


প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যেতে হয় 
বেঁচে থাকবার প্রয়োজনে। 
একের পর এক স্তর আসতে থাকে মৃত্যু অবধি।
প্রতিটা স্তরে নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দিতার আহ্‌বান,
কখনো দূরের শত্রু থেকে,
কখনো পাশের শত্রু থেকে,
কখনো আবার নিজের শত্রু নিজেই!

নিজেকে বদলে ফেলাটা সময়ের প্রয়োজন,
তাতে কৃত্রিম 'আমি'র খোলনলচে বদলে যায় বটে!
তবে, মূলটা অপরিবর্তনীয়- পরিমার্জন অযোগ্য। 

বস্তুত, বিষয়টা বিবর্তনবাদের একটা সীমিত উদাহরণ।
'আমি' বিবর্তিত হই প্রতিনিয়ত
মেরুদন্ডী বা অমেরুদন্ডী রুপে;
কখনো মুঠো শক্তভাবে ধরে রাখি
কখনো ডানা মুক্ত করে ছেড়ে দিই। 

বেঁচে থাকবার প্রয়োজনে,
টিকে থাকবার প্রয়োজনে,
বাঁচিয়ে রাখবার প্রয়োজনে। 

Wednesday, May 13, 2020

প্রণোদনা


২০ শকাব্দ, ত্রিবিক্রম অধিপতির মাসে হঠাৎ মড়ক আরম্ভ হইলো কুষান সাম্রাজ্যে। অজানা রোগে মানুষ পড়িয়া থাকিলো রাস্তার পার্শ্বে। আতংকে কেউ সৎকার করিবার জন্যে নিশ্চল দেহ ছুঁইয়াও দেখিলো না। রাজধানী বেক্ট্রিয়া অবরুদ্ধ করা হইলো, উত্তরের স্বর্গনগরী ফরগানাও করা হইলো বদ্ধ।

সাম্রা‌জ্যের পুর্ব সীমানা ঘেষা রাজ্য পাটলিপুত্রেও সংবাদ পৌছাইলো দিন দশেক পর। তুরফান হইতে আনা সবচাইতে তেজী ঘোড়ায় চড়িয়া বার্তাবাহক পবনেন্দ্র যখন পাটলিপুত্রে পৌছাইলেন দেখিলেন মড়ক এখানেও পৌছাইছে বটে তবে জনতার মাঝে তেমন হেলদোল নাই। তাহারা যার যার মত ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে। কেউ মরিলে তৎক্ষনাৎ ধরিয়া দাহ করিবার বা মাটিতে গাঁড়িবার লোক না পাওয়া গেলেও শোকে থাকা পরিবারের বাধ্যতামুলক গৃহভ্যন্তরে থাকিবার কালে জমির সীমানা-প্রস্তর নাড়াইবার লোকের অভাব হইতেছে না। বাজার সমূহে ভিড় লাগিয়াই আছে। সকলে দ্রব্যাদি কিনিতেছে মনের সুখে। বাড়িতে দ্রব্যাদি রাখিয়া আবার রাজ্যের লঙ্গরখানার দিকেও দৌড়াইতেছে যদি আরো কিছু খাবার পাওয়া যায় সেই আশায়।

বার্তাবাহক জানাইলেন রাজ্যের অধিপতিকে সম্রাটের প্রাসাদ হইতে বইয়া নিয়া আসা ফরমান আর একখানা তাম্রলিপি। নির্দেশ না থাকিলেও আসিবার পথে বার্তাবাহক একটু দেখিয়াছিলো কী লেখা আছে উহাতে। অন্তে লেখা ছিলো বার্তাবাহকের হস্তে যেন ফিরিবার পথে খরচের সুবিধার্থে এবং বিপদকালে দুঃসাহস দেখানোর পুরস্কার হিসাবে উপযুক্ত পরিমান মুদ্রা প্রদান করা হয়। রাজ্যাধিপতি ডাকিয়া রাজ্যকোষের কর্মচারীকে কহিলেন উহার ভাষ্যমতে ব্যবস্থা লইতে।

পরের দিন প্রত্যুষে রাজ্য হইতে রাজধানীর দিকে যাত্রারম্ভ করিবার সময় রাজ্যকোষের তত্ত্বাবধানকারীর এক কর্মচারি মুচকি হাসিতে হাসিতে কোন এক অজানা প্রাণির চর্মে নির্মিত দুইটা থলে লইয়া তাহার নিকট আসিলো। বার্তাবাহককে উদ্দেশ্য করিয়া বলিল, ‘রাজপুরুষের নির্দে‌শনায় আপনার ফিরতি পথের খরচাদি এবং আপনার সাহসিকতার সম্মানে রাজপুরুষ প্রদত্ত এই থলে দুইখানা লইতে আপনার আজ্ঞা হোক।’ বার্তাবাহকের চক্ষে থলের ব্যাপারে প্রশ্ন বুঝিয়া তিনি বলিলেন ‘এই থলে গুলোও আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। দেখিতে কিঞ্চিত অন্যরকম লাগিলেও ইহা প্রস্তুতকৃত হইয়াছে অত্যন্ত পবিত্র বস্তু দ্বারা’। পবনেন্দ্র থলে দুইখানা লইয়া পরিমাপ করিয়া বুঝিলেন তাহা যথেষ্ট ওজনদার। হৃষ্টচিত্তে পবনেন্দ্র প্রাসাদ এবং রাজ্য ত্যাগ করিয়া চলিল রাজধানীর পথে।

পুরো পথে থলে দুইখানা লইয়া সে এতটাই সতর্ক রহিল যে বিনা প্রয়োজনে সে একমুহুর্ত কোথাও ব্যয় করিলো না। দশদিনের পথ ছয়দিনে পার করিয়া সে পৌছাইলো রাজধানীতে। সম্রাটের নিকট সবিস্তার বর্ণনা করিয়া সম্রাটের নিকট বাড়ি যাইবার আর্জি জানাইলো। তাহার হৃদয়ে একমাত্র চিন্তা থলে দু'খানায় কী পরিমান সম্মানী আছে তাহা প্রত্যক্ষ করা। সম্রাট ও ভাবিলেন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করিয়া শ্রান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। সেহেতু, পবনেন্দ্রকে কিছু উপহার দিয়া নিষ্ক্রান্ত হইবার অনুমতি প্রদান করিলেন।

পবনেন্দ্র দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়া সকলের সহিত সংক্ষেপে বাক্যালাপ সারিয়া নিজ কক্ষে ঢুকিলেন। এ বিশাল যাত্রায় প্রাপ্ত সকল বস্তুর মধ্যে হইতে বের করিলেন থলে দুখানা। থলের মুখ খুলিবা মাত্র এক আর্তচিৎকারে তিনি জ্ঞান হারাইলেন।

চক্ষু খুলিয়া বার্তাবাহক দেখিলেন তাহাকে বাড়ির উঠোনে খাঁটিয়া পাতিয়া বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ঘরণি খেয়াল রাখিতেছিলেন তাহার দিকে। জ্ঞান ফিরিবার চিহ্ন পাওয়া মাত্র উষ্ট্রের দুগ্ধ আনিয়া বসিলেন তাহার পার্শ্বে। অত্যন্ত নম্রভাবে শুধাইলেন, ‘পতি পরমেশ্বর, ঐ দুইখানা লোম্রযুক্ত-কৃষ্ণকায় থলের মধ্যের ফুঁটো কড়ির কী এমন বিশেষত্ব যে এতটা বয়ে নিয়ে আসিয়াছেন?’ বার্তাবাহকের কর্ণকুহরে প্রশ্ন পৌছুলো বটে তবে তাহার চেতনা দখল করিয়া রইয়াছে সেই কর্মচারী। তাহার এতটাই কূটবুদ্ধি যে এক রৌপ্যমূদ্রার সমমূল্যের দুই থলে প্রাদেশিক ফুঁটোকড়ি সে দিয়া দিয়াছে কারন তাম্রলিপিতে কী মুদ্রায় সম্মানী দিতে হইবে তাহা উল্লেখ নাই। আর দামী থলে! বরাহপুত্রের নিকট বরাহের চামড়া তো মূল্যবান হইবেই এবং পবিত্রও বটে!

Thursday, May 7, 2020

নীড়


সন্ধ্যার ঝড়ে আটকে পড়া পরিযায়ী সব
ফিরতে চায় আপন নীড়ে।
পথে এলোমেলো বাতাসে হারিয়ে যায় দিকের দিশা,
পশ্চিমে ডুবতে থাকা সুর্যের রশ্মিও লুকায় মুখ
মেঘের আড়ালে। 
তীব্র বাতাসে ভেসে বেড়ায় ধুলার সাম্রাজ্য, 
আলোড়ন তোলে মধ্য আকাশে।

রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা পঙ্গু মানবটি 
অশ্রাব্য গালি দিয়ে খুঁজে ফেরে নিরাপদ আশ্রয়।
কোটি টাকার দালানের নীচে একই সাথে আশ্রয় নেয়
ক্ষুধার্ত সারমেয় আর স্বর্গের দাবীদার।

লাঠি হাতে ঘৃনাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে উর্দিপড়া দাসেরা আর
বারান্দায় কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে কষ্ট আর বৃষ্টির রোমান্টিসিজম 
তারিয়ে উপভোগ করে দুঃখবিলাসী তরুনী। 
নরকের জ্বালানীরা উষ্ণতা খোঁজে সবচেয়ে নিকটবর্তী রমনী 
বা গেলমানের শরীরে। 
ভল্টের মালিকেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে খোঁজে
নতুন উছিলা, হাত পাততে হবে যে আবার! 

তীব্র বাতাসে পথ হারানো পরিযায়ী অপেক্ষা করে
ঝড় শেষের, আবার খুঁজে পেতে পথ। 
দিনশেষে সব মূল্যহীন 
নীড়ে না ফিরলে। 

Friday, May 1, 2020

প্রেম



পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রতীক্ষার পরে দেখেছি তোমায়,
মহাজাগতিক দীর্ঘতম অপেক্ষার পরে হয়ত বলতে পারবো...

'ভালবাসি'

পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রতীক্ষার পরে দেখেছি তোমায়,
মহাজাগতিক দীর্ঘতম অপেক্ষার পরে হয়ত বলতে পারবো...

'ভালবাসি'

তার আগে স্তব্ধতার দেয়াল ভাঙতে
চলবে লড়াই অবিরাম-
বাতাস থেকে শুষে নেবো দুরন্ত সাহস আর
সময় শেষে উল্টে দেব বালুঘড়ি। 

সব শেষে, 
গোলাপের তোড়া নিয়ে তোমার সামনে বসে, 
বলবো...

'ভালবাসি’

Saturday, April 25, 2020

প্রতীক্ষা



পৃথিবীটা আজ বড্ড নিশ্চুপ- কোলাহলহীন,
জাগতিক সব ব্যস্ততা আজ অবর্তমান। 
যৌবনের উচ্ছলতা, কৈশোরের চপলতা, চার দেয়ালের মাঝে অন্তরীন।

জীবনের মানে খুঁজতে হয় এখন হৃৎপিন্ডের শব্দে,
বাতাসে ভেসে বেড়ায় অদেখা মৃত্যুদূত।
বাইরে থেকে ফেরা পরিযায়ীর থেকে নিরাপদ দূরত্ব খোঁজে
আপন বলে জানা মানুষগুলো।

ক্ষুধা পেটে হেঁটে আসে লক্ষ মানুষ মৃত্যু-মিছিলে,
হিমঘরে বসে আবেগের খেলনায় চাবি দেয় স্বভাবভূখা-রাক্ষস।
ক্ষুধিতের চাল ঢোকে জাত-তস্করের গুদামে,
খোলা বুকে যুদ্ধে নামে প্রধানের হুমকি খাওয়া সৈনিক।
খোঁয়াড়ে ঢুকতে চায়না অবাঞ্চিত শুয়োরের পাল-
লাঠি হাতে ক্লান্ত হয় উর্দীসমেত রাখাল;
খাজাঞ্চিদারও করে করজোরে মিনতি, ঘরে থাকুন!

সুর্য ওঠে- অস্ত যায় প্রকৃতির নিয়মে;
প্রতিদিন জাদুবাক্সে গল্প শোনায় কানহীন গর্দভ।
দূরে শোনা যায় কান্নার শব্দ, পাখির ডানায় পৌছে যায় মহল্লাগুলোয়।
শব্দ শুনেই লুকিয়ে পড়ে ভিখিরি-নিষ্কম্মার পাল;
পাছে যেতে হয় মুর্দার কাছে! আরেকদল দিন গোনে শীত আসতে কত দেরী!

মানুষগুলো করে অপেক্ষা- 
কবে শেষ হবে এ নির্বাক সন্ধেগুলোর,
আবার প্রাণোচ্ছাসে ভাসবে প্রিয় পৃথিবী,
আবার প্রিয়জনের বুকে মাথা রেখে নেয়া যাবে ভীতিহীন শ্বাস?

নীরবে চলে প্রার্থনা, ক্ষণগণনা আর
প্রতীক্ষা।


ঢাকা
২৪ এপ্রিল, ২০২০
১১ বৈশাখ, ১৪২৭

Thursday, April 16, 2020

হযরত আদমের সুসমাচারের বঙ্গানুবাদ


১ রাতের প্রথম ঘন্টায় খারাপ আত্মারা সদাপ্রভুর প্রশংসা করে, এবং এই সময়ে তারা কোন মানবের ক্ষতি করেনা বা আহত করেনা
২ রাতের দ্বিতীয় ঘন্টায় প্রশংসা করে পায়রাগুলো
৩ তৃতীয় ঘন্টায় প্রশংসা করে মৎস্যকূল, আগুন এবং গভীরস্থ সকল জীব
৪ চতুর্থ ঘন্টায় সেরাফিম দেবদূতেরা 'পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র' বলে প্রশংসা করে সদাপ্রভুর; পাপে পড়বার আগে আমি যা শুনে অভ্যস্ত ছিলাম। তাঁদের পাখার আওয়াজ ছাপিয়ে যেত এই প্রশংসাসূচক স্তূতি। কিন্তু, আইন অমান্য করার পর থেকে আমি আর তা শুনতে পাইনা। 
৫ পঞ্চম ঘন্টায় প্রশংসা করে স্বর্গে বয়ে যাওয়া জলধারা। আমি শুনতাম সে জলধারার কলরব দেবদূতদের সাথে (যখন আমি স্বর্গে ছিলাম)। এই তীব্র কলরব দেবদূতদের যেন প্ররোচিত করত সদাপ্রভুর প্রতি আরো বেশি প্রশংসাসূচক স্তূতি করতে।
৬ ষষ্ঠ ঘন্টায় সদাপ্রভুর প্রশংসা করে মেঘরাশি এবং মধ্যরাতের আতঙ্কেরা
৭ সপ্তম ঘন্টাটি স্থির হয়ে থাকা প্রবল শক্তিমান জলরাশির জন্য এবং এই সময়ে জল সেচন করা যায়। সদাপ্রভুর উপাসক এই জল পবিত্র তেলের সাথে মেশান ও সেই মিশ্রন তিনি পীড়িতের দেহে মালিশ করেন এবং তারা বিশ্রাম পায়
৮ অষ্টম ঘন্টায় পৃথিবীর বুক চিড়ে তৃণ আবির্ভূত হয় এবং স্বর্গ থেকে শিশিরবিন্দুরা নেমে আসে।
৯ নবম ঘন্টায় প্রশংসা করে চেরুবিম দেবদূতেরা
১০ দশম ঘন্টায় প্রশংসা করে মানবেরা তাদের সদাপ্রভূর। এসময় স্বর্গের দরজা খুলে যায় এবং যার মধ্যে দিয়ে সকল জীবিত প্রাণীদের প্রার্থনা স্বর্গে প্রবেশ করে। তারা উপাসনা করে করে এবং নিষ্ক্রান্ত হয়। এবং এ সময়েই সেরাফিম দেবদূত এবং মোরগেরা তাদের ডানা ঝাঁপটায়। এ সময়ে সদাপ্রভু মানুষকে তাই-ই সম্প্রদান করেন তারা যা প্রার্থনা করে।
১১ একাদশ ঘন্টায় সূর্য স্বর্গথেকে পুনরায় আত্নপ্রকাশ করে এবং সারা পৃথিবীতে সকল প্রানীদের আলচ্ছটায় উদ্ভাসিত করে।
১২ দ্বাদশ ঘন্টায়, অপেক্ষা হয় ধূপ এর পবিত্র ধোঁয়ার জন্য। তখন আগুন এবং বাতাসকে নীরব থাকতে দেখা যায় যতক্ষন না উপাসক স্বর্গের উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালান। এ সময় সকল স্বর্গীয় শক্তি সমূহ স্বর্গের পথে নিষ্ক্রান্ত হয়।

রাতের ঘন্টাগুলোর পরিসমাপ্তি ঘটে
  

Wednesday, April 8, 2020

সময়

সময়টা বড্ড অসময়! 
ক্ষুধা আর অনিশ্চয়তার এই সাম্রাজ্যে
ঘাপটি মেরে আছে চোরের দল।
আকাশে উড়ে বেড়ায় শকুনের পাল,
মৃত্যু তাড়া করে ফিরছে সবাইকে।
আতঙ্কে কাটা প্রতিটি মুহূর্ত, আর চোখে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে
রাস্তায় ঘুরে ফিরছে জীবন্ত যীশুরা।

বলি দিতে হেঁটে নিয়ে আসা লক্ষাধিক শ্রমিক
কার্যত অপেক্ষা করছে তার অন্তিম সময়ের। 
তাদের লাশের অপেক্ষায় আছে তথাকথিত এলিট শ্রেণী,
তাদের হাড় দিয়ে তৈরি হবে মহল। 
উন্নয়ন স্বমেহনের চরম শিখরে উঠে বাধা প্রাপ্তির একটা সমাধান তো করতেই হতো।
যুগে যুগে বলিদানই তো সমাধান। 
আসুন আমরা আতশবাজি ফোটাই, হাতে তালি দিয়ে
উদযাপন করি আমাদের এই সাফল্য।





Friday, March 27, 2020

পরজীবি


নদীর স্রোতের ভেসে চলা শ্যাওলার গন্তব্য কী নিশ্চিত?
কিংবা বাতাসে উড়ে চলা ক্ষুদ্র বালুকনার?
নির্বিবাদে এদের এগিয়ে চলা নিয়ন্ত্রণহীন এক শক্তির সাথে। 

ভাগ্যের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া
একজন জীবনযুদ্ধে পরাজিত সেনার জন্য 
এর চেয়ে ভাল প্রবোধ আর কী হতে পারে কিংবা আত্নসন্তুষ্টি? 

প্রতিটা পরাজয়ের পরে কমতে থাকা আত্নবিশ্বাস 
আর চারপাশের কটুক্তি ভরা দৃষ্টি; দুই মিলে তৈরী সমীকরনের ফল- শূন্য।।

একটি অর্থ এবং মূল্যহীন শূন্য

যার পরে বেঁচে থাকার কোন নৈতিক ভিত্তি নেই, তবু বেঁচে থাকা, 
ভাগ্যের উপর ভর করে।

পরজীবির মত

পরজীবি হয়ে।।

Wednesday, March 25, 2020

ধরিত্রী

নিজেকে বন্দী করে রাখাটা সবচেয়ে কঠিন কাজ
একজন মানুষ হিসেবে।
যুগে যুগে গ্রন্থগুলো বার বার আমাদের বলেছে 'বড্ড ত্বরাপ্রবণ'।
নয়ত নিশ্চিত ক্ষতি জানা সত্ত্বেও ভিড়ে সেঁধিয়ে
প্রিয়জনের জন্য ধ্বংস বয়ে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব হত?

ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীতে।
কয়েকটা দিনে নিজেকে সারিয়ে তুলছে ধরিত্রী-জননী,
ফিরিয়ে দিচ্ছে তার অন্য সন্তানদের জীবনের স্বাদ।
যা নষ্ট করে দিয়েছিল মানুষের লোভ
সেই আদি থেকে।
শাস্তি শুরু করেছে প্রকৃতি, নিচ্ছে অগুনতি প্রাণ।

যদিও পাপের তুলনায় তা যৎসামান্যই।।

আরমাগাদন বহুদূরে, তা ঘোষনা করতে প্রত্যাদেশপ্রাপ্তদের প্রয়োজন নেই আর
তবু প্রার্থনা, কমে যাক আগাছার মত মানুষগুলো।
যাতে দুরত্বটা দুরেই থাকে। 

Saturday, February 8, 2020

বার্তা

১।

সুর্যের আলোটা জানালার ফাঁক গলে চোখে পড়তেই মুঠোফোনের এলার্মটা বেজে উঠল মোবাইলটা হাতে নিয়ে এলার্ম বন্ধ করে ঘুমকাতুরে আমি এক চোখে দেখলাম বাইশটা নোটিফিকেশন জমেছে সারারাত ওয়াইফাই অন ছিল বেজেছেও মোবাইলের সুর কিন্তু সারা সপ্তাহ অমানুষের মত পরিশ্রম করা এই আমার ছুটির দিনের ঘুম ভাঙ্গানোর মত শব্দ যে ওগুলো ছিলোনা তা বলাটা অত্যুক্তি হবেনা

হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেজবক্সে ক্ষুদেবার্তা এসেছে এতগুলো আইডি এবং নম্বর দুটোই অপরিচিত সকাল সকাল অপরিচিত আইডি থেকে পাঠানো স্প্যামবার্তাগুলো আর দেখতে মন চাইলো না এর আগে যতবারই এমন বার্তা এসেছে খুলে দেখেছি হয় মিটমিট জ্বলতে নিভতে থাকা লাইটে শুভ সকাল এর এনিমেশন ছবি নয়ত দুটো কবুতরের একডালে বসে থাকা ছবির সাথে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় বানী এমনিতেও সকাল ছয়টায় এলার্ম যে দেওয়া তা কেন গত রাতে মনে করে বন্ধ করে রাখিনি তা ভাবতেই নিজের উপরে রাগ নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা তার উপরে সপ্তাহান্তের এই বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ সকালে অকালে ঘুম ভাঙ্গার পর তা যে আর শুভ সকাল থাকেনা তা এই স্প্যামারেরা বোঝেনা

বিছানা থেকে নামতে মন চাইছেনা মন চাচ্ছে আরও খানিকক্ষণ ঘুমাতে কিন্তু একবার যেহেতু ঘুম ভেঙ্গে গেছে তা আগামী এক ঘন্টায় আর ফেরত আসবেনা অগত্যা তা মেনে নিয়ে কর্মবীরের মত ছুটির দিনের জন্য ফেলে রাখা কর্মগুলোর মুখোমুখি হওয়াই ভাল বিছানা থেকে নেমে ব্রাশে খানিকটা পেস্ট নিয়ে পা বাড়ালাম ছাদের দিকে

আসলে ছাদেই আমার বাস অন্যভাবে বলা যায় আমার দেড় রুমের এই বিশাল ফ্লাটের উঠোন ওটা বাড়িওয়ালা নিজের জন্য আলাদা একচিলতে জায়গা হিসেবে বানিয়েছিলেন এই চিলেকোঠাটা ছাদের এই অংশে একমাত্র এই ঘর দিয়েই ঢোকা যায় ছাদের অন্য পাশটা এই বাড়ির অন্য সব বাসিন্দাদের বাড়িওয়ালা মারা গিয়েছেন বছর দুয়েক আগে উনার স্ত্রী মানে রওশন চাচী অনেকদিন এই ঘরটা তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন দুই ছেলে মেয়ে যার যার ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকে অন্য জায়গায় মাঝে মাঝে আসে তারা ভাড়া নিতে মায়ের হাতখরচের জন্য যে টাকা দেয় তাতে হয়না বলেই নিতান্ত বাধ্য হয়ে আমার কাছে ফ্লাট ভাড়া দিয়েছেন আন্টি তবে, আমার জন্য যে বেশ হয়েছে তা বলাই বাহুল্য রাজধানী থেকে ট্রান্সফার হয়ে এই উপজেলা শহরে আসতে হবে ভেবে মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল কারন, বাসা ভাড়া পাওয়া যায়না ব্যাচেলর ছেলেদের কেন যেন বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া দিতে চায়না হোক সে রাজধানী, জেলা শহর, উপজেলা শহর বা মফস্বল সেখানে ভাগ্য আমার এতটাই ভাল দুই রাত কলিগের মেসে ,যা আবার অফিস থেকে কিলোমিটার দূরে, গাদাগাদি করে থাকার পর তৃতীয় দিন সন্ধ্যায়ই পেয়ে গেলাম আমার এই ছোট্ট রাজপ্রাসাদ

সেদিন আসলে অফিস থেকে বেরিয়ে একটু উলটো পথে যেতে মন চাইল সরকারী ব্যাংকে চাকরি করি শাখায় চাপ বেশ কম থাকে মাসের শুরুর দিকে পাঁচটা বাজতেই বেরিয়ে যাওয়া যায় ব্যবস্থাপক অবশ্য আরও আগে বেরোন সবচেয়ে সুখের বিষয় এখন অব্দি বায়োমেট্রিক হাজিরাযন্ত্র লাগানো হয়নি এই অফিসে সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় সবাই দু তিনটে দিনই একটু শান্তির এরপরে যা চাপ মাসের তিন তারিখ ছিল সেদিন আগে আগে বেরিয়ে উলটো পথে আধা কিলোমিটার হেটে ডানপাশে একটা সরু গলি দেখলাম একটু বেশিই নীরব জানিনা কেন যে ঢুকলাম এই রাস্তায় গলির দুই পাশেই দশটা করে বাড়ি তবে ডানের দশ নম্বর বাড়িটার এক প্লট পরে আরেকটা বাড়ির সামনে দেখলাম এক সম্ভ্রান্ত চেহারার বৃদ্ধা লাঠীর আগায় করে একটা কিছু দরজার উপরে লাগানোর চেষ্টা করছেন ভাবলাম একটু সাহায্য করি তাই এগোলাম এগিয়ে দেখি কালো টিনের পাতেঘর ভাড়ালেখাটা আমার দিকে তাকিয়ে মিটী মিটি হাসছে কোন ভনিতা ছাড়াই বৃদ্ধাকে মানে রওশন চাচীকে জিজ্ঞাসা করলাম একাকীত্বের সোল ডিস্ট্রিবিউশন নেয়া যুবককে ঘর ভাড়া দেবেন কী না তিনি কিছুক্ষন অবাক তাকিয়ে থেকে বললেন, উপরে এসো

দোতলায় ছিমছাম একটা ঘরে গিয়ে বসলাম আন্টি ভেতর থেকে দুটো প্রমাণ সাইজের পেয়ারা কেটে এনে আপ্যায়ন করার ফাঁকে নাড়ী নক্ষত্র জেনে নিলেন সব জেনে বললেন আমি মুহুর্তেই উঠতে পারি বাসায় আমি অগ্রীম হিসেবে কিছু টাকা দিতে চাইলে তাতেও মানা করে বললেন আমি যেকোন সময় উঠতে পারি, তিনি আর টিনের পাত লাগাতে নামতে আগ্রহী নন পরদিন বাসায় উঠে আমার চক্ষু চড়কগাছ ছাদে দাঁড়িয়ে রুপসা নদীর তীর দেখা যায় ঘরটাও বেশ সুন্দর সোজা কথায় একটা কমপ্লিট প্যাকেজ

শুক্রবারের সকালটা আসলে আমার কেটে যায় এই ছাদেই শরীরচর্চা করতে আসি বটে তবে কাব্যচর্চা করেই সময় কেটে যায় ব্রাশ করতে করতে দুটো লাইন মাথায় আসছিল মাত্র মুঠোফোনের বিপ বিপ আওয়াজে তালটা কেটে গেল হাতমুখ ধুয়ে, চায়ের কেতলীটা চুলোয় বসিয়ে মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে বার্তাগুলো মুছে দেয়ার নিয়ত নিয়ে বসলাম আমার সিংহাসনে হোয়াটসঅ্যাপ একটাই মেসেজ তা এসেছে আমার কন্ট্যাক্ট লিস্টে না থাকা কোন নাম্বার থেকে তাতে লেখাতোমার মেসেজ বক্স চেক কর

লেটেস্ট বার্তা সহ আগের একুশটা বার্তা বিভিন্ন প্রমোশনাল কাজে আমায় পাঠানো হয়েছে প্রথম বার্তা যেটা রাত ১টা পাঠানো হয়েছিল সেটা এসেছে অনেকটা শর্ট কোড এর মত নাম্বার থেকে ২৪৩৯ বার্তাটা খুললাম তাতে লেখা, ‘তোমার চাচীর সামনে ভীষণ বিপদ তুমিই বাঁচাতে পারো তাকে সূত্র বার্তার নম্বরে ফিরতি বার্তায় ফাঁকা মেসেজ দিও আশফাক

আমার কোন চাচী বিপদে আর কোন চাচা আমায় এরকম বার্তা পাঠাতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগলো আমার আশফাক নামে কোন চাচা নেই যে চাচারা আছেন তাদের নাম ভুলেই গেছি লুসিফার আর আযাযীল নামে ডাকতে ডাকতে ফিরতি মেসেজ দেওয়ার আর দরকার মনে হলোনা কারন ইতিমধ্যেই সাড়ে ছয় ঘন্টা পেরিয়ে গেছে কিন্তু আর দেরি করলে নদীর তীরের সদ্য পাওয়া মাছগুলো যে ফুরিয়ে যাবে তা ভাবতেই ভেতর থেকে অন্যরকম কম্পিটিটিভ সত্ত্বাটা জেগে উঠল অগত্যা বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে দ্রুত ঘর তালা দিয়ে নামলাম নীচে বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করতে করতেই একটা রিকশা এসে দাঁড়ালো বাড়ির সামনে এক সুন্দরী তন্বী নামলো রিকশা থেকে

এক্সকিউজ মি, এটা কী মিসেস রওশন মীরের বাড়ি?- মিঠাই দিয়ে উপচানো মিষ্টি গলায় জিজ্ঞাসা করলো তরুনী আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম আসলে সুন্দরী মেয়েদের সাথে আমি গলা খুলে কথা বলতে পারিনা জিহবাও বিদ্রোহ করে শব্দগুলো ঠিকঠাক ফুঁটে বেরোয়না

তরুনীটি ভাড়া মিটিয়ে আমার দিকে ফিরে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘কয় তালায়?’

আমিদুইবলে বাম পাশের জানালার দিকে ইঙ্গিত করে দিলাম তরুনীটিওধন্যবাদবলে দরজা খুলে ভিতরে চলে গেল এইধন্যবাদকতক্ষন ধরে কানে বাজছিল জানিনা তবে শ্যাওলা পড়া দেওয়ালে শ্যাওলার আড়ালে প্রায় চোখে না পড়ার মত নামফলকের মর্মোদ্ধার করামাত্র মেরুদন্ডে বিদ্যুৎ বয়ে গেল নামফলকে লেখা,

আশফাক ভিলা
আশফাক মীর এবং রওশন মীর
বাড়ি ২৪, সড়ক ৩৯
মীরেরচালা, রুপসা, খুলনা


২।
মেয়েটা সিড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠা মাত্রই মাথা চকর দিয়ে উঠল আমার। চাচীকে বিপদে রেখে আমি কী না যাচ্ছি মাছ কিনতে? নিজের উপরে রাগ জমে গেল মুহুর্তেই। আগে চাচীর প্রাণ বাঁচানো এরপরে রসনা বিলাস। হৃদয়টা স্পষ্ট নির্দেশ পাঠালো মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক পায়ে নির্দেশ পাঠানোর আগেই পা দুটো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলা শুরু করে দিলো দোতলার দিকে।

