বৈশাখের এক বিকাল। প্রচণ্ড গরমে কাহিল জনজীবন। তার উপর
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও খানিকটা গরম। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের হরতাল চলছে।
এমনি এক সময়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বাড়িতে ফিরছিল হরিদাস। সে এক খ্যাতনামা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাবসায় শিক্ষা বিষয়ের ছাত্র। বাড়ির কাছে পৌছনোমাত্র তার মুঠোফোন
বেজে উঠল। হরিদাস তার মুঠোফোন জিন্স প্যান্টের পকেট থেকে বের করতে করতে বাজনা থেমে
গেল। হরিদাস তার ফোনের পর্দায় দেখল তাকে ফোন দিয়েছে নৃপতি। নৃপতি এবং সে একি
গোয়ালের গরু। মানে তারা সহপাঠী। হরিদাস কিছুটা উৎসুক হয়ে তাকে কল করল। দুইবার রিং
হওয়ার পর ওপাশ থেকে শোনা গেল নৃপতির তীক্ষ্ণ কিন্তু নিচু কণ্ঠে এক জ্বালাময়ী খবর, ‘হরি, তুই খই? আমগো ভাবি এইনে’।
হরিদাস বলল ‘তুই নিশ্চিত?’।
‘একশ দশ ভাগ নিশ্চিত। ভাবি আমার সামনে বটতলায় উনার
বান্ধবিগো লইয়া গপ করতাছে। তুই কইনে? খিচ্চা দৌড় মাইরা চইলা অ্যায়’। নৃপতি আর কিছু বলার সুযোগ পেলনা, কল কেটে গেল।
ওইদিকে হরিদাস নিশ্চিত শোনার পর আর অপেক্ষা করেনি।
ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিয়েছে ভার্সিটির দিকে। অবশ্য তার কাজ দৌড় মারা পর্যন্তই। কাছে
গিয়ে আর ভালবাসি বলার সাহস হয়নি। হরিদাস দৌড়াচ্ছে জান প্রান দিয়ে। রাস্তার আশে পাশের
লোকেরাও তার সাথে দৌড় আরম্ভ করল। কেউ কেউ ঢুকে গেল খোলা দোকানগুলোতে। কয়েকটা দোকান
তাদের দরজাও বন্ধ করে দিল। হরি দৌড়ায় আর ভাবে বাকি সবাই দৌড়ায় কেন? আর বাকি সবাই
দৌড়ায় আর ভাবে কখন পিছন থেকে পিকেটার এসে মাইর আরম্ভ করে। এক বাঁটু ভদ্রলোক হরির
পাশে এসে পড়ল দৌড়াতে দৌড়াতে। জিজ্ঞাসা করল ‘ভাই, কেথায়
দাব্রানি দিছে, আম্লিগ, বিনপি না পুলিচ?’
হরিদাস অবাক হয়ে বলে ‘কেউ
দাবড়ানি দেয়নাই তো!’
‘তাইলে দৌড়ান কেলা?’ ভদ্রলোক
দ্বিগুন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। তবে সেও দৌড়াচ্ছে। উত্তরের আশায়ই হয়ত!
‘আমার জান বইসা আছে। অরে দেখতে’
হরিদাসের জবাব শুনে ভদ্রলোক দাড়িয়ে পড়ে।
হরিদাসের পিছনে তাকানোর অবকাশ নাই। সে ঊর্ধ্বশ্বাসে
দৌড়িয়ে পৌঁছে গেল ক্যাম্পাসে। নৃপতি গেটে দাড়িয়ে ছিল। নৃপতিকে দেখমাত্র হরিদাস তার
বালিকার অবস্থান জিজ্ঞাসা করল। নৃপতি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বালিকা কে।
হরিদাস ভাব নিয়ে হেতে চলে গেল সেই মেয়ের সামনে। থুড়ি,
একেবারে সামনে না সামনের দেওয়ালের পিছনে। ছোট দেয়াল, নিজেকে আড়াল করার জন্য
যথেষ্ট। হরিদাস তাকাল তার স্বপ্নবালিকার দিকে............
নৃপতি দেখছিল হরিদাস কি করে। সে দেখল হরি দেয়ালের উপর
পড়ে গেল আর সেই বালিকা গুলো ছুটে গেল তাকে সাহাজ্য করতে। নৃপতিও সময় নষ্ট না করে
দ্রুত চলে গেল বন্ধুর কাছে। কাছে গিয়ে বুঝল তার পড়ে যাওয়ার কারন। এতদুর থেকে দৌড়ে
যাকে দেখার জন্য হরিদাস এসেছিল এই বালিকা সেই বালিকা নয়। তাই দ্বিগুন হিটে
হিটস্ট্রোক করে হরিদাস ভুপাতিত!!!!!!!!!!!!!!!!!!
No comments:
Post a Comment