Thursday, March 28, 2024

দিনলিপি

চৈত্রের এই প্রায় শেষদিকের সকালবেলায় শহরের পাখিরাও যখন আড়মোড়ায় ব্যস্ত তখন বেরোতে হয় কর্মস্থলের দিকে। সূর্যের তেজ একটু একটু করে বাড়ছে প্রতিদিন। দক্ষিনের বঙ্গোপসাগর থেকে যে বাতাসটা এসে পৌছয় খুলনা শহরে তার অনুগুলোও বোধকরি রোদের তাপে উষ্ণ হয়েই আসে। রাস্তার কাজ চলছে প্রায় বছরখানেক ধরে। আজ নর্দমার কাজ শেষ হয় তো কাল রাস্তার পিচ খুঁড়ে পাশে চলে যায়। 

ছোট একটা বাইকে চড়ে প্রতিদিন কর্মস্থলে যাই। বাসা্র গলি থেকে বেরিয়ে যে প্রধান সড়ক তার ওপারে রায়েরমহল। একসময় গ্রাম ছিল, এখন পুরো শহর। মিনিটখানেক গেলেই একটা মসজিদ পেরিয়েই পড়ে একটা গীর্জা। আমাদের অসভ্য বন্য বর্বর পুর্বপুরুষেরা যে উপাসনালয়ের সাথে পাঠশালার ধারা তৈরী করে গিয়েছিলো তা আমরা উত্তরসুরীরা ব্রান্ড আলাদা করে হলেও বজায় রেখেছি। খুব ধীরে গীর্জাটা পার হই। বেথেলহামের যীশু বাংলার এই প্রান্তে এসেও যে বিমূর্ত তা ছোট ছোট শিশুদের গলায় প্রার্থনা সঙ্গীত যতটুকু শুনতে পাই তাতে অনুভব করি। 

সকালে মানুষের চেয়ে সারমেয়দের সাথে দেখা হয় বেশি। রায়েরমহল জামে মসজিদের পাশে যে বৈকালিক অস্থায়ী বাজারটা বসে সেখানে একটা নতুন সারমেয় অতিথি এসেছে। বয়েস মাস দেড়েক হবে হয়তো। যতবারই দেখেছি খেলায় ব্যস্ত। আর কেউ পাশ দিয়ে গেলে একটা আদুরে চাহুনী দিয়ে মৌন বাক্যালাপ। ব্যস্ততা থাকায় সাহেবটার সাথে আলাপ হয়নি।

Saturday, March 2, 2024

এপিটাফ


বাতাসে লাশের পোড়া গন্ধ,

বিরিয়ানির মসলা আর মেয়নিজ পোড়া গন্ধের সাথে মিশে

একটা অদ্ভুত ঘ্রাণের সৃষ্টি করেছে।

 

একটা কালো পোড়া বিল্ডিং 

তার সামনে হাজারখানেক মানুষের ফ্ল্যাশ অন করা মুঠোফোন।

ক্ষনিকের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে লক্ষাধিক ভিডিও,

অন্তর্জালে। 

 কবিরা অদ্ভুত উচ্চারনে কেঁদে কঁকিয়ে করছে আবৃত্তি,

গাইয়েরা বেধেছে করুন সুরের গান।

 

আর যারা প্রিয়জন হারিয়েছে 

তারা নিশ্চুপ।

আপাতত কোলাহল থেকে দূরে, একা। 

 

আর যারা হবে পরবর্তী শিকার

তারা 'নেক্সট ডাইন আউট' এর পরিকল্পনায় ব্যস্ত।

অন্তর্জালে কোন না কোন ভাবে একটু জায়গা তো নিতে হবে!  


 

Saturday, August 27, 2022

তেতো কথা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে যে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ব, একশ বছর পরে আবারো সে রকম একটা সংকট সামনে অপেক্ষা করছে সামনে। যেকোন সংকটে সবচেয়ে বিপদে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষেরা। অর্থবিত্তে অগ্রসর পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষেরা যেখানে হিমশিম খেয়ে যান এ দুঃসময় মোকাবেলায় তখন এশিয়া আর আফ্রিকার গরীব রাষ্ট্রগুলোর কথা সহজেই অনুমেয়। এসব দেশের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত জনবহুল আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রাষ্ট্রের মানুষগুলোর অবস্থা যে আরোও করুণ হতে চলেছে তা বলাই যায়। 

বিত্তের বিবেচনায় বর্তমানে সমাজে পাঁচ শ্রেণির মানুষ দেখা যায় উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত। নিম্নবিত্তের অবস্থান আপাতঃদৃষ্টিতে শেষে দেখা গেলেও এদের অনেকেরই উপার্জন প্রায় মধ্যবিত্তের কাছাকাছি। দৈনিক স্বল্প মজুরীর কাজ পরিবার সহ করে এদের পারিবারিক উপার্জন যথেষ্ট তবুও হাহাকার এদেরই সবচেয়ে বেশি। এর কারণ এই শ্রেণীর সর্বগ্রাসী ক্ষুধা আর শিক্ষিত শ্রেণির এদের প্রতি কুম্ভীরাশ্রু। এই শ্রেণিকে পুঁজি করে বাংলা সাহিত্যে যে পরিমানে কলেবর বেড়েছে অতি প্রাচীন জাতির লাইব্রেরীতেও বোধ করি এত পুঁথি-পুস্তক তিন হাজার বছরে জমা হয়নাই। আঠারো কোটি (সরকারী হিসেবে ষোলো কোটি) জনসঙখ্যার এই দেশে পাঠক যে লাখ দশেক আছে (নিজের পয়সায় কিনে পড়া পাঠক ঢের কম) যে এই সাহিত্যের দিকে ফিরে সচরাচর মূত্র বিসর্জন করেনা তা প্রকাশক মাত্রই সাক্ষ্য দেবেন। 

ইদানীং এই নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত অংশের নতুন লক্ষ্য হয়েছে অধিক পরিমানে ছেলে সন্তান জন্ম দিয়ে কোন রকমে পনের ষোল বছর বয়েস অবদি খাইয়ে মাতিয়ে তোলা। এরপর 'কায়দা' করে আঠারো বছরের হয়ে গিয়েছে এরকম প্রত্যয়ন নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র আর পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দালাল ধরে মালেশিয়া বা দুবাই পাঠিয়ে দেওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় ছেলে সন্তানই বলির পাঠা হয়। তার কাজ ওখানে গিয়ে মোটামুটি চেপে বসে বাকিগুলোকে নিয়ে যাওয়া। অনেক পরিবারে দেখা যায় একজনই থেকে যায় প্রবাসে। বাকি ভাই বোনেরা দেশে বসে ইভটিজিং, গ্রাম্য মারামারির মত সামাজিক কাজে লেগে থাকে। যার প্রতিক্রিয়া বিগত কয়েক বছর যাবৎ সামাজিক অবক্ষয় আর কৃষিখাতে শ্রমিক সংকটের মাধ্যমে খুব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ভাবেও এদেরকে যতটা সম্ভব উৎসাহিত করা হচ্ছে কারণ বৈদেশিক রিজার্ভের জন্য এরাই এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। পাট, চিংড়ির পর এই 'মানুষ' গুলোই এখন অর্থকরী ফসল হিসেবে আবির্ভুত। এই মধ্যরাতে যখন এই নিবন্ধ লিখছি তখন কতগুলো উর্বর জমিতে এই ফসলের চাষ হচ্ছে এবং বছর দশেক পরে আন্তর্জাতিক বাজারে এই 'ফসলে'র চাহিদা কমে গেলে এই অতিরিক্ত ক্ষুধার চাপ সামলাতে নিজের পকেটের উপর কতখানি করের বোঝা চাপবে তা ভাবতেই শিরদাঁড়ায় ভয়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।

Saturday, July 30, 2022

নিস্তব্ধতা


চারপাশ নিস্তব্ধ

অর্ধচাঁদের আলোয় চারদিকে আলো আঁধারীর খেলা

মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যায় মাঝে মাঝে

জোনাকীরা জ্বলে নেভে

যেনো প্রতিযোগিতা আকাশের তারাদের সাথে

দুরে শোনা যায় শেয়ালের হাঁক

মাঝে মাঝে ধাতব শব্দ করে বেরিয়ে যায় দুয়েকটা মোটর সাইকেল

নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে জানান দেয় উপস্থিতি


রাত যত গভীর হয়

নিস্তব্ধতা বাড়তে থাকে

ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ডাক হয় আরও স্পষ্ট

রাস্তার মোড়ের ল্যাম্পপোস্টের নীচে

আশ্রয় নেয়া সারমেয়দের ঘুম আরও তীব্র হয়

আঁধার যেনো জাপ্টে ধরে পৃথিবীকে

আকাশের তারাগুলো আরো স্পষ্ট হয় যেন চলে এসেছে কাছাকাছি


নিশ্ছিদ্র ঘুমে ডুবে থাকে শহর

শুধু জেগে থাকে একজোড়া নির্ঘুম চোখ

খুঁজে ফেরে সেই প্রাচীন সুর

সভ্যতার আক্রমনে যা হারিয়ে গিয়েছে



১৫ই শ্রাবণ ১৪২৯

বয়রা, খুলনা