কে হতে পারে মেয়েটা? ইতিহাস জুড়েই মেয়েরা অপরাধের সাথে কম যুক্ত নেই। অনেকে যেমন তাদের মোহময়তা কাজে লাগিয়ে বিখ্যাত আবার অনেকে তাদের নির্দয়তার উদাহরন সৃষ্টির কারনে। এই অপুর্ব সুন্দর মেয়েটা যে অপরাধী তা মানতে মন সায় দিচ্ছে না। আবার মোবাইলে আসা মেসেজ আর এই ঘটনা নিতান্ত কাঁকতাল তো নয়ই। তার উপরে যার কাছ থেকে নির্দেশনা আসছে তার পরিচয় পাওয়া আদৌ সম্ভব কী না তা-ও ভাবনার ব্যাপার। আর পরিচয় আপাতত যা পাওয়া গেলো তাতে তো আরো ভয়ানক ব্যাপার! একটা মৃত মানুষের সাথে আমার যোগাযোগ হচ্ছে তাও প্রযুক্তি ব্যবহার করে! কেউ শুনলে নির্ঘাত আমায় পাঠাবে মানসিক হাসপাতালে। আশপাশে মানসিক হাসপাতাল কোথায় আছে ভাবতে ভাবতে দোতলায় পৌছে গেলাম।

দোতলায় উঠে দেখলাম মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। দরজা এখনও খোলা হয়নি। মেয়েটা এক নজর তাকালো আমার দিকে। আবার সেই প্রান ধরে টান মারা হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘এত তাড়াতাড়ি বাজার শেষ?’

একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। মাথায় দারুন বুদ্ধি চাপল। বললাম, ‘মানিব্যাগটা বাসায় রেখে এসেছি আসলে, ভুলে’। ক্যাবলা এক হাসি দিলাম তাকে উদ্দেশ্য করে।

আগের চেয়ে বেশি সুন্দর করে হেসে মেয়েটা জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে কেন? বাসায় যান। মানিব্যাগ নিয়ে আসুন।‘

এই হাসি আর সার্কাজমের শিকার হওয়ার পরে মাথায় আর কোন কাজ করছিল না। প্রকৃতি কেন যে মেয়েদের এত সুন্দর করে হাসার মত এক বায়োলজিকাল অস্ত্র দিয়েছে? কোন উত্তর না দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। দুই সিড়ি উঠতেই রওশন আন্টি দরজা খুলে বের হলেন। আমিও ঘুরে দাঁড়ালাম। বলা তো যায়না। মেয়েটা যদি হিট এন্ড রান করে বসে!

‘কে আপনি? কাকে চাচ্ছেন?’- স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্জের সাথে আন্টি জিজ্ঞাসা করলেন মেয়েটাকে।
মেয়েটা আন্টির দিকে তাকিয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। যেন পরম আরাধ্য কোন কিছু দেখছে। অনেক অপেক্ষার পরে কোন কিছু পেলে যেভাবে তাকিয়ে থাকে! হয়ত মনে মনে ভাবছে শিকার তার হাতে! এই অপরুপার হাত থেকে বাঁচাতেই হবে আন্টিকে। সে যেভাবেই হোক।
‘আমি এসেছি নাটোর থেকে। মুরাদপুর এর কাওসার মোল্লা আমার মামা’- কাটা কাটা গলায় বলল মেয়েটা।

আন্টির চোখ যেন বিস্ফোরিত হয়ে যাবে এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন মেয়েটার দিকে। তার ফর্সা অভিজাত মুখটা যেন আতঙ্কে নীল হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। মনে হচ্ছে তিনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন। কিন্তু, সামলে নিলেন নিজেকে। মেয়েটাকে ইশারা করলেন ভেতরে আসতে। আমার দিকে তাকালেন ঘরের ভেতরে ঢোকার আগে একবার। তার চোখে মুখে কিছু একটা লুকোনোর ভাব স্পষ্ট।

দরজা বন্ধের আওয়াজ পেলাম। কিন্তু উপরে যেতে মন চাচ্ছে না। যদি কোন বিপদ হয়! মন চাচ্ছে দরজায় কান দিয়ে শুনি ভিতরে কী চলে। কিন্তু, কেউ যদি দেখে যে একজন ভদ্রলোক অন্য কোন ঘরের দরজায় কান পেতে আছে একদম কেলেংকারি হয়ে যাবে। তার চেয়ে এখানেই আর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ভালভাবে বোঝা ভাল কী চলছে।


মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে থেকে কোন সারা শব্দ পেলাম না। তিন তলার দিকে পা বাড়ানো মাত্রই রওশন চাচীর ফ্লাট থেকে ভেসে এলো কান্নার শব্দ। তাও একজনের না দুজনের। মানে মেয়েটা আক্রমন করেছে চাচী আর বুয়াকে!

x
x