Saturday, August 27, 2022

তেতো কথা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে যে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ব, একশ বছর পরে আবারো সে রকম একটা সংকট সামনে অপেক্ষা করছে সামনে। যেকোন সংকটে সবচেয়ে বিপদে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষেরা। অর্থবিত্তে অগ্রসর পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষেরা যেখানে হিমশিম খেয়ে যান এ দুঃসময় মোকাবেলায় তখন এশিয়া আর আফ্রিকার গরীব রাষ্ট্রগুলোর কথা সহজেই অনুমেয়। এসব দেশের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত জনবহুল আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রাষ্ট্রের মানুষগুলোর অবস্থা যে আরোও করুণ হতে চলেছে তা বলাই যায়। 

বিত্তের বিবেচনায় বর্তমানে সমাজে পাঁচ শ্রেণির মানুষ দেখা যায় উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত। নিম্নবিত্তের অবস্থান আপাতঃদৃষ্টিতে শেষে দেখা গেলেও এদের অনেকেরই উপার্জন প্রায় মধ্যবিত্তের কাছাকাছি। দৈনিক স্বল্প মজুরীর কাজ পরিবার সহ করে এদের পারিবারিক উপার্জন যথেষ্ট তবুও হাহাকার এদেরই সবচেয়ে বেশি। এর কারণ এই শ্রেণীর সর্বগ্রাসী ক্ষুধা আর শিক্ষিত শ্রেণির এদের প্রতি কুম্ভীরাশ্রু। এই শ্রেণিকে পুঁজি করে বাংলা সাহিত্যে যে পরিমানে কলেবর বেড়েছে অতি প্রাচীন জাতির লাইব্রেরীতেও বোধ করি এত পুঁথি-পুস্তক তিন হাজার বছরে জমা হয়নাই। আঠারো কোটি (সরকারী হিসেবে ষোলো কোটি) জনসঙখ্যার এই দেশে পাঠক যে লাখ দশেক আছে (নিজের পয়সায় কিনে পড়া পাঠক ঢের কম) যে এই সাহিত্যের দিকে ফিরে সচরাচর মূত্র বিসর্জন করেনা তা প্রকাশক মাত্রই সাক্ষ্য দেবেন। 

ইদানীং এই নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত অংশের নতুন লক্ষ্য হয়েছে অধিক পরিমানে ছেলে সন্তান জন্ম দিয়ে কোন রকমে পনের ষোল বছর বয়েস অবদি খাইয়ে মাতিয়ে তোলা। এরপর 'কায়দা' করে আঠারো বছরের হয়ে গিয়েছে এরকম প্রত্যয়ন নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র আর পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দালাল ধরে মালেশিয়া বা দুবাই পাঠিয়ে দেওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় ছেলে সন্তানই বলির পাঠা হয়। তার কাজ ওখানে গিয়ে মোটামুটি চেপে বসে বাকিগুলোকে নিয়ে যাওয়া। অনেক পরিবারে দেখা যায় একজনই থেকে যায় প্রবাসে। বাকি ভাই বোনেরা দেশে বসে ইভটিজিং, গ্রাম্য মারামারির মত সামাজিক কাজে লেগে থাকে। যার প্রতিক্রিয়া বিগত কয়েক বছর যাবৎ সামাজিক অবক্ষয় আর কৃষিখাতে শ্রমিক সংকটের মাধ্যমে খুব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ভাবেও এদেরকে যতটা সম্ভব উৎসাহিত করা হচ্ছে কারণ বৈদেশিক রিজার্ভের জন্য এরাই এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। পাট, চিংড়ির পর এই 'মানুষ' গুলোই এখন অর্থকরী ফসল হিসেবে আবির্ভুত। এই মধ্যরাতে যখন এই নিবন্ধ লিখছি তখন কতগুলো উর্বর জমিতে এই ফসলের চাষ হচ্ছে এবং বছর দশেক পরে আন্তর্জাতিক বাজারে এই 'ফসলে'র চাহিদা কমে গেলে এই অতিরিক্ত ক্ষুধার চাপ সামলাতে নিজের পকেটের উপর কতখানি করের বোঝা চাপবে তা ভাবতেই শিরদাঁড়ায় ভয়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছে।

No comments: